• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

সৈকতঘেরা জাকার্তায় প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২০ অক্টোবর ২০১৯  

 

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। ঢাকা শহরের প্রায় দ্বিগুণ রাজধানী জাকার্তার আয়তন ৬৬১ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা এক কোটির মতো।

সৈকতঘেরা জাকার্তায় সবখানেই পর্যটকের আনাগোনা। সৈকতে আছে ওয়াটার রাইড, শপিং মল, বিলাসবহুল হোটেল, আন্তর্জাতিকমানের রেস্তোরাঁ। সিলিওয়াং নদীমুখে জাকার্তার পুরনো বন্দর এলাকা সান্দু কেপালা। মারদুকা স্কয়ারের পশ্চিম পাশে জাতীয় জাদুঘর- মিউজিয়াম গাজাহ। সেখানে আছে দেড় লাখেরও বেশি নিদর্শন। এছাড়া ম্যারিটাইম মিউজিয়াম, টেক্সটাইল মিউজিয়াম, ফাতাহিল্লাহ মিউজিয়াম ও দ্য ওয়াইয়াং মিউজিয়াম দেখতে আসেন বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা।

মনুমেন্ট ‘মোনাস’ এর অভ্যন্তরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা লাভের চিত্র।সেন্ট্রাল জাকার্তায় প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসের সামনে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মনুমেন্ট ‘মোনাস’। শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত  এই স্থান পরিদর্শনে যাই। ১৩২ মিটার উঁচু মনুমেন্টের চূড়ায় ওঠার জন্য আছে লিফট। চূড়ায় ৩৫ কেজি ওজনের স্বর্ণের তৈরি একটি শিখা আছে। পুরো শহরটা দেখা যায় চূড়া থেকে।

জানা গেছে, ১৯৬২ সালে এই মনুমেন্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেন ইন্দোনেশিয়ার প্রথম রাষ্ট্রপতি সুকর্ণ। তার পরামর্শ অনুযায়ী ফ্রডেরিক সেলাবান ও আর এম সুদর্শনো এই মনুমেন্ট তৈরি করেছিলেন।

মনুমেন্ট ‘মোনাস’ এর অভ্যন্তরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা লাভের চিত্র।১৯৪৫ সালের ১৭ আগস্ট মিত্রশক্তির হাতে জাপানের আত্মসমর্পণের তিনদিন পর সুকর্ণ ও মোহাম্মাদ আতার নেতৃত্বে একটি দল ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ইন্দোনেশিয়া প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দেশটি পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র।

মনুমেন্ট ‘মোনাস’ এর অভ্যন্তরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা লাভের চিত্র।ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো বীর যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের স্মৃতিস্বরূপ মনুমেন্ট ‘মোনাস’ তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালে এটি দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। জনপ্রতি টিকেট পাঁচ হাজার রুপি, বাংলাদেশি টাকায় ৩০ টাকার মতো।

মনুমেন্ট ‘মোনাস’ এর অভ্যন্তরে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে স্বাধীনতা লাভের চিত্র।ইস্তেকলাল মসজিদ

ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে বড় মসজিদ ইস্তেকলাল। এই মসজিদ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে আধুনিক ও উন্নত সরঞ্জামাদি। আরবি শব্দ ইস্তেকলাল অর্থ স্বাধীনতা। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ এটি।

দেশটির প্রথম ধর্মমন্ত্রী ওয়াহিদ হাশিম ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা আনোয়ার চক্রমিনাতো মসজিদ নির্মাণের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সুকর্ন’র কাছে। আনোয়ার চক্রমিনাতোকে চেয়ারম্যান করে মসজিদ নির্মাণের জন্য ১৯৫৩ সালে মসজিদ ইস্তেকলাল ফাউন্ডেশন গঠন করা হয়। ১৯৫৫ সালে মসজিদটির নকশা প্রণয়ন সম্পন্ন হয়। উত্তর সুমাত্রার খ্রিষ্টান প্রকৌশলী ফ্রেডরিক সিলাবান এই নকশা তৈরি করেন। ১৯৬১ সালের ২৪ আগস্ট মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৭ বছর ধরে নির্মাণকাজ শেষে ১৯৭৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি মসজিদটি মুসল্লিদের নামাজের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

