• রোববার ০৫ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২২ ১৪৩১

  • || ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:

বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ যেন অগ্নিমশাল

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৬ ডিসেম্বর ২০২১  

রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে চেতনার অগ্নি মশাল হয়ে জ্বলছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধ। দেশের সাত বীরশ্রেষ্ঠের একজন তিনি। শহীদ হওয়ার পাশাপাশি সমাধি সৌধও যে একইস্থানে, তা ছিল অনেকের অজানা।

তবে সম্প্রতি সমাধি সৌধটি সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়ায় সাধারণ মানুষ সেখানে শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ পাচ্ছে। আর দুর্গম এলাকা হওয়ায় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করছে সেনাবাহিনী।

রাঙামাটি সদর থেকে নৌপথে দুর্গম নানিয়ারচর যাওয়ার সময় চোখে পড়বে কাপ্তাই লেকের ঠিক মাঝে ছোট্ট একটি টিলা। যেটি স্থানীয়ভাবে রউফ টিলা নামেই পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ টিলার নাম লেখা রয়েছে সোনার হরফে। টিলার গায়ে লেখা ‘তুমি দুর্জয় নির্ভীক এক মৃত্যুহীন প্রাণ- হে বীরশ্রেষ্ঠ তুমি অমর অতন্দ্র প্রহরী।’

কাছে যেতেই দেখা গেল বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আবদুর রউফের সমাধি সৌধ। মাথার ঠিক পাশেই উল্টো করে রাখা একটি প্রতীকী এসএমজি। নানা কাজে কাপ্তাই লেকে আসা দর্শনার্থীরা সম্মান জানান এ স্মৃতিসৌধে।

অভিনেতা জাহিদ হাসান বলেন, ট্রাভেলের জন্য যে একটা পাসপোর্ট পাই এবং সবসময় যে বলতে পারি আমি বাংলাদেশি এর জন্য এদের বড় অবদান। এটা অস্বীকার করার কোনো কিছু নেই। আর যেকোনো ক্ষেত্রে যখন আমি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড পাই এবং অন্যান্য জায়গায় আমি যাই- এসব অবদান তো উনাদের। এখন আমরা কতখানি মূল্যায়ন করছি বলেও প্রশ্ন রাখেন তিনি।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মহান মুক্তিযুদ্ধে এ কাপ্তাই লেকে মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পড়েছিল পাক বাহিনীর একটি টহল টিম। অনেকটা পরাজয়ের মতোই নিজেদের সৈন্যবল হারিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছিল তারা। পরবর্তীতে ২০ এপ্রিল শক্তি সঞ্চার করে বিশাল দলবল নিয়ে পাক বাহিনী হামলা চালায় মুক্তিবাহিনীর ওপর। মুক্তিযোদ্ধারা সমান তালে লড়ছিল। শেষ পর্যন্ত রণকৌশলগত কারণে মুক্তিবাহিনীর পিছিয়ে যাওয়া দলকে অক্ষত রাখতে একটি মেশিনগান নিয়ে একাই লড়ে যান মুন্সি আবদুর রউফ।

অকুতোভয় মুন্সি আবদুর রউফের মেশিনগানের প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনীও পিছু হটে। তবে দূর থেকে ছোড়া পাকবাহিনীর মর্টার শেলের আঘাতে শহীদ হন বীর সেনানী মুন্সি আবদুর রউফ। যুদ্ধক্ষেত্র এবং সমাধি সৌধটি বিজিবির পক্ষ থেকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী বলেন, রাঙামাটিবাসীর জন্য এটা গর্বের বিষয় যে বীরশ্রেষ্ঠ ৭ জনের মধ্যে একজনের সমাধি এখানে আছে। আমরা সেটার জন্য গর্ববোধ করি। সবাই মিলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা বলেন, আজকে তারা যদি জীবন উৎসর্গ করে না দিতেন তাহলে আমি আমার জায়গায় থাকতে পারতাম না। আজকে আমাদের দেশ স্বাধীন সার্বভৌমত্ব থাকতো না।  

এখন জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা জানাতে সরকারি কর্মকর্তারা ছুটে যান কাপ্তাই লেকের মাঝে গড়ে ওঠা মহান মুক্তিযুদ্ধে চেতনার মশাল বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আবদুর রউফের স্মৃতিসৌধে।

পার্বত্য জেলা রাঙামাটির জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এটাকে আরও বেশি বেশি করে প্রচার করতে চাই। আমাদের বীরশ্রেষ্ঠদের সমাধি যেখানে জনগণ যেন সেখানে আরও বেশি বেশি করে আসে এবং বীর সম্পর্কে জানবে আমরা সেটাই চাই।

রাঙামাটি জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মীর মোদদাছছের হোসেন বলেন, মুন্সি আবদুর রউফ নিজের জীবনকে যেভাবে তার সহকর্মীদের বাঁচানোর জন্য দান করেছেন, দেশের জন্য দান করেছেন তা জাতি কখনোই ভুলবে না।

মূলত রাঙামাটির যে কোনো স্থান থেকে নৌপথে এক ঘণ্টায় পৌঁছা যায় এ রউফ টিলায়। আর কাপ্তাই লেকে সেনাবাহিনীর টহল টিম নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় নির্ভয়ে এ সমাধিসৌধে সম্মান জানাতে পারছে দর্শনার্থীরা।

ঝালকাঠি আজকাল