• সোমবার ০৬ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

  • || ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী

অবক্ষয় নারীত্বের অবমাননা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১ মার্চ ২০২০  

নারীর কোমল ও সুহৃদ আচরণ দেখেই অভ্যস্ত সমাজ। সমাজের প্রত্যাশা নারীর আচরণে থাকবে স্নেহ, মমতা ও ভালোবাসা; অপরাধ ও অপরাধপ্রবণতা থেকে দূরে থাকবে সে। আবহমানকাল থেকে নারীর মাতৃরূপ দেখে আসছে তারা। নারীর ব্যাপারে পৃথিবীর প্রায় সব জাতির অভিন্ন অভিব্যক্তি হলো ‘নারী মায়ের জাতি’, ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অপরাধজগতে নারীর আনাগোনা বাড়ছে। যা সমাজের সচেতন মহলকে উদ্বিগ্ন করছে।

 

বাড়ছে নারীর অপরাধপ্রবণতা

সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যাচ্ছে, নারীরা মাদক সেবন, ব্যবসা ও বিতরণ, জাল টাকা তৈরি, শিশু ও মানবপাচার, উগ্র মতবাদের প্রচার, অস্ত্র বহন, চুরি, অপহরণ, ছিনতাই, যৌন আবেদনের মাধ্যমে প্রতারণা, দেহ ব্যবসা ইত্যাদি অপরাধে সক্রিয়। পরকীয়া প্রেম এবং এর সূত্র ধরে খুনের ঘটনায় নারীর অংশগ্রহণ আতঙ্কের পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, নারী এখন শুধু সহযোগীর ভূমিকায় নেই; বিভিন্ন অপরাধচক্রের নেতৃত্বও দিচ্ছে তারা। (বিস্তারিত দেখুন : দৈনিক যুগান্তর, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭)

নারী ভদ্র, শিষ্ট ও অনুগত—এই বিশ্বাস ও মূল্যবোধের বিপরীতে নারীর অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠার পেছনে সমাজবিজ্ঞানীরা পারিবারিক বন্ধন শিথিল হওয়া, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, উচ্চাশা ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অবাধ সুযোগকে দায়ী করেন। ইসলামী স্কলাররা এর সঙ্গে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, ধর্মীয় জ্ঞান ও মূল্যবোধের চর্চার অভাব, বস্তুবাদী শিক্ষা ও সমাজব্যবস্থা এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে ইসলামী অনুশাসনের অভাব যুক্ত করেন। তারা নারীসমাজের এই অবক্ষয় রোধে শিশুর প্রতিপালনে যত্নশীল হওয়া, শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার ওপর জোর দেওয়া, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ সীমিত করা, পারিবারিক ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় করা এবং আইনের শাসন ও প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন।

 

নারীর অবক্ষয়ে ভয় বেশি

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, ‘তুমি আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে একটি শিক্ষিত জাতি দেব।’ তাঁর যুগান্তকারী এই বাণী থেকে আদর্শ জাতি গঠনে নারীর ভূমিকা ও অবদান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সুতরাং এটাও বলা যায়, নারীর অবক্ষয় ও বিপর্যয় জাতিকে ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে ফেলে দেয়। মহানবী (সা.)-এর বক্তব্যেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তিনি একদিকে যেমন বলেছেন, ‘পৃথিবী ক্ষণস্থায়ী উপভোগ্য বিষয়। আর সর্বোত্তম তৃপ্তিকর বিষয় হলো সৎ স্ত্রী।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭১৫)

তেমনি রাসুলুল্লাহ (সা.) নারীর অবক্ষয়ের ব্যাপারে সাবধান করে বলেন, ‘পার্থিব জীবনের ব্যাপারে সতর্ক হও এবং নারীদের ব্যাপারে সতর্ক হও। কেননা বনি ইসরাঈলের প্রথম বিশৃঙ্খলা ছিল নারীকেন্দ্রিক।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৪২)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার পরে পুরুষের জন্য নারীঘটিত ফিতনার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর কিছু ছেড়ে যাচ্ছি না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৯৬)

এসব হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় নারীর অপরাধপ্রবণতা সমাজের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এতে সমাজ বেশি প্রভাবিত হয়।

 

