• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৫ মে ২০২৪  

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তিন মামলার কোনও বাদীই কথা বলতে রাজী নন। কেউ বলছেন, তার অভিযোগ এজাহারেই আছে। এ নিয়ে আর কোনও কথা তিনি বলবেন না। যা বলার আইনজীবীই বলবেন। আরেকজন বলছেন, মামলাটি এখন তদন্তাধীন, এ নিয়ে যা বলার ঊর্ধ্বতনরাই বলবেন। অন্যজন এজাহারে দেওয়া ফোন নম্বরটি বন্ধ রেখেছেন। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যখনকার ঘটনা তখন কেন তারা পুলিশ কিংবা আইনের আশ্রয় নেননি।

বহুল আলোচিত ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া তিন মামলায় আনীত তিনটি অভিযোগই গুরুতর। মানবপাচার, জাল-জালিয়াতি এবং অবৈধভাবে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বিভিন্ন গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে মানুষের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিন মামলার এজাহারে এ অভিযোগ নেই। গত ১ মে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতারের পর আদালতের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে (রিমান্ডে) নেওয়া হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে শনিবার (৪ মে) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। মিল্টনের স্ত্রী মিতু হালদারকেও রবিবার (৫ মে) ডিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গ্রেফতারের পর গত ২ মে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করা হয় মিরপুর মডেল থানায়। শনিবার (৪ মে) তিন মামলার কোনও বাদীই মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। সবারই একই কথা, তাদের অভিযোগ এজাহারে বলা হয়েছে। এখন মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে ডিবি। তিন মামলার একটির বাদী হয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মিরপুর জোনাল টিমের সদস্য এসআই মোস্তফা কামাল পাশা। মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ‘মৃত্যুসনদ’ তৈরির অভিযোগ আনেন তিনি। এজাহারে বলা হয়, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে মিল্টন নিজেই ‘মৃত্যুসনদ’ দিতেন। এমন তথ্য পেয়ে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ নামের প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালালে সেখান থেকে এ সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি সিল উদ্ধার করা হয়। মিল্টন কোনও নিবন্ধিত ডাক্তার নন। তার প্রতিষ্ঠানে কোনও নিবন্ধিত ডাক্তার নিয়োগও দেননি। তিনি প্রতারণামূলকভাবে বিভিন্ন চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে এক কোটি ২০ লাখ ফ্যান-ফলোয়ারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে অর্থ উপার্জন করেন। মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, তিনি তদন্ত কর্মকর্তা নন। শুধু বাদী। যা করার ঊর্ধ্বতনরা করবেন।

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আরেকটি গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে মানবপাচারের। এ মামলার বাদী রাজধানীর হাজারীবাগের ঝিগাতলার মনেশ্বর রোডের বাসিন্দা এম রাকিব। এজাহারে বলা হয়, ২০২০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডি বয়েজ স্কুলের সামনে দুই বছরের অজ্ঞাত এক শিশুকে পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তখন শেরে বাংলা নগর থানায় বিষয়টি জানান। কিন্তু থানা পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ ফোন করলে মিল্টন সমাদ্দার ওই শিশুকে সেখান থেকে নিয়ে যান। তাকে অভিভাবক হিসেবে একটি সার্টিফিকেটও দেন মিল্টন। এ সময় বাচ্চাটির দেখাশোনা ও চিকিৎসার জন্য দাতব্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে মিল্টন সমাদ্দারকে বাদী ১০ হাজার টাকা দেন। পরবর্তীতে পাঁচ-ছয় মাস যাবত সেখানে তিনি যেতেন এবং শিশুটির জন্য সামান্য কিছু খরচও দিয়েছেন। মিল্টন সমাদ্দার তাকে এটাও জানিয়েছেন, আদালতের মাধ্যমে চাইলে তিনি বাচ্চাটিকে গ্রহণ করতে পারবেন। কিছুদিন যাওয়ার পর ২০২১ সালের কোনও একদিন মিল্টন ফোন করে হুমকি দিয়ে তাকে জানান, তিনি (রাকিব) যেন ওই প্রতিষ্ঠানে আর না যান এবং শিশুটির খোঁজ-খবর না নেন। এরপর আরও বেশ কয়েকজন ফোন করে তাকে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখান। প্রাণ ভয়ে তিনি আর সেখানে যাননি। সম্প্রতি একটি খবর চোখে আসার পর গত ২৪ এপ্রিল ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ যান তিনি। কিন্তু শিশুটিকে সেখানে পাওয়া যায়নি। শিশুটি কোথায় আছে সে ব্যাপারেও তাদের কাছ থেকে সদুত্তর পাননি।

