• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

সরকারি গমের বস্তায় মিললো বালু-পাথর, আটক ৩

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

চুয়াডাঙ্গায় সরকারি গমের বস্তায় বালু ও পাথর পাওয়ার অভিযোগে তিন ট্রাক চালককে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, জোনাকি পরিবহনের দু’টি ট্রাকে ১৩ বস্তা বালু, সরকার এন্টারপ্রাইজের দু’টি ট্রাকে ৯ বস্তা বালু এবং সানরাইজ জুট ট্রেডার্সের দু’টি ট্রাকে ছয় বস্তা বালু ও একটি বস্তায় পাথরের বড় বড় ছয়টি টুকরা পাওয়া যায়।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) খুলনা ৪ নম্বর ঘাট থেকে ট্রাকে চুয়াডাঙ্গা সদর খাদ্য অফিসের জন্য বরাদ্দ করা গমের চালানে বালু ও পাথর পাওয়ার এ ঘটনা ঘটে।

খাদ্য বিভাগের দাবি, পরিবহনের সময় বস্তা অদল-বদল হতে পারে। বিষয়টি তদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গায় কমিটি গঠন করা হয়েছে।

খুলনা খাদ্য বিভাগের চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক মশিউর রহমান জানান,চুয়াডাঙ্গায় পাঠানোর পর ট্রাকে গমের জায়গায় বালু ও পাথর পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘাট থেকে এ ধরনের অনিয়মের কোনো সুযোগ নেই। এখান থেকে বের হওয়ার পর পথে সংশ্লিষ্টরা পাল্টাপাল্টি করে থাকতে পারে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গম খালাসের কাজ শুরু হলে তিন ট্রাকের চালক সটকে পড়ে। খালাসের কাজ শেষে পাঁচটি ট্রাকে ৩ টন ১৫০ কেজি গমের ঘাটতি পাওয়া গেছে। এ সময় খাদ্য বিভাগ বাকি তিন চালককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা শহিদুল হক জানান, সোমবার প্রথমে সরকার এন্টারপ্রাইজের একটি ও জোনাকী পরিবহনের দু’টি ট্রাক খালাস করা হয়। এরই ফাঁকে সরকার এন্টারপ্রাইজের অন্য একটি ও সানরাইজ জুট ট্রেডার্সে দুটি ট্রাকের চালক সরে পড়ে। এ কারণে ওই তিন ট্রাকের গম খালাসে বিঘ্ন ঘটে। তবে ঘটনার পর ঠিকাদারদের ডাকা হলেও তারা সাড়া দেননি। ফলে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওই তিনটি ট্রাকের গম খালাস করা হবে।

তিনি জানান, খালাস হওয়া পাঁচটি ট্রাকে ৩ টন ১৫০ কেজি গম কম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে সরকার এন্টারপ্রাইজের একটিতে ১৬ টন ৬৮৬ কেজি গম থাকার কথা, কিন্তু খালাসে পাওয়া গেছে ১৫ টন ৮৯৮ কেজি, ঘাটতি ৭৮৮ কেজি। জোনাকি পরিবহনের একটিতে ১৬ টন ৭৩১ কেজি গম থাকা কথা, কিন্তু খালাসে পাওয়া গেছে ১৫ টন ৭৯০ কেজি, ঘাটতি ৯৪১ কেজি। জোনাকি পরিবহনের অন্য একটিতে ১৬ টন ৬৮৬ কেজি গম থাকার কথা, কিন্তু খালাসে পাওয়া গেছে ১৬ টন ১০৮ কেজি, ঘাটতি ৪৪০ কেজি। আরও দুটি ট্রাকে যথাক্রমে ৫০৩ কেজি ও ৪৭৮ কেজি গম কম পাওয়া গেছে।

গমগুলোর পরিবহনের অন্যতম ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জোনাকি পরিবহন। তাদের দুই চালক নান্নু ও আসাদ দাবি করেন, তারা বালু এবং পাথর এনেছেন ঠিকই, তবে গম ওজনে কম দেওয়ার জন্য নয়। গাড়ি অকেজো হলে কখনো কখনো বালুর বস্তার প্রয়োজন হয়। সেইসঙ্গে বেশিরভাগ সময় বালু ও পাথর পরিবহন করায় তাদের গাড়িতে এসব পণ্যের বস্তা থাকে। অনেক সময় ওজনের কাজেও লাগে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক একেএম শহিদুল হক বলেন, ‌৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে গম ওজন করে ট্রাক থেকে নামানো শুরু হয়। এ সময় ২৮ বস্তা বালু ও এক বস্তা পাথর পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ওজন দিয়ে এসব গম গুদামে তোলা হয়। ট্রাক চালকরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাক থেকে বস্তা তালিকা ও ওজন করে খালাসের কাজ চলছে। খালাস হওয়ার পর জানা যাবে কতো বস্তা গম ঠিকঠাক আছে।

চুয়াডাঙ্গা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অনুসন্ধানে আলমডাঙ্গা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হামিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী এক কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গুদামে আসার পথে ট্রাক থেকে গম নামিয়ে ওজন ঠিক রাখতে চালকরা বালু আর পাথর দিয়ে তা সমন্বয়ের চেষ্টা করেন বলেও ধারণা করছেন তিনি।

খুলনা বিভাগীয় খাদ্য কর্মকর্তা আব্দুস সালাম জানান, এ বিষয়ে তিনি এখনো লিখিত অভিযোগ পাননি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

খুলনার চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক (খাদ্য) শেখ মশিউর রহমান বলেন, চুয়াডাঙ্গায় বরাদ্দের ১০০ টন গম ৩ ঠিকাদারের মাধ্যমে ট্রাকযোগে পাঠানো হয়। এতে ঘাটতি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। চুক্তি অনুযায়ী ওই পরিমাণ গমই বুঝিয়ে দিতে হবে। এর দায় ঠিকাদারকেই নিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা অফিস সেগুলো বুঝে নেবে।

ঝালকাঠি আজকাল