এক লাখ ২০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন এই মসজিদে। মসজিদটিতে প্রবেশের জন্য ৭টি দরজা রয়েছে। এসব দরজার নাম দেওয়া হয়েছে আল্লাহর গুণবাচক নামের সঙ্গে মিল রেখে। নিচতলা রাখা হয়েছে অজুর জন্য। প্রধান নামাজ ঘর দ্বিতীয় তলায়। নামাজ ঘরের মাঝখানে স্বাধীনতা অর্জন সালের (১৯৪৫) সঙ্গে মিল রেখে ৪৫ মিটার ব্যাসের গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম তারিখের সঙ্গে মিল রেখে গম্বুজটি ১২টি গোল পিলারের ওপর স্থাপন করা হয়েছে। প্রধান নামাজ ঘরে প্রবেশদ্বারে ৮ মিটার উচ্চতার একটি গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। আট সংখ্যার মাধ্যমে আগস্ট মাসকে নির্দেশ করা হয়েছে, যে মাসে ইন্দোনেশিয়া স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।

ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় মসজিদ ইস্তেকলাল।

মসজিদ পরিদর্শন শেষে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন ইন্দোনেশিয়ার ঢাকাস্থ দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি সেনডি আলেক্সান্ডার কাটোক ও  বাংলাদেশস্থ দূতাবাসের কর্মকর্তা মিস্টার শাদ।

পরবর্তী গন্তব্য ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে নয়নাভিরাম পঞ্চশীলা ভবন। সুকর্ণ ‘পঞ্চশীলা’ নামের রাষ্ট্রের পাঁচ মূলনীতি অনুসারে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে ছিলেন। পাঁচটি মূলনীতি ছিল- ধর্মীয় একত্ববাদ, মানবতাবাদ, জাতীয় ঐক্য, ঐকমত্যভিত্তিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র ও সামাজিক ন্যায়বিচার।

বিশ্বের অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে পঞ্চশীলা ভবন। ৩৩টি প্রদেশ নিয়ে ইন্দোনেশিয়া গঠিত। এর মধ্যে পাঁচটির রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। প্রত্যেকটি প্রদেশের রাজ্য গভর্নর ও আলাদা আইনসভা রয়েছে। প্রদেশগুলোকে শাসন সুবিধার জন্য রিজেন্সি ও সিটিতে ভাগ করা হয়েছে। নিচের দিকে আরও বেশ কিছু ছোট ছোট প্রশাসনিক ইউনিট করা হয়েছে। সবার নিচে রয়েছে গ্রাম। আচেহ, জাকার্তা, ইউগিয়াকারতা, পাপুয়া ও পশ্চিম পাপুয়াকে অনেক বেশিমাত্রায় স্বায়ত্তশাসন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আচেহ প্রদেশকে নিজেদের আইন প্রণয়নের অধিকার দেওয়া হয়েছে। তারা শরিয়া বিধান মোতাবেক শাসনকাজ পরিচালনা করে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জীববৈচিত্র্যের দেশ ইন্দোনেশিয়া। এর জীব ও উদ্ভিদশ্রেণির মধ্যে এশীয় ও অস্ট্রেলীয় সংমিশ্রণ দেখা যায়। সুমাত্রা, জাভা, বোর্নিও ও বালিতে এশীয় প্রাণিদের বিচিত্র সমারোহ। এখানে রয়েছে হাতি, বাঘ, চিতা, গণ্ডার ও বৃহদাকার বানর। দেশটির প্রায় ৬০ শতাংশ বনভূমি। অস্ট্রেলিয়ার কাছাকাছি অবস্থিত পাপুয়ায় ৬০০ প্রজাতির পাখির বাস। পাখিদের ২৬ শতাংশ পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। দেশটির সমুদ্র উপকূলের দৈর্ঘ্য ৮০ হাজার কিলোমিটার।

ঝালকাঠি আজকাল