• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান

সুন্দরবনের মতোই বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে কাঁঠালিয়ার ছৈলারচর

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০  

 

সুন্দরবনের মতোই প্রাকৃতিকভাবে কাঁঠালিয়ার অবহেলিত চরাঞ্চলে বেড়ে উঠেছে ছৈলা গাছ। সুন্দরবনে যেমন সড়ক পথে পুরোপুরি ভ্রমণ করা যায় না। তেমন কাঁঠালিয়ার ছৈলারচরেও সড়ক পথে ভ্রমণ করা যায় না। সড়ক পথে সুন্দরবনে যেতে হলে মোংলা বন্দরে নেমে সাম্পানে (একধরনের তাবু দেওয়া ট্রলার) করে যেতে হয় পিকনিক স্পট সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার করমজল পয়েন্টে। তেমন যে কোনো প্রান্ত থেকে কাঁঠালিয়া বন্দরে নেমে নৌকা অথবা ট্রলারে করে যেতে হয় ছৈলারচরে। 

উপকূলীয় জেলা ঝালকাঠির দক্ষিণ জনপদ কাঁঠালিয়ার বিষখালী নদীর তীরে প্রকৃতি সেজে উঠেছে ছৈলারচরে। পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও রয়েছে নানা সংকট। তবু সেই সংকট উপেক্ষা করেই প্রকৃতির নয়নাভিরাম এই ছৈলারচর পর্যটকের মিলনমেলায় পরিণত হচ্ছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সুন্দরবনের মতোই দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বিষখালীর বুক চিরে জেগে ওঠা ছৈলারচর।
 
জানা যায়, বঙ্গোপসাগর থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার নিকটবর্তী কাঁঠালিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হেতালবুনিয়া মৌজায় বিষখালী নদীতে এক যুগেরও আগে ৩০. ৬১ একর জমি নিয়ে জেগে উঠেছে এক বিশাল চর। যেখানে রয়েছে লক্ষাধিক ছৈলা গাছ। আর ছৈলা গাছের নাম থেকেই জেগে ওঠা এ চরের নামকরণ করা হয়েছে 'ছৈলার চর'। শীতের সময় শুকনো চরে গহীন অরণ্য। চারপাশে নদীঘেরা যেন ছৈলার বনের দ্বীপ। দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে যাতায়াতকারীরা দেখলে মনে করবে সুন্দরবনেরই একটি অংশ। আর সেখানে লাখ ছৈলা গাছে পাখিরা বাসা বেঁধেছে। অতিথি পাখিও নিরাপদ স্থান মনে করে আশ্রয় নিয়েছে। দেশীয় শালিক, ডাহুক আর বকের সারি তো আছেই। ছৈলা ছাড়াও এখানে কেয়া, হোগল, রানা, এলি, মাদার, আরগুজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছের সমারোহ রয়েছে। তাই পাখির কিচিরমিচির ডাক দিন-রাত সব সময় উপভোগ করা যায়। প্রতিবছর শীত ও শুকনো মৌসুমে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণায় মুখরিত থাকে ছৈলার চর বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্র। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি আয়োজনে জেলাবাসী দিনের মধ্যে প্রাকৃতিক স্থান ভ্রমণে এবং সবুজের সমারোহ উপভোগ করতে ছুটে যাচ্ছে ছৈলারচরে। ২০১৪ সালে ছৈলারচর স্থানটি পর্যটনস্পট হিসেবে চি‎হ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। 

কিন্তু সেখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা এবং শৌচাগার না থাকায় পর্যটকদের পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এ ছাড়া ছৈলারচরে পর্যটকদের সুবিধার্থে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর মধ্যেই নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। ছৈলারচরটি পর্যটন সম্ভাবনার হাতছনি, এখানে পর্যটকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা তৈরি করতে এর মধ্যেই পর্যাটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে আবেদন জানানো হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। 

বছর খানেক পূর্বে উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদ থেকে ছৈলারচরকে পূর্ণাঙ্গ বিনোদন স্পটে রূপ দিতে অভ্যন্তরীণ একটি পুকুরে ঘাটলা, একটি টিউবওয়েল, ৩টি শৌচাগার, একটি শেড ও একটি রান্না ঘর স্থাপন করা হয়। 

গত বছরের ১০ নভেম্বর বুলবুলের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয় এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সবকটিই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত হলেও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা ছৈলার চরে গিয়ে পড়ছেন ভোগান্তিতে। বিশেষ করে শৌচাগার সংকটের কারণে নারী পর্যটকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

কাঁঠালিয়া লঞ্চঘাট থেকে নৌপথে যেতে হয় ছৈলার চরে। আমুয়া বন্দর থেকেও ট্রলারে কিংবা অন্য যেকোনো নৌযানে যাওয়া যায়। সড়ক পথে হেতালবুনিয়া আলিম মাদরাসার সামনে কেল্লা পর্যন্ত যাওয়া যায়। পর্যটন এলাকাকে ঘিরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও রেস্ট হাউজ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

সিঙ্গাপুর প্রবাসী কলিন্স খান জানান, ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করছিলাম। এমন সময় কয়েকজনে ছৈলারচর ভ্রমণের আহ্বান জানালেন। আমি তাতে সম্মতি দিয়ে সেখানে ভ্রমণের সুযোগ সদ্ব্যবহার করলাম। প্রাকৃতিক নৈসর্গিক দৃশ্য আমার মন কেড়েছে। সেখানে গ্রামাঞ্চলের বিলুপ্তপ্রায় ছৈলা গাছসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির গাছ দেখার সুযোগ হয়েছে। পাশাপাশি বেশ কিছু অতিথি পাখি এবং দেশীয় পাখি দেখার সুযোগ হয়েছে। পর্যটকদের জন্য কিছু সুযোগ-সুবিধা করে দিলে বিনোদনের মাত্রটা আরও বেড়ে যেতো। 

ছৈলারচর ঘুরে আসা উম্মে হান্না নিঝুম বলেন, চতুর্দিকে নদী বেষ্টিত এবং চরে দৃষ্টিনন্দন লক্ষাধিক ছৈলাগাছ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। পর্যটনের জন্য এর চেয়ে ভালো স্থান আর হয় না। কিন্তু এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থার। প্রতি বছর বিশেষ করে শীত মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ হাজার পর্যটক ভ্রমণপিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন। কিন্তু তাদের নিরাপত্তা কোথায়? মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে চরের সড়কপথে যোগাযোগের জন্য সেতু নির্মাণের দাবিও জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
  
কাঁঠালিয়া সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. রবিউল ইসলাম কবির সিকদার বলেন, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ছৈলার বনভূমিতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে প্রতি শীত ও শুকনো মৌসুমে বিনোদন ও ভ্রমণ পিপাসুরা ঘুরতে আসে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাকারী প্রাণীসহ পাখির নিরাপদ আবাসস্থল ছৈলার চর। এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা থাকলেও এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে ওঠেনি। অবকাঠামোগত কিছু না থাকায় সরকার রাজস্ব পাচ্ছে না। এটি যদি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায় তবে সরকারে রাজস্ব পাবে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আকন্দ মোহাম্মদ ফয়সাল উদ্দীন বলেন, ছৈলার চরকে নিয়ে প্রশাসনের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। যার কারণে ছৈলারচরকে পর্যটনকেন্দ্র করার বিষয়ে পর্যটন করপোরেশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ট্যুরিজম বোর্ড ছৈলারচর উন্নয়নের লাখ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলেই এর বাস্তবায়ন শুরু হবে।

ঝালকাঠি আজকাল