বাদীর অভিযোগ, ২০২১ সালের যেকোনও সময় শিশুটিকে পাচার করা হয়েছে। হুমকি-ধমকি দেওয়ার পর ২০২১ সালে কেন আইনের আশ্রয় নেননি জানতে চাইলে এম রাকিব বলেন, হামলা-মামলার ভয়ে তখন কোনও পদক্ষেপ নিইনি। এরপর তিনি আর কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, যা বলার সময়মতো তার আইনজীবী বলবেন।

তৃতীয় মামলায় দলগতভাবে হামলা, মামলা ও হত্যার হুমকির অভিযোগ আনেন বাদী মতিউর রহমান মল্লিক নামের আরেকজন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২১ সালে মিরপুর মাজার রোডে রাত ১১টার দিকে এক বৃদ্ধকে পড়ে থাকতে দেখে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ ফোন করেন তিনি। এরপর মিল্টনের লোকজন বৃদ্ধকে নিয়ে যায়। তারপর বেশ কয়েকবার প্রতিষ্ঠানে গেলে ওই বৃদ্ধকে আর দেখতে পাননি তিনি। পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মিল্টন সমাদ্দারসহ বেশ কয়েকজন তাকে (মল্লিক) মারধর করেন ও হত্যার হুমকি দেন এবং পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে যাতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে না পারেন সে জন্য সাদা কাগজে জোরপূর্বক সই নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে তার সঙ্গে ফোনে একাধিকার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। একপর্যায়ে তিনি এজাহারে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে দেন। পরে ওই নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে তোলার দিন (২ মে) রিমান্ড শুনানিতে তার আইনজীবী আব্দুস সালাম শিকদার আদালতকে বলেছেন, মন্দের ভিড়ে এখনও ভালো মানুষের সংখ্যা বেশি। আর কেউ ভালো কাজে আকর্ষিত হয়ে দান করলে এটা নেওয়া প্রতারণা নয়। মিল্টন সমাদ্দার কোনও পক্ষের প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, দোষ ধরার লোকের অভাব নাই। ভালো কাজ করেন কত জন। রাস্তায় একজন অসুস্থ মানুষ পড়ে থাকলে দেখার কেউ নেই। মিল্টন সমাদ্দার রাস্তা থেকে এনে তাদের মুখে ভাত তুলে দেন। তাকেই তো মানবতার ফেরিওয়ালা বলা যায়। এটা নিয়ে তো ফেসবুকে পোস্ট দেওয়াই যায়। মিল্টন সমাদ্দার ভালো কাজ করে চক্ষুশূল হয়েছেন।

মিল্টন সমাদ্দারের আরেক আইনজীবী মো. ওহিদুজ্জামান বিপ্লব বলেন, মিল্টন সমাদ্দার প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন মূলত সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুরের বাহেরটেকে ৬৫ শতাংশ জমিতে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’-এর ভবন নির্মাণের পর। সেই জায়গাটি ছিল পরিত্যক্ত। গত ১ এপ্রিল সেখানে আশ্রিতদের স্থানান্তর করা হয়। যেখানে বর্তমানে ৫০ জন আশ্রিতকে রাখা হয়েছে। এরপর থেকেই রাস্তার জায়গা নিয়ে স্থানীয় একজনের সঙ্গে বিরোধ হয়। সেটাই মূল কারণ।

তিনি বলেন, যে শিশুটি পাচার হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, শিশুটিকে যখন ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’-এ নেওয়া হয়, তখন তার নাম রাখা হয় ফুয়াদ। শিশুটি নিরাপদেই আছে।

ঝালকাঠি আজকাল