পরিবার রক্ষা করো

শিশুর সামাজিকীকরণ ও প্রতিপালনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান পরিবার। পারিবারিক শিক্ষা ও আদর্শ শিশুর ভবিষ্যতের জীবন নির্ধারণ করে। আধুনিক জীবনব্যবস্থা পারিবারিক বন্ধন হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে। কথিত ব্যক্তিস্বাধীনতা, প্রযুক্তিনির্ভর ‘মিডনাইট কালচার’ পরিবারের সদস্যকে পরস্পর থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। কন্যাসন্তানের প্রতিপালনে মুসলিম সমাজের যে রক্ষণশীলতা ছিল এবং সমাজে শালীন ও মার্জিত চলাফেরায় যে বাধ্যবাধকতা ছিল তাও বিলুপ্ত হচ্ছে দিন দিন। ফলে নারীরা সহজেই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। নারীর এই বিপথগামিতা রোধ করতে পারিবারিক অনুশাসন রক্ষা করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের এবং তোমাদের পরিবারকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। ...’ (সুরা : আত-তাহরিম, আয়াত : ৬)

 

ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার বিকল্প নেই

সন্তান ছেলে হোক বা মেয়ে তার জন্য ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করা আবশ্যক। ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া বেড়ে ওঠা মানুষের পক্ষে অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া সহজ। আর তা শুরু করতে হবে পরিবার থেকেই। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘সন্তানকে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। কেননা তুমি এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। তুমি তাকে কতটা শিষ্টাচার শিখিয়েছ এবং তাকে কী শিক্ষা দিয়েছ? আর সে তোমার প্রতি তার আনুগত্য ও সহযোগিতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ৪৬৯১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘(ইসলামী) জ্ঞান অর্জন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ২২৪)

 

মোহের লাগাম টেনে ধরো

অপরাধজগতে পা দেওয়া নারীদের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় তাদের বেশির ভাগ ভোগ-বিলাসিতার চাহিদা মেটাতেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। অনিয়ন্ত্রিত লিপ্সা তাদের সম্মান ও সম্ভ্রমের প্রতি ভ্রুক্ষেপহীন করে তুলেছে। অনিয়ন্ত্রিত বিলাসী জীবনের মোহ ইসলাম টেনে ধরার নির্দেশ দিয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল।’ (কানজুল উম্মাল, হাদিস : ৬১১৪)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, এটা এমন ভালোবাসা যা পাপ কাজে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। যেমন জুলুম-অত্যাচার, মিথ্যা, অশ্লীলতা। অর্থ ও ক্ষমতার মোহও এই হাদিসের অন্তর্ভুক্ত। (মাজমুআতুল ফাতাওয়া : ১১/৬৩)

 

সবাই মিলে বাঁচো

ইসলামী সমাজব্যবস্থায় জীবনের ধারণা সামষ্টিক। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসলিম উম্মাহকে একটি শরীরের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা, দয়ার্দ্রতা ও সহানুভূতির দিক থেকে মুমিনরা একটি দেহের মতো; যখন তার একটি অঙ্গ আক্রান্ত হয় তখন তার সব দেহ ডেকে আনে তাপ ও অনিদ্রা।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৮০)

সামষ্টিক এই ধারণা থেকেই ইসলাম সমাজে ভালো কাজের চর্চা ও মন্দ কাজের প্রতি ঘৃণা তৈরির নির্দেশ দিয়েছে। সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষায় সামাজিক অনুশাসনের কথা বলেছে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি—যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্য। তোমরা সৎ কাজে আদেশ করবে, অসৎ কাজে নিষেধ করবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান আনবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১১০)

 

জীবনে সংযত হও

ইসলাম নারী-পুরুষ উভয়কে শালীন ও সংযত জীবনযাপনের নির্দেশ দিয়েছে। তবে নারীর অবক্ষয়ে যেহেতু সন্তান ও পরিবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সামাজিক সংকট প্রকট হয়, তাই ইসলাম নারীকে জীবনযাপনে বেশি সংযত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। যেন তার অসতর্কতা অন্যের স্খলনের কারণ না হয়। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে তোমরা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না, যাতে যার অন্তরে ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয়। তোমরা ন্যায়সংগতভাবে কথা বলো। তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করো এবং জাহেলি যুগের নারীদের মতো নিজেদের প্রদর্শন করবে না। ...’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৩২-৩৩)

মুমিন নারীর চলাফেরা কেমন হবে তার একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরে বলেন, ‘তাদের একজন এলো—যে সলজ্জ চলাফেরা করে।’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ২৫)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যেসব নারী কাপড় পরা সত্ত্বেও উলঙ্গ, যারা নিজেরা বিপথগামী এবং অন্যকে বিপথগামী করে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং তাদের সুঘ্রাণও পাবে না। অথচ তার ঘ্রাণ ৫০০ বছরের দূরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।’ (মুয়াত্তায়ে মালিক, হাদিস : ১৬৬১)

ঝালকাঠি আজকাল