• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

বাবুনগরী-মামুনুলের গ্রেফতার চায় ৬০ সংগঠন

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২ ডিসেম্বর ২০২০  

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে কটূক্তিকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়েছে ৬০টি সংগঠনের সম্মিলিত মানববন্ধনে।

একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার বিকেল তিনটা থেকে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশের সড়কে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন হয়।

কর্মসূচির মূল দাবি ছিল- বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে কটূক্তিকারী হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার এবং জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক-সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

মানববন্ধনে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকার দক্ষিণের মেয়র হয়েছেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাহাজান খান, সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক আবেদ খান, ইতিহাসের অধ্যাপক, গবেষক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনে নেতারা।

সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছে ধর্মভিত্তিক বেশ কয়েকটি দল। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক হুমকি দিয়েছিলেন ভাস্কর্য নির্মাণ হলে তিনি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরের মতো পরিস্থিতি আবার তৈরি করবেন।

শুধু মামুনুল নয়, ভাস্কর্যবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন হেফাজতের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমও।

চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে আয়োজিত এক তাফসীরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে বাবুনগরী হুমকি দিয়ে বলেন, যে দলই ভাস্কর্য বসাক তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেয়া হবে’।

তাদের ভাস্কর্যবিরোধী এমন বক্তব্যের প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে। এর অংশ হিসেবেই রাজধানীতে বিশাল এই মানববন্ধন হলো।

কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল বলেন, ‘মামুনুল হককে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ তার জবাব দেবে। এর পরিণাম ভালো হবে না। দৃষ্টান্তমূলক পরিণামের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে একটি দেশ ও সংবিধান পেয়েছি। যার জন্ম না হলে স্বাধীন বাংলাদেশ হতো না সেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি শেখ মুজিবুর রহমান যে সংবিধান এনেছেন একটি বিশেষ সাম্প্রদায়িক শক্তি সেই সংবিধান বিনষ্ট করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। এরা কারা?

‘যারা স্বাধীনতা চায়নি। স্বাধীনতার পর এই ভাস্কর্য বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত হয়েছে। হঠাৎ করে এ ধরনের উক্তি কিসের লক্ষণ? কার ইঙ্গিতে হচ্ছে? এটা কারও ব্যক্তিগত খাম-খেয়ালি নাকি সুপরিকল্পিত সেটা ভালোভাবে ক্ষতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী মন্ত্রী অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর বলেন, যে ধর্মান্ধ অপশক্তি একাত্তরে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা চালিয়েছিল- সেই অপশক্তিই আজকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুঙ্কার ছুড়ছে।

আসাদুজ্জামান নূরের মতে, এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, মৌলবাদীরা আগেও ছিল, এখনো আছে। তারা শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে যেন ধর্মকে ব্যবহার করে অরাজকতা করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার ভাস্কর্য হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দিবে- এমন ঔদ্ধত্য দেখে আমি ক্রোধে রাজপথে নেমে এসেছি। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য জে এল ভৌমিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। আর তার ভাস্বর্য নিয়ে কথা বলছে তারাই- যারা স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, মানবতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। এটা বঙ্গবন্ধুর বাংলা। এখানে সব ধর্মের, সব জাতির মানুষ সমান অধিকার নিয়ে বাস করবে। এখানে কারও বাঁধা দিবার এখতিয়ার নেই। বঙ্গবন্ধুর ভাস্বর্য নিয়ে যারা কটূক্তি করেছে তাদের শাস্তি দাাবি করি আমরা।’

ঝালকাঠি আজকাল