• বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩১

  • || ০৭ জ্বিলকদ ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

উন্নয়নের মহাসড়কে পার্বত্য অঞ্চল

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২৩  

আজ ২ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৬ বছর পূর্তি। ২৬ বছর আগে বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএস) মধ্যে দীর্ঘ দু’যুগের বেশি সময় ধরে সশস্ত্র আন্দোলন চলার পর ঐতিহাসিক এ চুক্তি সম্পাদিত হয়।

১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এবং পার্বত্য অধিবাসীর পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার (সন্তু লারমা) মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। যা বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। চুক্তির পর ১৯৯৮ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি খাগড়াছড়ি স্টেডিয়ামে তত্কালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে শান্তিবাহিনীর শীর্ষ গেরিলা নেতা জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)  তার সহযোগীরা অস্ত্রসহ সমর্পণের মধ্য দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ প্রদান করে।

পার্বত্য চুক্তির সর্বমোট ৭২টি ধারা রয়েছে। চুক্তির ৭২টি ধারার মধ্যে ইতিমধ্যে ৬৮টি ধারা বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এতে বদলে গেছে পাহাড়ের চিত্র। এখন উন্নয়নের মহাসড়কে পার্বত্য অঞ্চল। বিশেষ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। বড় বড় ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো। হাতেই কাছে হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেশের ৬১ জেলা যেমন এগিয়ে যাচ্ছে এর সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে পার্বত্য তিন জেলা। গহীন অরণ্যেও ৯টি মোবাইল কোম্পানির নেটওয়ার্ক পাহাড়বাসীর জন্য এক অনন্য প্রাপ্তি। এছাড়া সরকারী বিভিন্ন খাতে যেমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন রয়েছে তেমনি বেসরকারী পর্যায়েও থেমে নেই। সরকার পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে আন্তরিক হলেও অপর পক্ষ মাত্র দুটি ধারা এখনো বাস্তবায়ন করেনি। ধারা দুটি হলো সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যের তালিকা এবং অস্ত্র জমা দেওয়া। বর্তমানে জেএসএস (মূল), জেএসএম (সংস্কার), ইউপিডিএফ (মূল), ইউপিডিএফ (সংস্কার)-এই চারটি সংগঠন ব্যাপক চাঁদাবাজিতে লিপ্ত। এদের আবার রয়েছে কিছু সংখ্যক ‘বি’ টিম। পাহাড়ে যত খুন, ধর্ষণসহ নানা অঘটন ঘটে সব কিছু মূলে রয়েছে এই চারটি সংস্কার। বিশেষ করে জেএসএস (মূল) এর প্রধান সন্তু লারমার চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণসহ নানা অত্যাচারে পাহাড়ি-বাঙালিরা অতিষ্ঠ। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ দুদকে করা হয়েছে। সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে পাহাড়ি-বাঙালিরা এখন ঐক্যবদ্ধ। ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি পার্বত্যাঞ্চলে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রশাসনের কর্মকর্তা ও পাহাড়ি-বাঙালি সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন।

পাহাড়ি-বাঙালিরা অভিন্ন সুরে বলেন, আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ ও আলোর পথে অগ্রসর হচ্ছি। উন্নয়নের মহাসড়কে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আমরা আর অন্ধকারে ফিরে যেতে চাই না। আগে অসুস্থ হলে হাসপাতালে যেতে রওনা হলে একদিন লেগে যেত। এখন ১০/১৫ মিনিটের মধ্যে হাসপাতাল যেতে পারি। পার্বত্য শান্তির বিরোধিতাকারী চাঁদাবাজদের মোড়লগিরি ও গডফাদারগিরি আর মানতে চাই না। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। বাজারে একটা মুরগি নিয়ে গেলেও চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা তোলার জন্য পাড়া-মহল্লায়, হাট-বাজারে তাদের নিয়োজিত অস্ত্রধারী সদস্য রয়েছে। সন্তু লারমাসহ চারটি সংগঠনের নেতাদের ছেলেমেয়েরা বিদেশে পড়ালেখা করেন। তারা বিলাসি জীবন-যাপন করেন। পাহাড়ি-বাঙালিরা বলেন, সন্তু লারমার সমর্থন করেন দেশের কথিত বুদ্ধিজীবী ও রাজনৈতিক সংগঠন। তারাও কোটি কোটি টাকার চাঁদার ভাগ পান। এসব বুদ্ধিজীবীদেরও এনজিওগুলোর অনুমোদন দেয় পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার। এ কারণে তার সব চাহিদা ফুলফিল করেন কথিত বুদ্ধিজীবীরা। তারাও বিদেশে টাকা পাচার করেন। তবে এসব চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী আর হবে না। চাঁদাবাজ ও তাদের সমর্থকদের আর পার্বত্যাঞ্চলে ঢুকতে দেওয়া হবে না। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশ চাই, সংঘাতের বাংলাদেশ চাই না। পাহাড়ি-বাঙালিরা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, জনগণের সব ধরনের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সেনবাহিনীর সদস্যরা। পাড়া-মহল্লায় মেডিক্যাল টিম গঠন করে বিনামূল্যে চিকিত্সা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নিরাপত্তার পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদের কাছে সংবাদ পৌঁছে দেরি, কিন্তু তাদের সেবা পেতে দেরি হয় না। ঝড়-বৃষ্টি, তুফান সব সময় তাদের কাছে পাই।

