• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০  

 

একটা সময় উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশি শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সবার উপরে ছিল। কিন্তু এখন এর উল্টো চিত্র। বেসরকারির তুলনায় সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দিন দিন বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।

মানসম্মত শিক্ষার অভাব, অত্যধিক ব্যয়, অবকাঠামো সংকট ও নিরাপত্তার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে শিক্ষার্থীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাড়া কেউই শিক্ষার্থী ধরে রাখতে পারছে না।

অন্যদিকে নানা সুযোগ-সুবিধার কারণে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশিরা আগ্রহী হচ্ছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) প্রকাশিত ‘৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৮’ এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক ডিজিটালাইজেশন হয়েছে। যে কারণে বিদেশি শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তির কল্যাণে কোর্স-কারিকুলাম ও সিলেবাস  দেখে এ দেশে পড়ার জন্য উৎসাহী হচ্ছেন। বেসরকারিতে শিক্ষার্থী কমলেও এটি একটি ইতিবাচক দিক।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৭টিতে মোট ৩৩টি দেশের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন। ২০১৭ সালে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৭৭ জন। কিন্তু ২০১৮ সালে এ সংখ্যা কমে ১ হাজার ৩৮৬ জনে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে ৫৯১ জন শিক্ষার্থী কমে গেছে। 

তবে এ ক্ষেত্রে প্রথম সারির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র ভিন্ন। শুধু তারাই বিদেশি শিক্ষার্থী  ধরে রাখতে পারছে।

২০১৮ সালে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, সৌদি আরব, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, মরক্কো, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে, সিয়েরালিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, তাইওয়ান, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, বাহরাইন, লাইবেরিয়া, জাম্বিয়া, জিবুতি, মিয়ানমার, কেনিয়া, দক্ষিণ সুদান এবং যুক্তরাজ্য মিলিয়ে মোট ৩৩টি দেশের শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে আসেন।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে প্রায় প্রতিবছর বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে এসে এ সংখ্যা কমে গেছে। বেশ কিছু শিক্ষার্থী তাদের ক্রেডিট শেষ করে নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মত আরও কয়েকটি উন্নত দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে পড়তে আসছেন। যার ফলে একদিকে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের হারও বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করতে পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।

এ বিষয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা সমিতির সভাপতি শেখ কবির বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়তে আগ্রহী। বহির্বিশ্বের যেসব শিক্ষার্থী পড়তে আসছেন, তাদের আবাসিক সুবিধা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় এ সংখ্যা বাড়ছে না, বরং কমে যাচ্ছে। তবে আমরা চাই অধিক সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী পড়তে আসবেন। এ জন্য সরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আহ্বান জানাই।’

প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৭ সালে দেশের ২৩টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪৬১, যা ২০১৮ সালে এসে ৮০৪-এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় পরের বছর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী বেড়ে গেছে ৩৪৩ জন।

এ ব্যাপারে শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষাবিদ ড. একরামুল কবির বলেন, ‘বাংলাদেশে বহির্বিশ্বের শিক্ষার্থীরা পড়তে আসছেন, এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক বিষয়। এতে করে বিদেশি অর্থ উপার্জন হচ্ছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মানসম্মত শিক্ষা, আবাসন সুবিধা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্ষম না হওয়ায় তাদের শিক্ষার্থী হ্রাস পাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তুলনায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশে শিক্ষার খরচ কম। এ কারণে তারা এদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।’

বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়াতে পরামর্শ দিয়ে এ শিক্ষাবিদ বলেন, ‘শিক্ষার মান বাড়াতে হবে, শুধু আসবাবপত্র আর চাকচিক্যময় ভবন বানালে শিক্ষার মান বাড়বে না। এজন্য দক্ষ শিক্ষক ও যুগোপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা বৃদ্ধি, এক্সট্রা কারিকুলাম সুবিধাসহ উচ্চশিক্ষার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’

ঝালকাঠি আজকাল