• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

শেখ হাসিনাকে নরেন্দ্র মোদির ‘ঈদের চিঠি’ ও ভারতে রেকর্ড পর্যটক

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল ২০২৪  

ঈদুল ফিতর আর বাংলা নববর্ষের প্রায় এক সপ্তাহব্যাপী ছুটিতে ভারতে বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রবেশের পুরনো সব নজির ভেঙে গেল বলা চলে। ভারতের ইমিগ্রেশন দফতর জানাচ্ছে, গত এক সপ্তাহে (৮-১৪ এপ্রিল) শুধু বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়েই স্থলপথে গড়ে রোজ ১০ থেকে ১২ হাজার বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে প্রবেশ করেছেন যা একটি সর্বকালীন রেকর্ড! 

এছাড়া আকাশপথে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই বা চেন্নাইয়ের ফ্লাইটে কিংবা পেট্রাপোল ছাড়াও হিলি, ডাউকি বা আখাউড়ার মতো অন্য স্থলসীমান্তগুলো দিয়েও প্রতিদিন ভারতে এসেছেন আরও কয়েক হাজার বাংলাদেশি। সব মিলিয়ে সড়ক, বিমান ও রেলপথে শুধু এই দিন সাতেকের মধ্যেই প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পর্যটন, চিকিৎসা বা কেনাকাটা-সহ নানা কাজে তারা সারা বছরই ভারতে আসেন, কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা বলছেন গত সাত দিনে যেরকম ব্যাপক হারে তারা এসেছেন তা আগে কখনওই দেখা যায়নি।

image (1)

বাংলাদেশে এক শ্রেণির অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ও কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মী যখন কথিত ‘ইন্ডিয়া আউট’ প্রচারণা চালাচ্ছেন ও ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিচ্ছেন, সেই পটভূমিতে এই পরিসংখ্যান খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

দিল্লিতে ভারতের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তার কথায়, ‘লম্বা এই ছুটি আর উৎসবের মৌসুমে বাংলাদেশিদের ভারতে আসার ঢল এটাই প্রমাণ করে যে দুই দেশের মানুষে-মানুষে সম্পর্ক (পিপল-টু-পিপল কনট্যাক্ট) পুরোপুরি অটুট রয়েছে, বরং তা দিনে দিনে নতুন উচ্চতায় আরোহণ করছে।’

প্রসঙ্গত, এবারের ঈদের ঠিক আগেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। ওই চিঠিতে তিনি ভারতের সাধারণ মানুষ ও সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণকে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। গত ১০ এপ্রিল (ঈদের ঠিক আগের দিন) ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে ‘এক্স’ প্ল্যাটফর্মে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্ট করে নরেন্দ্র মোদির এই চিঠির কথা প্রকাশ করা হয়।

image

ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোনও ধর্মীয় উৎসব উপলক্ষে বাইরের কোনও দেশের নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন, এটা আসলে খুবই বিরল একটা ঘটনা। কিন্তু বাংলাদেশ ও সে দেশের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের জন্য ভারত এই ব্যতিক্রমী পদক্ষেপ নিতেও দ্বিধা করেননি। নির্বাচনি প্রচারে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী মোদি তুমুল ব্যস্ত, তারপরেও এর জন্য আলাদা করে সময় বের করতেও তার অসুবিধা হয়নি। 

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা এদিন বলেন, ‘আসলে এবারে ঈদের অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে ভিসার আবেদনের সংখ্যা যেভাবে বেড়ে গিয়েছিল, তাতে আমরা বুঝতেই পারছিলাম ঈদ আর নববর্ষের জোড়া ছুটিতে পর্যটকদের ঢল নামবে।’

‘ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীতে আমাদের মিশনগুলোর কর্মকর্তারা রাতদিন এক করে এই সব আবেদন প্রসেস করেছেন এবং এত অল্প সময়ের মধ্যে এরকম হাজার হাজার ভিসা বোধহয় আমরা আগে কখনও দিইনি।’ 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখা নরেন্দ্র মোদির চিঠিকে দুই দেশের মানুষের মধ্যে সেই ‘পারস্পরিক ভালোবাসা আর সম্মানের স্বীকৃতি’ বলেই বর্ণনা করছেন তিনি।

