• শনিবার ১৮ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ০৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
যত ষড়যন্ত্র হোক, আ.লীগ সংবিধানের বাইরে যাবে না: ওবায়দুল কাদের শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে

সাইমন ড্রিং

বিদায় বন্ধু, বিদায়

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০২১  

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু, খ্যাতিমান ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইমন ড্রিং আর নেই। গত ১৬ জুলাই রোমানিয়ার একটি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের সময় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর বিবিসির মাধ্যমে সর্বপ্রথম বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন তিনি।

সাইমন ড্রিং বাংলাদেশের জনগণের অতি আপনজন। তিনি একমাত্র সাংবাদিক, যিনি ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানের ভয়াবহতা এবং নৃশংসতা শুরু থেকেই কভার করেছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশ সরকার তাকে সম্মানসূচক নাগরিকত্ব দিয়েছিল। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, সাইমন ড্রিং প্রচারিত সংবাদ মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের বিজয়কে ত্বরান্বিত করেছিল। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরীক্ষিত বন্ধুকে হারাল। শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত সৃষ্টিতে তিনি ভূমিকা রেখেছেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বিকাশ ও দেশের প্রথম বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টিভির পরিচালনায়ও তার অবদান রয়েছে।

সাইমন ড্রিং ছিলেন অকুতোভয় এবং মেধাবী সাংবাদিক। গুণী এ সাংবাদিক বিবিসি, রয়টার্স, টেলিগ্রাফ, ওয়াশিংটন পোস্টসহ বিশ্বের বড় বড় সংবাদ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টার অব দ্য ইয়ার-১৯৭১।

ইংল্যান্ডের নরফোকে ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি জন্ম নেন সাইমন ড্রিং। তিনি অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে দ্বিতীয় স্ত্রী ফাইওনা ম্যাকফারসনের সঙ্গে বসবাস করতেন। তার স্ত্রী একজন আইনজীবী এবং রোমানিয়াভিত্তিক শিশু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। ইভা, ইনডিয়া ও তানিয়া নামে তিন মেয়ে রেখে গেছেন সাইমন।

১৯৭১ সালের ৬ মার্চ ঢাকা আসেন সাইমন ড্রিং। পরদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ শোনার সুযোগ হয় তার। মঞ্চের খুব কাছে দাঁড়িয়ে পুরো ভাষণ শুনেছিলেন তিনি। ২৫ মার্চ তিনি জানতে পারেন পশ্চিম পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কোনো সমঝোতা ছাড়াই ঢাকা ত্যাগ করছেন। অভিজ্ঞতা থেকে সাইমন ধারণা করেন, ঢাকায় ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে বিদেশি সাংবাদিকদের একসঙ্গে রাখা হয় ইন্টারকন্টিনেন্টালে। তাদের পাহারা দেয় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী। তার সন্দেহ আরও বেড়ে যায়। এরই মধ্যে উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে পারেন ঢাকায় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে পাকিস্তানের সৈন্যরা।

রাতেই পাকিস্তানের গোয়েন্দা বিভাগের মেজর সিদ্দিক সালিক নিরাপত্তার অজুহাতে সব বিদেশি সাংবাদিককে ঢাকা ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু নিজ ইচ্ছায় কৌশলে বাংলাদেশে থেকে যান সাইমন।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিভীষিকাময় দৃশ্য দেখতে পান তিনি। ছাত্রদের মৃতদেহ পুড়ছিল, অনেক মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। চারুকলা ইনস্টিটিউটে গিয়ে জানতে পারেন সেখানেও হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। আশপাশের এলাকাগুলো ঘুরে চিত্র এবং তথ্য জোগাড় করতে থাকেন সাইমন। রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে গিয়ে দেখেন পাকিস্তানি সেনারা পতাকা উড়িয়ে রেখেছে এবং শত শত মৃহদেহ ট্রাকে তুলে নিচ্ছে।

একদিন পর ব্রিটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় ঢাকা ছাড়েন সাইমন। কিন্তু তাকে এয়ারপোর্টে নাজেহাল করা হয়। বিবস্ত্র করে চেক করা হয় সঙ্গে কী নিয়ে যাচ্ছেন। তাকে ক্যামেরা নিয়ে যেতে দেওয়া হয়নি। পায়ের মোজায় কাগজ লুকিয়ে রেখেছিলেন; কিন্তু ধরা পড়ে যান। এরপর তার পায়ুপথে লাঠি ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়। পরে ব্যাঙ্কক থেকে ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রতিবেদন পাঠান, যা ছাপা হয় 'ট্যাঙ্কস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান' শিরোনামে। সেটি ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়।
এটিই ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ-সংক্রান্ত বহির্বিশ্বে প্রচারিত প্রথম সংবাদ। খবরটি ছাপা হওয়ার পর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বিদেশিদের টনক নড়ে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত সৃষ্টিতে এ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, 'আল্লাহর নামে আর অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার অজুহাতে ঢাকা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও সন্ত্রস্ত এক নগর। পাকিস্তানি সৈন্যদের ঠান্ডা মাথায় টানা ২৪ ঘণ্টা গোলাবর্ষণের পর এ নগরে অবশিষ্ট আর কিছু নেই।' তার প্রতিবেদনে বাংলাদেশের একটি চিত্র সবার সামনে উঠে আসে এবং এর পরই পাকিস্তানকে চাপ দিতে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহল।

তার সাহসী ভূমিকায় পুরো বাংলাদেশ আজও তার কাছে কৃতজ্ঞ। স্বাধীনতার পর কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন সাইমন। বঙ্গবন্ধু ১০ জানুয়ারি ঢাকা ফিরে আসার পর সাইমন তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেদিন তার জন্মদিন হওয়ায় বঙ্গবন্ধু কেক কেটে জন্মদিন উদযাপনের ব্যবস্থা করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা দেয়।

অন্যদের মধ্যে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সাইমনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

ঝালকাঠি আজকাল