জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুতদের টেকসই জীবিকার কর্মপরিকল্পনা হচ্ছে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুতদের জন্য সরকার টেকসই জীবিকার কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন।

তিনি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে স্থানীয় জীবন-জীবিকার ওপর প্রভাব এবং কোন কোন প্রেক্ষাপটে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী দূরবর্তী এলাকায় অভিগমন করে, সেসব বিষয়ে জানতে গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকার। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের আওতায় গবেষণালব্ধ জ্ঞান, স্থানীয় অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং স্থানীয়ভাবে অভিযোজনের সুযোগ করে- এমন একটি কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে।

এ প্রকল্পে পাওয়া সুপারিশের মাধ্যমে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে এবং এই গবেষণা কার্যক্রমের ফলাফল জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় অবদান রাখবে বলেও জানান মন্ত্রী।

রোববার (২৯ জানুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের মিলনায়তনে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুতদের স্থানীয়ভাবে অভিযোজনের জন্য টেকসই জীবিকার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত সেমিনারে পরিবেশমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় বর্তমান সরকার জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এ কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট কর্তৃক মোট ৮৫১টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় জনগণ সামাজিকভাবে এর সুফল ভোগ করছে। এসব প্রকল্পের মধ্যে তিনটি প্রকল্প জাতীয় পর্যায়ে ও একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পুরস্কার পেয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে দেশের ভৌগলিক চিত্র। ক্রমশ ঝুঁকির মুখে পড়ছে উপকূলীয় অঞ্চল ও নদীকেন্দ্রিক জীবিকা। ২০১৮ সালের এক গবেষণা অনুযায়ী নদীভাঙনের কবলে প্রতি ১০০ জনে ১ দশমিক ৬ জন পুরুষ ও দশমিক ৯ জন নারী শহরমুখী হচ্ছেন। সপরিবারে শহরমুখী হওয়ার সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। প্রতিনিয়ত নগরায়ণ, কৃষিজমিতে শিল্পায়ন ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মাটিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে ক্রমশ কমছে কৃষিকাজ। যে কারণে এই পেশার সঙ্গে সম্পৃক্ত বিশাল একটি অংশ দ্রুত শহরমুখী হচ্ছে জীবিকার তাগিদে।

শহরমুখী এ অভিগমন রোধ করে স্থানীয়ভাবে তাদের জীবিকার ব্যবস্থা গ্রহণে সরকার কাজ করবে বলে জানান পরিবেশমন্ত্রী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সেমিনারে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুন নাহার হেনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. নুরুল ইসলাম নাজেম প্রমুখ।

প্রকল্পের সংক্ষিপ্ত ফলাফল উপস্থাপন করেন ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিরা সেমিনারে বক্তব্য রাখেন।