বস্তুত ভারতের বাইরে যে সব দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি বিদেশি পর্যটক ভারতে আসেন, কোভিডের আগেই সেই তালিকায় আমেরিকাকে হঠিয়ে শীর্ষস্থানটি দখল করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৯ সালে মোটামুটিভাবে ১৮ থেকে ১৯ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে এসেছিলেন, যাদের মধ্যে অনেকেই আবার একাধিকবার।

২০২০ ও ২০২১ সালে কোভিড মহামারি ও লকডাউনের কারণে সেই সংখ্যায় কিছুটা ভাটা পড়লেও ২০২২ থেকেই আবার বাংলাদেশিদের ভারতে আসার স্রোত শুরু হয়ে যায় ও গত বছরের মধ্যেই (২০২৩) তা আবার প্রাক-কোভিড পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।

যদি ধরে নেওয়া যায়, এই বছরেও মোটামুটি ১৯ লাখের মতো বাংলাদেশি নাগরিক ভারতে আসবেন তাহলে তার মধ্যে প্রায় ৮ শতাংশই (মোট দেড় লক্ষের মতো) এসেছেন শুধু গত এক সপ্তাহে – যে ঘটনা কার্যত নজিরবিহীন বলা চলে।

বাংলাদেশি পর্যটকরা চিরকালই দিল্লি-আগ্রা বা রাজস্থানের আজমির শরিফে যান, আজকাল কাশ্মির বা লাদাখ, দার্জিলিং কিংবা সিকিমও তাদের কাছে খুবই প্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু সংখ্যার বিচারে দেখলে – এখনও তাদের কাছে ভারতের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গন্তব্য অবশ্যই কলকাতা।

আর কলকাতার নিউমার্কেট ও সংলগ্ন এলাকা, সদর স্ট্রিট ও আশেপাশের থাকা-খাওয়ার হোটেলগুলোও তাদের কাছে বিশেষ করে প্রিয়।

unnamed

কলকাতার সদর স্ট্রিট এলাকার এক হোটেল মালিক জানাচ্ছেন, ‘গত বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের এলাকার সবগুলো হোটেলই পুরোপুরি সোল্ড আউট। আর এর মধ্যে ৯০ শতাংশ অকুপেন্সিই বাংলাদেশিদের।’

মধ্য কলকাতার তিনতারা বা মাঝারি হোটেলগুলোই শুধু নয়, ওবেরয় গ্র্যান্ড বা পিয়ারলেস ইনের মতো অভিজাত হোটেলগুলোতেও এই ক’দিন ধরে ছিল প্রধানত বাংলাদেশি নাগরিকদেরই পদচারণা।

এর পাশাপাশি তাজ বেঙ্গল, আইটিসি রয়্যাল বেঙ্গল, সোনার বাংলা বা হায়াতের মতো শহরের পাঁচতারা হোটেলগুলোতেও বাংলাদেশি নাগরিকদের রিজার্ভেশনের হার চলতি বছরে অন্তত দ্বিগুণ হয়েছে বলে কলকাতার হোটেল ও হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে জানা যাচ্ছে। 

‘দেখুন, ঢাকা থেকে আমাদের পুরো পরিবার নিয়ে সাত দিনের ছুটিতে ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়া যাওয়ার এখনও যা খরচ– তার অর্ধেক খরচে কলকাতায় পাঁচ তারা হোটেলের আয়েসে কাটিয়ে যেতে পারি। সঙ্গে সস্তায় কেনাকাটার সুযোগ তো আছেই। তো কেন আমরা কলকাতায় আসব না বলতে পারেন?’, সোমবার কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় ফেরার ফ্লাইট ধরার আগে বলছিলেন বাংলোদেশের একজন প্রতিষ্ঠিত গারমেন্ট ব্যবসায়ী, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে চাইলেন না। 

 

ঝালকাঠি আজকাল