• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

কোরআনে ধৈর্যের আদেশ

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮  

 

ধৈর্য মনুষ্যত্বের অন্যতম পরিচায়ক। ভালো গুণাবলির অন্যতম। আরবিতে এর প্রতিশব্দ সবর। যার অর্থ- সংযম অবলম্বন করা, নফসের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ লাভ করা।
কোরআনুল কারিমে বারবার আল্লাহ তায়ালা ধৈর্যের আদেশ দিয়েছেন। দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার আদেশ দিয়েছেন ধৈর্যের মাধ্যমে। ঘোষণা হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ


 
অর্থ: তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো। ধৈর্য এবং নামাজের মাধ্যেমে। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৩)

এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো আয়াতে সাহায্য কামনার জন্য ধৈর্য আর নামাজকে মাধ্যম বানিয়েছেন। শুধু এতটুকু নয় আয়াতে নামাজের আগে ধৈর্যের কথা বলা হয়েছে।

পবিত্র কোরআন ও হাদিসের পরিভাষায় ধৈর্যের তিনটি শাখা রয়েছে, আত্মা বা নিজেকে হারাম ও নাজায়েজ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। ইবাদত ও আনুগত্যে নিজেকে বাধ্য করা বা ডুবিয়ে রাখা এবং যেকোনো বিপদ আপদ বালা মুছিবত দুঃখ-দুদর্শা সঙ্কটে ধৈর্য ধারণ করা। অর্থাৎ যে সব বিপদ-আপদ বালা মুছিবত এসে উপস্থিত হয় তা ‘আল্লাহর পক্ষ হতে’ মেনে নেয়া এবং এর বিনিময়ে আল্লাহর তরফ থেকে প্রতিদান প্রাপ্তির আশা করা। অবশ্য কষ্টে কাতর হয়ে যদি মুখ থেকে কোনো কাতর শব্দ উচ্চারিত হয় বা অন্যের কাছে প্রকাশ করে, তবে তা ধৈর্যের পরিপন্থি। ধৈর্যের উপরোক্ত তিন শাখাই ধৈর্য ধারন করা মুসলামানের কর্তব্য।

আমরা অনেকেই মনে করি; তৃতীয় প্রকারে শুধু ধৈর্য। অন্যগুলো ধৈর্য বলে আমরা জানি না। সুতরাং আমাদের কর্তব্য এবং দায়িত্ব ধৈর্যের তিন শাখায় আমল করা। ধৈর্য ধারণ করা। সকল নবীগণের অন্যতম আদর্শ ছিল ধৈর্য। হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ধৈর্যের চরম পরীক্ষা দিয়েছেন। সেই পরীক্ষায় তিনিও উত্তীর্ণও হয়েছেন, হয়েছেন পরম পাত্র। হজরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালামও ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছেন। হাদিস শরীফে আছে তিনটি গুণ সকল নবীদের মাঝে ছিল, তন্মধ্যে অন্যতম একটি হলো ধৈর্য। বাস্তবতা হলো ধৈর্য ছাড়া কোনো কিছু অর্জন করাও দুরুহ।


 
কোরআনে ধৈর্যের আয়াত- يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اسْتَعِينُواْ بِالصَّبْرِ وَالصَّلاَةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

অর্থ: ‘তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করো ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যেমে।’ (সূরা বাকার, আয়াত ১৫৩)

বিপদ আপদে যে ধৈর্য এর শিক্ষা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوفْ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الأَمَوَالِ وَالأنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ

অর্থ: ‘অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো ভয় ক্ষুধা জানের ক্ষতি সম্পদের ক্ষতি ও ফসলাদির ক্ষতির দ্বারা। সুসংবাদ রয়েছে তাদের জন্য যারা বিপদের সময় ধৈর্যের মাধ্যমে বিপদকে মোকাবেলা করেছে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৫৫)

একস্থানে আল্লাহ মুমিনদের গুনের কথা আলোচনা করতে গিয়ে বলেন-

الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَالصَّابِرِينَ عَلَى مَا أَصَابَهُمْ وَالْمُقِيمِي الصَّلاةِ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنفِقُونَ


 
অর্থ: ‘যাদের কাছে আল্লাহর বড়ত্বের কথা উল্লেখ কররে তাদের অন্তর কেঁপে উঠে, যারা তাদের বিপদের ধৈর্য ধারণ করে, যারা নামাজ কায়েম করে এবং আমার দেওয়া রিযিক থেকে খরচ করে।’ (সুরা হজ, আয়াত ৩৫)

প্রতিশোধ গ্রহণের আলোচনায় আল্লাহ বলেন-

وَإِنْ عَاقَبْتُمْ فَعَاقِبُواْ بِمِثْلِ مَا عُوقِبْتُم بِهِ وَلَئِن صَبَرْتُمْ لَهُوَ خَيْرٌ لِّلصَّابِرينَ