দুর্গম পাহাড়ের বাসিন্দাদের কেউ অসুস্থ হলে মাইলের পর মাইল হেঁটে অথবা রোগীকে কাঁধে তুলে নিতে হতো নিকটস্থ হাসপাতাল বা চিকিত্সকের কাছে। নিকটস্থ হাসপাতাল মানে সেটি অন্তত ১০-১৫ কিলোমিটার দূরে। দুর্গম সেই পাহাড়ে পায়ে হেঁটে চলাই ছিল যাতায়াতের একমাত্র ব্যবস্থা। তবে পাহাড়ের সে চিত্র বদলে গেছে। এখন আর রোগীকে পায়ে হেঁটে যেতে হয় না বা কাঁধেও তুলতে হয় না। বরং চান্দের গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খুব সহজেই চিকিত্সকের কাছে নেওয়া যায়। এতে করে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর একদিকে যেমন দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে, অন্যদিকে অর্থনৈতিকভাবেও লাভবান হচ্ছেন তারা। পার্বত্য চট্টগ্রামে সীমান্ত সড়ক প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৩৬ কিলোমিটার। ২০৩৬ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত প্রথম ধাপে ৩১৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলে এটি হবে দীর্ঘ সড়ক নেটওয়ার্ক। এরই মধ্যে খাগড়াছড়ির বেতলিং, রাঙ্গামাটির মাঝিরপাড়া ও সাইচলে পাহাড়ের কোলঘেঁষে সীমান্ত সড়ক নির্মাণ শেষ হয়েছে সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে। এটিই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে উঁচু সড়ক নির্মাণের কীর্তি। দুই-তিন দিনের গন্তব্যে এখন কয়েক ঘণ্টাতেই যাওয়া-আসা করা যায়। পাহাড়ি জনপদের মানুষগুলোর কাছে এটি স্বপ্নের মতো। মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, দেখতে পিকআপের মতো যাত্রীবাহী চান্দের গাড়ি, বাস, মাইক্রোবাস ও জিপ নিয়মিত চলাচল করছে সড়কগুলোতে

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত সুপ্রদীপ চাকমা বলেন, তিন পার্বত্য জেলায় স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। আগে শিক্ষক নিয়োগ করতে হলে মেট্রিক পাশ নিতে হতো। কারণ উচ্চ শিক্ষিত মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না। এখন উচ্চ শিক্ষিত লোক পাওয়া যায় প্রচুর। অর্থাত্ শিক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কৃষিসহ সব কিছুতে উন্নয়নের ছোয়া লেগেছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তির কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। সেনাবহিনীর নেতৃত্বে অন্যান্য বাহিনী সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অং সুই প্রো চৌধুরী বলেন, পার্বত্য শান্তি চুক্তির কারণে ৫০০ শয্যার মেডিক্যাল কলেজ পেয়েছে এলাকাবাসী। এখানে অসাধারণ উন্নয়ন হয়েছে। তবে একটি গ্রুপ প্রথম থেকে বিরোধিতা করে আছে। তারা পার্বত্য শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন চান না। অবশ্য সাধারণ মানুষ চাঁদাবাজির প্রতি চরম ঘৃণা জানিয়েছে। তারা অন্তিতে বসবাস করছে। ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষিত হচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যেভাবে উন্নয়ন করছেন, এসব চাঁদাবাজরা এই উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে যাবে। জেএসএস এর সঙ্গে সরকারবিরোধী কিছু রাজনৈতিক সংগঠন সহিংস ঘটনা ও চাঁদাবাজি অব্যাহত রেখেছে।

রাঙ্গামাটি জেলার এসপি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জেলায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। পাহাড়ি-বাঙালিরা পুলিশকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করছে। এখানে এমন অবস্থা বিরাজ করছে অপরাধ করেও কারোর পার পাওয়ার সুযোগ নেই। আমরা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রেখেছি।

এসপি বান্দরবন সৈকত শাহীন বলেন, বান্দরবানের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শতভাগ নিয়ন্ত্রণে। এখানকার পরিবেশ শান্ত। পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজ করছে।

খাগড়াছড়ির এসপি মুক্তাধর বলেন, খাগড়াছড়িতে এখন চমত্কার পরিবেশ বিরাজ করছে। আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে আমরা অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি।

সংসদ সদস্য দিপঙ্কর তালুকদার বলেন, নিজেদের স্বার্থে একটি গোষ্ঠী চুক্তির বিরোধিতা করছে। তার কর্তৃত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এখানে এখন সম্প্রীতি বিরাজ করছে। বর্তমান সরকার যে উন্নয়ন করছে, তাতে তারা টিকা থাকতে পারবে না। একক রাজত্ব চায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তার কোন সমন্বয় নেই। আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। তারপরও আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করিনি। আমরা সম্প্রীতি বজায় রাখছি।

ঝালকাঠি আজকাল