• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

রূপপুর পরমাণু প্রকল্প ঘিরে বদলে গেছে জীবনমান

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২৪  

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকে পর্যায়ক্রমে এই প্রকল্পে দেশী-বিদেশী ১৭টি কোম্পানিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু রাশিয়ানই রয়েছে সাড়ে চার হাজারের মতো। এদের জন্য ঈশ^রদী-কুষ্টিয়া (আইকে) রোডের নতুনহাট এলাকায় নির্মাণ করা হয় আধুনিক মানের ২২টি ২০ তলা ভবন। যে ভবনগুলো নির্মাণের পর ঈশ^রদীর ‘গ্রিন সিটি’ নামক এই এলাকাকে বিশে^র যে কোনো আধুনিক শহরের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
গ্রিন সিটির ২২টি আকাশচুম্বী আধুনিক ভবন ও নিকটস্থ এলাকা ঘিরে সময়ের প্রয়োজনে গড়ে ওঠা ব্যাংক, বিমা, আধুনিক মার্কেট, শপিং মল, স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টসহ আধুনিক ফুড প্যালেসগুলোয় রাশিয়ানদের চলাচলে  গোটা নতুনহাট এলাকাকে মনে হয় যেন এ দেশ এক টুকরো ‘রাশিয়া’ বা রাশিয়ার কোনো একটি ছোট অঙ্গরাজ্য। এই প্রকল্পের কাজের শুরু থেকেই মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হওয়ায় ঈশ^রদীসহ নিকটস্থ এলাকার মানুষের আর্থিক উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

দিনে দিনে আর্থিক উন্নয়নের চাকা দ্রুত সামনের দিকে ঘুরতে থাকে এবং এখনও চলমান রয়েছে। এতে গ্রিন সিটি এলাকাসহ গোটা ঈশ^রদী এলাকায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রার মানেরও উন্নয়ন ঘটতে থাকে। স্থানীয়সহ বহিরাগত প্রকৃত ব্যবসায়ীরা তাদের যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী কেউ কেউ ত্রিমুখী লাভের পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে মাঠে নামেন।

তারা রাশিয়ানসহ বিদেশীদের সঙ্গে দেশীয় অর্থশালী ব্যক্তিদের নানা প্রকার বিনোদনসহ সেবা দানের মাধ্যমে অর্থ আয়, রূপপুর প্রকল্প ও ঈশ^রদী ইপিজেডকে ঘিরে ঈশ্বরদীতে আগত বিদেশীদের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈশ^রদীসহ বাংলাদেশের বেশি বেশি পরিচিতি ঘটানোসহ স্থানীয় কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কেউ রিসোর্ট ব্যবসা, কেউ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী উন্নতমানের আধুনিক ও ডিজিটাল টাইপের ব্যবসা শুরু করেন।

এর মধ্যে স্থানীয় চাল ব্যবসায়ী ও খাইরুল গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান আলহাজ খাইরুল ইসলাম স্বপ্নদ্বীপ নামে রিসোট নির্মাণ করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই না, এখানে পাকশী রিসোর্টও তৈরি হয়েছে এবং আরও রিসোর্ট নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। শীর্ষ রিসোর্ট স্বপ্নদ্বীপে বিদেশীদের নিরাপত্তাসহ নানা সুবিধা থাকায় বাংলাদেশের সকল রিসোর্টের চেয়ে বেশি বিদেশীদের আসা-যাওয়া ও অবস্থান রয়েছে বলে রিসোর্ট সূত্র দাবি করেছে। স্বপ্নদ্বীপ রিসোর্টে প্রবেশ করলেই মনে হয় থাইল্যান্ড বা সিঙ্গাপুরের কোনো স্থানে অবস্থান করা হচ্ছে।

একইভাবে চালু করা হয়েছে চোখে ধরার মতো, ব্যবসা-বাণিজ্যকেন্দ্র, আলিশান মার্কেট, বাসাবাড়ি নির্মাণ, ব্যাংক-বিমার পাশাপাশি রাশিয়ানদের চাহিদামতো ফুড ভিলেজ। শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পের সুবাদে স্থানীয় ও রাশিয়ানদের মধ্যে সংস্কৃতির বিনিময়ও শুরু হয়েছে। নানা অনুষ্ঠানে রাশিয়ানসহ ভিনদেশীদের অংশগ্রহণ করতেও দেখা যায়। এখানে রাশিয়ানদের সঙ্গে বাঙালি মেয়েদের সামাজিক বিয়েসহ চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করে বসবাস করার মতো ঘটনাও রয়েছে।
সূত্রমতে, বিদেশীদের আগমন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে মানুষের অর্থনীতি ও মানুষের জীবনযাত্রার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এমনকি স্থানীয়দের সঙ্গে রাশিয়ানদের সংস্কৃতিরও আদান-প্রদান হচ্ছে। এসব বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন, পাবনা-৪ আসনের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরুজ্জামান বিশ^াস, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাড. রবিউল আলম বুদু, সাবেক পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মাহজেবিন শিরিন পিয়া, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সাকিবুর রহমান শরীফ কনক, ভারত বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের সদস্য ও খায়রুল গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ খায়রুল ইসলাম, ব্যবসায়ী নেতা ফজলুর রহমান মালিথাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে গোটা ঈশ^রদীর ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাশিয়ানদের আবাসিক এলাকা ‘গ্রিন সিটি’ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কাজের সুবাদে রাশিয়ানরা বর্তমানে এখানে বসবাস করছে। একই প্রকল্পের নির্মাণকাজের সুবাদে এখানকার কিছু নদী ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ  লোপাটকারী বলে পরিচিত ব্যক্তিরাও টাকার পাহাড় গড়ছে।

নির্মাণ করেছে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য অলিশান ফ্ল্যাটবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আলিশান গাড়ি। এখানকার ছিঁচকে চোর থেকে শুরু করে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ডাকাতরাও অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছে। এই প্রকল্পের কারণে ঈশ^রদী-কুষ্টিয়া রোডের নতুনহাট এলাকায় নির্মাণ করা গ্রিন সিটিতে বর্তমানে রাশিয়ানরা বসবাস করলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তারা চলে যাবে নিজ দেশে। তবে এখানে তারা কিছু রাশিয়ান কালচার, বীজ ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন রেখে যাবেন, যা ঈশ^রদীসহ দেশবাসী ব্যবহার করবে।
দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাশিয়ার সরকারের সহযোগিতায় ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঈশ^রদীর পাকশী ইউনিয়নের রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ১নং ইউনিটের প্রথম কংক্রিট ঢালাই অনুষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রকল্পের মূল পর্বের কাজ শুরু হয়। ইতোমধ্যে দুটি চুল্লি বসানো হয়েছে।

একেকটি চুল্লিতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। চলতি ২০২৪ সালের মাঝামাঝি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলেই দেশের চাহিদা পূরণের পর বিদেশেও বিদ্যুৎ রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এসব তথ্য রূপপুর পরমাণু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঈশ^রদী এলাকার ব্যবসায়ীদের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

ঝালকাঠি আজকাল