• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

যাদের চিরপ্রস্থানে অশ্রুসিক্ত বাঙালি

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৪ ডিসেম্বর ২০২১  

যুদ্ধ প্রায় শেষের দিকে। এরইমধ্যে শত্রুমুক্ত হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা। পাকিস্তানি জান্তারা প্রায় নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েছে। চূড়ান্ত বিজয়ের ঠিক দুইদিন আগে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে মাঠে নামে স্বাধীনতাবিরোধী কিছু দোসর। ১৪ ডিসেম্বর হত্যা করা হয় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের। লেখক, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষকসব দেশের আলোচিত মেধাবীদের হত্যার করা হলো সেদিন। এ যেন যুদ্ধকালীন জাতীর জন্য একটি বড় পরাজয়ের স্মৃতিকথা।

আজ সেই ভয়াল ১৪ ডিসেম্বর, শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। ১৯৭১ সালের এ দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করে পুরো জাতিকে মেধাশূন্য করার পায়তারা করে হানাদার বাহিনী।

১৯৭১ সালের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে শহিদদের আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বাঙালি।

শহিদুল্লাহ কায়সার

শহিদুল্লাহ কায়সার ছিলেন কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক ও লেখক। ১৯২৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনীর মজুপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আবু নাঈম মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। বাবা মাওলানা মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ছিলেন ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার ও লেখক জহির রায়হান তার অনুজ। পান্না কায়সার তার সহধর্মিণী।

শহিদুল্লা কায়সার সমসাময়িক রাজনৈতিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৪৭ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন ও ১৯৫১ সালে পার্টির সদস্য হন। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি দেশপ্রেমিক ছদ্মনামে রাজনৈতিক পরিক্রমা ও বিশ্বকর্মা ছদ্মনামে বিচিত্রা কথা শীর্ষক উপসম্পাদকীয় রচনা করেছেন।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন এবং ভাষা আন্দোলনে তার রাজনৈতিক ভূমিকার কারণে ১৯৫২ সালের ৩ জুন তিনি গ্রেফতার হন। এ সময় তাকে সাড়ে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯৫৫ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই পুনরায় গ্রেফতার হন। কয়েক বছর পর মুক্তি পান। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান কর্তৃক সামরিক আইন জারি হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৪ অক্টোবর তাকে গ্রেফতার করা হয়। জননিরাপত্তা আইনে তাকে এ পর্যায়ে ১৯৬২ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আটক রাখা হয়।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আলবদর বাহিনীর কজন সদস্য তাকে তার বাসা ২৯, বিকে গাঙ্গুলী লেন থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর তিনি আর ফেরেননি।

মুনীর চৌধুরী

আবু নয়ীম মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী ছিলেন একজন বাংলাদেশি শিক্ষাবিদ, নাট্যকার, সাহিত্য সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী এবং বুদ্ধিজীবী। ১৯২৫ সালের ২৭ নভেম্বর মানিকগঞ্জ শহরে তার জন্ম। তার পৈতৃক নিবাস নোয়াখালী জেলায়। পিতা খানবাহাদুর আবদুল হালিম চৌধুরী ছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট।

১৯৭১ সালের মার্চে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে মুনীর চৌধুরী ফিরে আসার কিছুকাল পরেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়।

১৪ই ডিসেম্বর মুনীর চৌধুরীকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীদের সহযোগী আল-বদর বাহিনী তার বাবার বাড়ি থেকে অপহরণ করে ও সম্ভবত ওইদিনই তাকে হত্যা করে।

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ছিলেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের গবেষক, শিক্ষাবিদ। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুলাই নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার খালিশপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবার নাম বজলুর রহমান চৌধুরী এবং মায়ের নাম মাহফুজা খাতুন।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রায় পুরো সময়টাই স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডের বাসায় ছিলেন। ১০ ডিসেম্বরে তিনি ফুলার রোডের বাসা ছেড়ে কেএম দাস লেনে শের-এ-বাংলার বাসায় ওঠেন। ডিসেম্বরের ১২-১৩ তারিখের দিকে তিনি ওই বাসা ছেড়ে তার ছোট ভাই লুত্ফুনল হায়দার চৌধুরীর শান্তিবাগের বাসায় ওঠেন। ১৪ই ডিসেম্বর আল-বদর বাহিনী তাকে সেই বাসা থেকে অপহরণ করে। এরপর তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ওই দিনই তাকে হত্যা করা হয়।

এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী

শহিদ ডা. এ এফ এম আবদুল আলীম চৌধুরী (পুরো নাম: আবুল ফয়েজ মোহাম্মদ আবদুল আলীম চৌধুরী) ছিলেন চিকিৎসক।

১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টায় শহিদ ডা. আবদুল আলীম চৌধুরীকে রাজাকার-আলবদর বাহিনী তার বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। সারারাত নির্যাতনের পর ভোররাতে তাকে মেরে ফেলা হয়। ১৮ ডিসেম্বর রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে ডা.আবদুল আলীমের ক্ষত-বিক্ষত লাশটির সন্ধান পাওয়া যায়।

ড. আবুল খায়ের

ড. আবুল খায়ের ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক। মুক্তিযুদ্ধের শেষ লগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা ফুলার রোডের ৩৫/বি নম্বর বাসা থেকে ১৪ ডিসেম্বর সকাল ৯টার দিকে তাকে অপহরণ করে। কিছুদিন পর মিরপুর বধ্যভূমিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা

মোহাম্মদ মোর্তজা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও লেখক। পাকিস্তান সেনাবাহিনী, রাজাকার ও আল-বদর বাহিনীর হাতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে অবস্থিত স্বগৃহ থেকে অপহৃত হন। পরে তাকে হত্যা করা হয়।

ডা. মোর্তজাকে তার মেয়ে মিতির ওড়না দিয়ে চোখ বেঁধে গাড়িতে করে তুলে নেওয়া হয়েছিল। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে ওই ওড়না দেখে ডা. মোর্তুজার লাশ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছিল।

ড. ফয়জুল মহী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের শিক্ষক ছিলেন ন আ ম ফয়জুল মহী। তার জন্ম ১৯৩৯ সালের ১০ আগস্ট ফেনীতে।

১৪ ডিসেম্বর সকালে সাদা একটি মাইক্রোবাস এসে ফুলার রোডের ৩৫ নম্বর বাসার কাছে থামে। ওই বিল্ডিং-এর তিন তলা থেকে, লুঙ্গী পরা, চোখ বাঁধা অবস্থায় ড. ফয়জুল মহীকে ধরে নিয়ে মাইক্রোবাসে ওঠায় হানাদাররা। স্বাধীনতার পরে রায়ের বাজারের বধ্যভূমিতে শত শত শহিদের মধ্যে ড. মহীর গুলিতে ক্ষত-বিক্ষত, বিকৃত লাশ সনাক্ত করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের উত্তর পাশে অন্যান্য শহিদদের সঙ্গে সমাহিত করা হয়।

গিয়াসউদ্দীন আহমদ

গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সিনিয়র লেকচারার, মহসীন হলের হাউস টিউটর এবং শিক্ষাবিদ ছিলেন।

১৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মহসীন হলের আবাসিক শিক্ষকদের বাসভবন থেকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি তাকে ধরে নিয়ে যায়। পরে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গনে তাকে সমাহিত করা হয়।

এ এন এম গোলাম মোস্তফা

এ এন এম গোলাম মোস্তফা ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে অকুতোভয় সাংবাদিক। তার জন্ম ১৯৪৩ সালের ১১ই ডিসেম্বর নীলফামারীর পঙ্গা গ্রামে। তার বাবার নাম জহিরুদ্দিন আহমেদ।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অবরুদ্ধ ঢাকার বাঙালিরা যখন ভীতসন্ত্রস্ত, কথা বলতো নিচু স্বরে তখনো তিনি স্বভাবসুলভ উচ্চস্বরে কথা বলতে ভালোবাসতেন। স্বাধীনভাবে নিজের মত প্রকাশ করতেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার ব্যাপারে আত্মপ্রত্যয়ী ছিলেন।

