• শুক্রবার ০৩ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২০ ১৪৩১

  • || ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী

একজন মায়ের গল্প

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০১৯  


 
ইমাম শাফিয়ির মায়ের নাম ছিল ফাতিমা। তারা ছিলেন অসম্ভব গরিব। শাফিয়ির মা তাকে ছোট থেকেই বিভিন্ন ইসলামি হালাকায় নিয়ে যেতেন। যখনি দেখতেন কোথাও দীনি ইলম চর্চার আসর বসেছে, ফাতিমা তার ছেলেকে নিয়ে হাজির। তিনি তার ছেলের পড়াশোনার ফি দিতে পারতেন না। এটা নিয়ে শাফিয়ি (রহ.) মাঝে মাঝে লজ্জা পেতেন। তার মা ছেলেকে সাহস দিবার জন্যে বলতেন, ‘তুমি ওখানে যাচ্ছ ইলম অর্জন করতে। তুমি যখন প্রবেশ করবে, এমন আদব নিয়ে প্রবেশ করবে যেন কেউ কোন প্রশ্ন করতে না পারে।’

ইমাম শাফিয়ির মা তার স্বামীর মৃত্যুর পর বিয়ে করেন নি; যেন পুরোপুরি তার পুত্রের ইলমের দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন। তাদের কাগজ-কলম কিনার মত টাকা ছিল না। তার মা মাঝে মাঝে ফেলে দেওয়া কাগজ, গাছের পাতা, হাড়-গোড় আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে নিতে রাখতেন ছেলের নোট লিখার জন্যে। কিন্তু সেটা সংগত কারণেই যথেষ্ট হতো না।

শাফিয়ি (রহ.) মাকে বলতেন, ‘মা! কাগজ-কলম ছাড়া আমি কিভাবে ইলম টুকে রাখব?’ তার মা বলতেন, ‘মুখস্থ করবে বাবা! তোমার সব নোট মাথায় টুকে রাখবে।’ ইমাম শাফিয়ি (রহ.) এভাবেই ফটোগ্রাফিক মেমোরি গঠন করেন ৬ বছর বয়স থেকেই। সুবহানাল্লাহ, ৬ বছরের একটা বচ্চা ছেলে ক্লাসে উস্তাদ যা বলতেন, মনে মনে রিপিট করে করে তৎক্ষণাৎ মুখস্থ করে ফেলতেন। 

বিরতির সময় দেখা যেত বাকি সব ছাত্ররা ইমাম শাফিয়ির কাছ থেকে নিজেদের নোট মিলিয়ে নিচ্ছে। ৬ বছরের শাফিয়ি গড় গড় করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরা লেকচার বলে যেত। তার উস্তাদ এটা খেয়াল করেন এবং শাফিয়িকে বলেন, ‘আমি যখন বিরতিতে যাবো, তুমি আমার ছাত্রদেরকে পড়াবে, এটাই তোমার টিউশান ফি।’

আলহামদুলিল্লাহ এভাবেই তিনি আল্লাহর রহমতে অল্প বয়সেই তুখোড় ইসলামিক স্কলার হয়ে যান। 

তার জীবনের একটা ঘটনা আমি কখনোই ভুলবো না। 

একবার ইমাম শাফিয়ি (রহ.) রোজার মাসে মসজিদে ‘রোজার ফিকহ’ এর উপর ক্লাস করাচ্ছিলেন। ক্লাস করতে করতে তিনি এক চুমুক পানি খেলেন। তার ছাত্ররা তো অবাক। জিজ্ঞেস করে জানা গেলো, ইমাম শাফিয়ি (রহ.) তখনও বালেগ হননি এবং তখনও তার উপর রোজা ফরজই হয় নি, অথচ তিনি রোজার উপর ক্লাস নিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ। 

তার আরেকটি ঘটনা বলি। ইমাম শাফিয়ি (রহ.) একবার ভরা মজমায় ক্লাস করাচ্ছিলেন। এক লোক হুড়মুড় করে তার ক্লাসে ঢুকে গেল এবং তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, ‘তুমিই কি শাফিয়ি?’ ইমাম বললেন,‘জ্বি, আমিই শাফিয়ি।’ তখন লোকটি সবার সামনে চেঁচিয়ে বলল, ‘তুমি একটা ফাসিক, কাফির এবং জঘন্য প্রকৃতির লোক!’ ইমাম শুনলেন। শুধু সমালোচনা না, তাকে সবার সামনে খুব খারাপভাবে অপমান করা হয়েছে। তিনি কোনো প্রতিবাদ তো করলেনই না, বরং তৎক্ষণাত দু’হাত তুলে সবার সামনে দুয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি যদি সত্য বলে থাকে, তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার উপর দয়া করো এবং আমার তাওবা কবুল করে নাও। আর যদি এই ব্যক্তি যা বলল, সেটা সত্য না হয়, তাহলে তার এ আচরণের জন্যে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া করো এবং তার তাওবা কবুল করে নাও!’ 

সুবহানআল্লাহ। ইমাম শাফিয়ি (রহ.) এরকম একজন স্কলার হতে পেরেছেন, কারণ তার মা তাকে সেভাবে গড়ে তুলেছেন। একজন মাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতটা শক্তি দিয়েছেন ইসলামের সিংহদেরকে বড় করতে। মায়েরা সন্তানদের ইসলামের পথে আনার জন্যে গেড়ে বসলে, আল্লাহ তায়ালা কেমন বরকত ঢেলে দেন সে নেকিতে! সুবহানাল্লাহ, এক মায়ের আল্লাহর দীনের জন্যে নিখুঁত আত্মত্যাগ আর নিষ্ঠার ফসল হিসেবে ইমাম শাফিয়ির কত অবদান আমরা এখন পর্যন্ত ভোগ করে যাচ্ছি।

ঝালকাঠি আজকাল