• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

স্বামী হিসেবে মহানবী (সা.)

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৯ জুন ২০২০  

স্ত্রীদের স্বীকৃতি ও স্তুতিকাব্য

স্ত্রীদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট ছিলেন আয়েশা (রা.)। তিনি রাসুল (সা.)-এর ভালোবাসায় কবিতায় লেখেন—‘আমাদের একটি সূর্য আছে, আকাশেরও একটি সূর্য/আমার সূর্য আকাশের সূর্যের চেয়ে উত্তম/কেননা পৃথিবীর সূর্য ফজরের পর উদিত হয়/আমার সূর্য উদিত হয় এশার পর।’

মহানবী (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী ছিলেন খাদিজা (রা.)। জিবরাঈল (আ.)-এর সঙ্গে প্রথম সাক্ষাতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.) কিছুটা ভয় পেয়ে গেলে তিনি তাঁর সম্পর্কে ঐতিহাসিক এক সাক্ষ্য প্রদান করেন। বলেন, ‘আল্লাহ আপনাকে অপমান করবেন না। আপনি আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করেন, বিপদগ্রস্ত লোকদের সাহায্য করেন, মেহমানদারি করেন এবং সত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন।’ (আর-রাহীকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ৮৫)। প্রকৃতার্থে মহানবী (সা.)-এর দাম্পত্য জীবন ছিল কোরআনের সেই আয়াতের বাস্তবায়ন, যেখানে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা তাদের সঙ্গে সত্ভাবে জীবনযাপন করো।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৯)।

 

মহানবী (সা.) শুধু ইবাদত বন্দেগি নয়, বরং ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনেও তিনি মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। কেননা মানবীয় গুণাবলির সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।’ (সুরা কালাম, আয়াত : ৬)

স্বামী হিসেবে কেমন ছিলেন মহানবী (সা.)? মহানবী (সা.) আল্লাহর নির্দেশ ও নানা মানবিক কারণে একাধিক বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তাঁর সাম্য, ন্যায়পরায়ণতা ও দায়িত্বশীল আচরণের কারণে সবার কাছেই তিনি ছিলেন প্রিয়। তাঁর জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর পর স্ত্রীদের কেউ তাঁর প্রতি কোনো ধরনের অভিযোগ করেননি; বরং মহানবী (সা.)-এর স্ত্রীদের কাছে তাঁর সান্নিধ্য ও সংস্রবের চেয়ে আনন্দ ও তৃপ্তির আর কিছু ছিল না। তাঁর পবিত্র জীবনে আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্যগুলো সহজেই খুঁজে পাওয়া যায়।

স্ত্রীদের প্রতি যত্নশীল : মহানবী (সা.) তাঁর স্ত্রীদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সব স্ত্রীর খোঁজ নিতেন এবং সবার সঙ্গে কিছুক্ষণ সময় কাটাতেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘ফজরের নামাজের পর নবী (সা.) নামাজের স্থানে বসে থাকতেন। সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত লোকেরাও তাঁর চারপাশে বসে থাকত। অতঃপর তিনি তাঁর প্রত্যেক স্ত্রীর কাছে যেতেন, তাদের সালাম দিতেন, তাদের জন্য দোয়া করতেন আর যার দিন থাকত তার কাছে গিয়ে বসতেন।’ (তিবরানি, হাদিস : ৮৭৬৪)

এ ছাড়া রাসুল (সা.) প্রতি রাতে সব স্ত্রীদের একত্র করে তাঁদের খোঁজ নিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘খুব কম দিনই হতো যে রাসুল (সা.) তাঁর সব স্ত্রীর কাছে যেতেন না এবং তাদের সঙ্গে সহবাস ছাড়া ঘনিষ্ঠ (আলিঙ্গন ও চুম্বন) হতেন না।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২১৩৭)

চিত্তবিনোদন ও মানসিক প্রশান্তির ব্যবস্থা : স্ত্রীদের মানসিক প্রশান্তির জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের সঙ্গে ক্রীড়া-কৌতুকও করতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সফরে তিনি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন—তখন তিনি কিশোরী। রাসুল (সা.) সঙ্গীদের বললেন, তোমরা এগিয়ে যাও। অতঃপর আয়েশা (রা.)-কে বলেন, এসো দৌড় প্রতিযোগিতা করি। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম এবং দৌড়ে এগিয়ে গেলাম।’ (আস-সুনানুল কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৮৯৪৫)

সাংসারিক কাজে সহযোগিতা : মহানবী (সা.) সাংসারিক কাজে স্ত্রীদের সহযোগিতা করতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৫৩৮০)

মান-অভিমানে সহানুভূতি : স্ত্রীরা কখনো অভিমান করলে বা মন খারাপ করলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করতেন। এক সফরে রাসুলুল্লাহ (সা.) এগিয়ে যান এবং সাফিয়া (রা.) পিছিয়ে পড়েন। এতে তিনি কেঁদে ফেলেন। মহানবী (সা.) তখন নিজ হাতে তাঁর চোখ মুছে দেন এবং কাঁদতে নিষেধ করেন।’ (সুনানে কুবরা লিন-নাসায়ি, হাদিস : ৯১৬২)

স্ত্রীদের সঙ্গে খুনসুটি : মহানবী (সা.) তাঁর আচার-আচরণে স্ত্রীদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতেন এবং নানা খুনসুটি করতেন তাঁদের সঙ্গে। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম—যা আমাদের মধ্যে থাকত। তিনি আমার চেয়ে অগ্রগামী হলে আমি বলতাম, আমার জন্য রাখুন! আমার জন্য রাখুন!!’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩২১)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হাড় থেকে গোশত কামড়ে নিতাম। তারপর আমি যেখানে মুখ রাখতাম রাসুলুল্লাহ (সা.)ও সেখানে তাঁর মুখ রাখতেন। অথচ তখন আমি ঋতুমতী ছিলাম। আমি পাত্র থেকে পানি পান করতাম। তারপর তিনি সে স্থানে মুখ রাখতেন, যেখানে আমি মুখ রাখতাম। অথচ আমি তখন ঋতুমতী ছিলাম।’ (নাসায়ি, হাদিস : ৭০)

শারীরিক ও মানসিক আঘাত পরিহার : রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো তাঁর স্ত্রীদের শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করেননি। কোনো কারণে ক্রোধান্বিত হলে তিনি চুপ হয়ে যেতেন এবং তাঁর চেহারা মোবারক লাল হয়ে যেত। কিন্তু তিনি কোনো কটু কথা বলতেন না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে খাদেম ও কোন স্ত্রীকে প্রহার করতে দেখিনি।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৬)

স্ত্রীদের অবদান স্বীকার : খাদিজা (রা.) সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন আমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তখন সে আমার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে, মানুষ যখন আমাকে বঞ্চিত করেছে তখন সে তার সম্পদ দ্বারা আমাকে সমৃদ্ধ করেছে, আল্লাহ আমাকে তার গর্ভ থেকে সন্তান দিয়েছেন যখন তিনি অন্য স্ত্রীদের সন্তান থেকে আমাকে বঞ্চিত করেছেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২৪৮৬৪)

ঝালকাঠি আজকাল