১৯৭১ সালের ১১ই ডিসেম্বর আলবদর বাহিনীর ঘাতকচক্র তাকে ঢাকার গোপীবাগের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায়। আর খোঁজ পাওয়া যায়নি তার।

আনোয়ার পাশা

আনোয়ার পাশা ছিলেন একজন বাংলাদেশি কবি ও কথাসাহিত্যিক। তার বাবার নাম হাজী মকরম আলী আর মায়ের নাম সাবেরা খাতুন।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাহায্যকারী আল বদর গোষ্ঠীর একটি দল তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসন থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় এবং মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের নিকট হত্যা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জামে মসজিদের পাশে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী

শহিদ ডা. মোহাম্মদ ফজলে রাব্বী ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিনি ১৯৩২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পাবনা জেলার ছাতিয়ানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

১৯৭১ সনের ১৫ই ডিসেম্বর বিকেলে পাকবাহিনীর কয়েকজন সৈন্যসহ রাজাকার-আলবদরদের কয়েকটি দল ডা. ফজলে রাব্বীকে তার সিদ্ধেশ্বরী বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায় এবং রায়েরবাজার বধ্যভূমিতে নির্মমভাবে হত্যা করে। ১৮ই ডিসেম্বর দিনের বেলায় শহিদ ডা. ফজলে রাব্বীর ক্ষত-বিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

সেলিনা পারভীন

সেলিনা পারভীন ছিলেন একজন সাংবাদিক। তিনি সাপ্তাহিক বেগম, সাপ্তাহিক ললনা, ও শিলালিপি পত্রিকায় সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকাণ্ডের অংশ হিসেবে ১৪ ডিসেম্বর আল বদর বাহিনী কর্তৃক অপহৃত হওয়ার পর তাকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। পরে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।

সিরাজুল হক খান

সিরাজুল হক খান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ১৯২৪ সালে ফেনী জেলার পরশুরাম উপজেলার সাতকুচিয়া গ্রামে তিনি জন্ম নেন। কর্মজীবনের প্রায় ১৭ বছর বিভিন্ন সরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করার পর ১৯৬৮ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী অধ্যাপক নিযুক্ত হন।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর সিরাজুল হক খানকে তার আবাসস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টাফ কোয়াটার (১৬ নম্বর বিল্ডিং) থেকে আল-বদর বাহিনীর সদস্যরা ধরে নিয়ে যায়। পরে মিরপুর বধ্যভূমি থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তিনি সমাহিত হন।

এস. এম. এ. রাশীদুল হাসান

এস. এম. এ. রাশীদুল হাসান ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় সহযোগীরা তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েরই অপর এক শিক্ষক আনোয়ার পাশার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহের সঙ্গে তার লাশ মিরপুরের রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে পাওয়া যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য

সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের একজন শিক্ষক ছিলেন। ১৯১৫ সালের ৩০শে আগস্ট তিনি ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।  

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দুপুরবেলা মাইক্রোবাস নিয়ে কয়েকজন ছাত্র এসে সন্তোষচন্দ্র ভট্টাচার্যকে বলে ‘স্যার আমাদের সঙ্গে যেতে হবে’। তাকে চোখ বাধা অবস্থায় মিরপুর শহিদ মিনারে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয়। সন্তোষচন্দ্রর লাশ যখন পাওয়া যায় তখন তার মুখের ভেতরে কোনো দাঁত ছিল না, মাথায় কোনো চুলও ছিল না।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে রয়েছেন আরো অনেকে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। তবে স্বাধীনতার ঠিক আগ মূহুর্তে বাঙালি চিরতরে হারায় এসব বীর সন্তানদের। যাদেরকে আজও অশ্রুসিক্ত বাঙালি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। বাঙালি স্বীকার করে, ‘বাংলাদেশের মানচিত্র এসব শহিদ বীর সন্তানদের কাছে চির ঋণী।’ 

ঝালকাঠি আজকাল