وَاصْبِرْ وَمَا صَبْرُكَ إِلاَّ بِاللّهِ وَلاَ تَحْزَنْ عَلَيْهِمْ وَلاَ تَكُ فِي ضَيْقٍ مِّمَّا يَمْكُرُونَ

অর্থ: যদি প্রতিশোধ গ্রহণ করতে চাও তবে ততোটুকু নাও, যে পরিমাণ তারা তোমাদের ক্ষতি করেছে। আর যদি ধৈর্য ধারণ করো তবে জেনে রেখো তা ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য উত্তম। আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, আপনার ধৈর্য আল্লাহ ব্যতীত আর কারো জন্য নয়। (সূরা নাহাল, আয়াত ১২৬, ১২৭)

অন্যএক স্থানে আল্লাহ কালের শপথ করে ঘোষণা করেন- চার শ্রেণীর লোক ব্যতীত সব মানুষ ধ্বংসের মধ্যে নিমজ্জিত। ওই চার শ্রেণির এক শ্রেণি হলো ধৈর্য ধারণকারী। (সূরা আসর)। আল্লাহর রাসূলক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শত্রুর সঙ্গে উত্তম কৌশলে জবাব দেয়ার আদেশ দিয়েছেন;- وَلا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ () وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ الَّذِينَ صَبَرُوا وَمَا يُلَقَّاهَا إِلاَّ ذُو حَظٍّ عَظِيمٍ


 
তরজমা : ভালো আর মন্দ সমান নয়। জবাবে উত্তমটা বলুন। তখন দেখবেন যে ব্যক্তির সাথে আপনার শত্রæতা রয়েছে, সে আপনার অন্তরঙ্গবন্ধু হয়ে যাবে। আর এমন ব্যবহার তারাই পাবে যারা ধৈর্য ধারণকারী। (সুরা হামিম সেজদাহ, আয়াত ৩৪-৩৫)

তায়েফবাসীর আক্রমণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রক্তাক্ত দিশেহারা ব্যকুলচিত্তে পাহাড়ের পাদদেশে অসহায় অবস্থায় বসেছিলেন, তখন হযরত জিব্রাইল আলাইহিস সালাম আয়াত নিয়ে এসেছিলেন-

فَاصْبِرْ صَبْرًا جَمِيلًا

অর্থ: (হে নবী) ধৈর্য ধরুন, চরম ধৈর্য। (সুরা মা’রিজ, আয়াত ০৫)

আয়াতের আলোকে বলা যায়, ধৈর্য মুমিন জীবনের অপরিহার্য গুণ। হাদিস শরিফেও ধৈর্যের ব্যাপারে অনেক আছে-

وَعَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَ مَا يُصِيبُ الْمُسْلِمَ مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا ، إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ

অর্থ : হজরত আবু হুরায়রা রাযিআল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- মুসলমানদের ওপর যেসব বালা মুসিবত যাতনা রোগ ব্যাধি উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠা দুশ্চিন্তা কষ্ট পেরেশানি আপতিত হয়, এমনকি তার গায়ে যে কাটা বিঁধে; এসবের জন্যও তাকে আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করে দিবেন। (বুখারি, আয়াত হাদিস নং ৫৩১৮)

عَنِ الزُّهْرِىِّ قَالَ أَخْبَرَنِى عُرْوَةُ بْنُ الزُّبَيْرِ أَنَّ عَائِشَةَ - رضى الله عنها - زَوْجَ النَّبِىِّ - صلى الله عليه وسلم - قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم - مَا مِنْ مُصِيبَةٍ تُصِيبُ الْمُسْلِمَ إِلاَّ كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا عَنْهُ ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا

অর্থ : হজরত আয়েশা রাযিআল্লাহ আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- মুসলমানের ওপর যে দুঃখ কষ্ট বালা মুসিবত আসে, এমন কি তার গায়ে কাটা বিঁধে এর ফলেও আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। (বুখারি, হাদীস নং ৫৩১৭)


 
উল্লিখিত কোরআন ও হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, মুসলমানেরা বিপদে পতিত হবেই। আর বিপদ মোকাবেলা করতে হবে ধৈর্যের মাধ্যমে। যদি ধৈর্য ধারণ না করতে পারে, তাহলে কোরআন হাদীসে সবরকারীদের যে ফজিলতের কথা বলা হয়েছে, ওই ফজিলত তাদের ভাগ্যে জুটবেনা। আল্লাহ পাক সকল মুসলমানদের ধৈর্য গুণ দ্বারা ভূষিত করুন। আমিন

ঝালকাঠি আজকাল