• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

চিকিৎসা করাতে এসে যৌনপল্লীতে বিক্রি! উদ্ধারের লোমহর্ষক গল্প

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮  

 

দূর্ভাগ্য আর কাকে বলে! বয়স মাত্র ২০। এই বয়সেই হারিয়েছেন বাবা-মাকে। বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামী তাকে ফেলে পালিয়ে গেছেন।এত কম বয়সে এতগুলো ধাক্কা সহ্য করার পরও যে তার জন্য আরও ভয়ংকর অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করছিল, তা নিশ্চয়ই দুঃস্বপ্নেও দেখেননি ওপার বাংলার মালদহের বাসিন্দা ওই তরুণী। কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। কিন্তু বিক্রি হয়ে যান বিহারের যৌনপল্লিতে। ২৭ দিন পর তাকে মৃতপ্রায় অবস্থায় উদ্ধার করা হয় চম্পারণের এক যৌনপল্লি থেকে।

কলকাতার গণমাধ্যমসূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন ওই তরুণী। মালদহ জেলা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে গেলে তাকে কলকাতায় এসএসকেএম হাসপাতালে স্ত্রীরোগ বিভাগে রেফার করে দেওয়া হয়। বাড়িতে কেউ না থাকায় ডিসেম্বরের ১ তারিখে একাই কলকাতায় আসেন চিকিৎসা করাতে।

বাড়িতে কেউ না থাকায়, কলকাতায় আসার পর তার খোঁজ খবর নেওয়ার কেউ ছিল না। চলতি মাসের ১২ তারিখ একটি অজানা মোবাইল নম্বর থেকে তরুণীর ফোন পান তার সৎ ভাই। ফোনে ওই তরুণী খালি বলতে পেরেছিলেন যে তাকে অপহরণ করে বিহারে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। 'আমাকে বাঁচাও...' এটুকুই সে দিন বলতে পেরেছিলেন তিনি।

তরুণীর ভাই দিশেহারা হয়ে যোগাযোগ করেন 'বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ' নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। সংগঠনের সম্পাদক তন্ময় ঘোষ বলেন, 'আমরাও প্রথমে দিশেহারা ছিলাম। কারণ প্রথমে মালদহ থানায় গেলে সেখানে পুলিশ কোনো সহযোগিতা করেনি। তারা তদন্তই করতে চায়নি। তারপর আমরা ডিজি, কলকাতা পুলিশের কমিশনার এবং মালদহের পুলিশ সুপারের সঙ্গে যোগাযোগ করি।'

ইতিমধ্যে আলাদা আলাদা আরও কয়েকটি নম্বর থেকে ওই তরুণী যোগাযোগ করেন পরিবারের সঙ্গে। কিন্তু পুলিশ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায়, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি বিহারে যোগাযোগ করে অন্য একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। ওই তরুণীর দেওয়া তথ্যের সাহায্যে বিহারের ওই সংগঠনটি বিহারের পশ্চিম চম্পারণ জেলার বেতিয়ার নাগরিচকের একটি তিনতলা বাড়িতে সন্ধান পায় ওই তরুণীর।

অভিযোগ, সেই তথ্য নিয়ে মালদহ পুলিশের কাছে গেলে তারা প্রথমে বিহারে গিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করতে অস্বীকার করে। তন্ময় অভিযোগ করেন, 'অনেক অনুরোধের পর, এবং পুলিশের যাওয়া আসার সমস্ত খরচ আমরা দিতে রাজি হওয়ার পর, মালদহ পুলিশ যেতে রাজি হয়।'

গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই যৌনপল্লি থেকে উদ্ধার করা হয় তরুণীকে। কিন্তু উদ্ধারের সময় প্রায় অচেতন অবস্থায় ছিলেন তিনি। উদ্ধারকাজে পুলিশের সঙ্গে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার এক প্রতিনিধি বলেন, যৌনকর্মে বাধ্য করতে শারীরিক নির্যাতন এবং ভয়াবহ যৌন নির্যাতনের ফলেই মেয়েটির এই অবস্থা। কোনো কোনো দিন ১৪-১৫ জন 'কাস্টমার' পাঠিয়ে দেওয়া হতো তার কাছে!

কিন্তু কী ভাবে তাকে নিয়ে যাওয়া হল বিহারে? গুরুতর অসুস্থ তরুণীর থেকে এখনও বিস্তারিত কথা জানা যায়নি। তবে প্রাথমিক ভাবে ওই তরুণী বলতে পেরেছেন, হাসপাতালে তার সঙ্গে আলাপ হয় পাপ্পু নামে এক যুবকের। তরুণী কলকাতায় একটি থাকার জায়গা খুঁজছিলেন। কারণ তখনও তাকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়নি। ওই যুবকের ফাঁদেই পড়ে যান তিনি।

তরুণীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, তাকে অপহরণ করে বিহারে নিয়ে গিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয় এক যৌনপল্লিতে। সেই জায়গা বিহারের কোথায়, তা অবশ্য তিনি বলতে পারেননি। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় নেপাল সীমান্তের কাছে বেতিয়াতে। সেখানেই রাখা হয়েছিল তাকে। যৌনপল্লির এক গ্রাহকের সাহায্যে প্রথম তিনি ভাইকে ফোন করেন।

বৃহস্পতিবার তাকে উদ্ধার করার পর শুরু হয়ে যায় আইনি জটিলতা। বিহার পুলিশ মালদহ পুলিশকে বাধা দেয় ওই তরুণীকে নিয়ে আসতে। তারা এফআইআর দেখতে চায়। এ দিকে অভিযোগ জানানোর পর মালদহ পুলিশ কোনো এফআইআর না করায়, তারা তা দেখাতে পারেননি। মালদহ পুলিশ পাল্টা দায় কলকাতা পুলিশের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে। কারণ তরুণী নিখোঁজ হয়েছিলেন কলকাতার ভবানীপুর থানা এলাকা থেকে।

শেষ পর্যন্ত বিহারের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হস্তক্ষেপে বিহারের স্থানীয় থানায় এফআইআর করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ওই তরুণীকে নিয়ে আসা হবে মালদহে। তন্ময় ঘোষের অভিযোগ, পুলিশ সক্রিয় হলে আরও আগেই উদ্ধার করা সম্ভব হতো। হয়ত আর একটু সুস্থ অবস্থায়। এতটা নির্যাতনও তার ওপর হতো না।

ঝালকাঠি আজকাল