• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

শবে মেরাজ অস্বীকার করা কুফরি

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৪ মার্চ ২০২০  

 

ইসলামে শবে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। কেননা, এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামাজ, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) করা হয়। এমনকি এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে হাদিয়া স্বরূপ নিয়ে আসেন মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)। যদিও এ রাতটি ঠিক কবে, কত তারিখে এ ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের প্রচুর মতভেদ রয়ে গেছে। তবে ‘শবে মেরাজ বলতে কিছু নেই’ এরূপ বলা বা অস্বীকার করা সরাসরি কুফরি।

মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সাঃ) নবুওয়তি জীবনে যেসব অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল তার মধ্যে মেরাজের ঘটনা অন্যতম। যা পবিত্র কুরআনুল কারিম এবং মশহুর, মুতাওয়াতির হাদিস দ্বারা প্রমাণিত, তাই এটা অস্বীকার করা কুফরি। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ নিজেই জানিয়েছেন-

سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ

অর্থ: পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত; যার চারদিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি, যাতে আমি তাকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল। (সুরা বনি ইসরাঈল :০১)

অন্যত্র তিনি বলেন,

مَا زَاغَ الْبَصَرُ وَمَا طَغَى. لَقَدْ رَأَى مِنْ آيَاتِ رَبِّهِ الْكُبْرَى

অর্থ: ‘তার দৃষ্টিভ্রম হয়নি এবং তিনি সীমালঙ্ঘনও করেননি। নিশ্চয়ই তিনি তার পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলি অবলোকন করেছেন’ (সুরা নাজম :১৭-১৮)।

আলোচ্য প্রথম আয়াতের সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা বুঝলে শবে মেরাজের শিক্ষা সহজে বুঝে আসবে ইনশাআল্লাহ। আয়াতটি শুরু হয়েছে ‘সুবহান’ শব্দ দ্বারা। এ শব্দটি আল্লাহর গুণবাচক নাম। অর্থ মহিমাময়, আল্লাহর স্তুতিগান, অতিশয় পবিত্র। এ শব্দের মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, অত্যাশ্চর্য কোনো বিষয় সামনে এলে ‘সুবহানাল্লাহ’ বলে রাব্বুল আলামিনের গুণকীর্তন করতে হয়। এ শব্দের মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে, সামনে যে বিষয়টি আলোচনা করা হবে তা দুনিয়ার মধ্যে অত্যাশ্চর্য একটি বিষয়। এমন আশ্চর্য বিষয় ঘটানো কোনো মাখলুকের পক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

পরবর্তী শব্দ ‘আসরা’। এটি ‘ইসরা’ শব্দ থেকে নির্গত। এর আভিধানিক অর্থ রাতে নিয়ে যাওয়া। পরিভাষায় ‘আসরা’ বলা হয়, মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াকে। আর মসজিদুল আকসা থেকে আসমান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়াকে মেরাজ বলা হয়। এখানে আমরা বুঝতে পারলাম, ইসরা ও মেরাজ দুই জায়গা থেকে ভ্রমণ করানোর নাম। আমাদের সমাজে দেখা যায়, অনেকে ইসরা ও মেরাজের মধ্যে পার্থক্য করতে না পেরে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন।

এরপর ‘বিআবদিহি’ শব্দ। অর্থ ‘নিজের বান্দাকে’। এ শব্দটি একটি বিশেষ প্রেমময়তার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। কেননা, মহান আল্লাহ স্বয়ং কাউকে ‘আমার বান্দা’ বললে এর চেয়ে বড় সম্মান-মর্যাদা তার জন্য আর কিছুই হতে পারে না। এখানে মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সাঃ) অতি সম্মান ও মর্যাদা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আল্লাহ তায়ালার অসাধারণ একজন বান্দা ও রাসুল। সুতরাং এই অসাধারণ বান্দা ও রাসুল বিশ্ববাসীর কাছে যা কিছু বলেন, সবকিছুই আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে অকাট্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে সঠিক ও সত্য বলেন। এই ইয়াকিন ও বিশ্বাস রাখাও মেরাজের শিক্ষা।

পরবর্তী শব্দ ‘লাইলান’। এ শব্দটি ‘নাকিরা’ অর্থাৎ অনির্দিষ্ট সময় বা কালকে বোঝায়। এ শব্দটি ব্যবহার করে এদিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, হজরত মুহাম্মদকে (সাঃ) ওপর জগৎ ভ্রমণ করিয়েছেন রাতের কিছু অংশে; পুরো রাতে নয়। এ কথাটি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করাও মেরাজের শিক্ষা। তাই তো রাসুলের (সাঃ) মেরাজের ঘটনা যখন হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) শুনলেন, সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে নিলেন। কারণ, তিনি জানতেন নবিজি যেহেতু আল্লাহর অসাধারণ বান্দা ও রাসুল তাই তিনি যা কিছু বলেন এবং করেন তার সবই সঠিক ও সত্য। এখানে যাচাই-বাছাইয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।

মেরাজের পুরো ঘটনাটি সশরীরে হয়েছে। এ কথা বিশ্বাস করাও মেরাজের অন্যতম শিক্ষা। বিখ্যাত সাহাবি হজরত ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘রজবের ২৭ তারিখ রাতে হঠাৎ আমার কাছে জিবরাইল (আঃ) একটি সাদা রঙের বোরাক নিয়ে উপস্থিত হলেন’ (বোরাক হচ্ছে সাদা রঙের একপ্রকার আরোহণের যন্ত্র, সে প্রতিটি কদম ফেলে দৃষ্টির শেষ সীমানায়)। রাসুল (সাঃ) বলেন, ‘আমি এতে আরোহণ করলাম, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করলাম এবং সেখানে দু’রাকাত নামাজ আদায় করলাম। এরপর আমি মসজিদ থেকে বের হলাম। তখন জিবরাইল (আঃ) একটি শরাব ও একটি দুধের পাত্র নিয়ে আমার সামনে উপস্থিত হলেন। তখন আমি দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলাম। জিবরাইল (আঃ) বললেন, আপনি ফিতরাতকেই গ্রহণ করেছেন।’ (সহিহ মুসলিম ১/৯১)

এ ছাড়া মেরাজের আরও শিক্ষা রয়েছে যা এই সংক্ষিপ্ত নিবন্ধে লেখা সম্ভব নয়। তবে এই ঐতিহাসিক ঘটনার আলোচনা শেষে আমরা আমাদের করণীয়গুলো নোট করে নিতে পারি। যেমন:

এক. আমাদের প্রধানতম করণীয় হলো ইসরা ও মেরাজ সশরীরে হয়েছে তার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা।
দুই. রাসুল (সাঃ) মেরাজে গিয়ে যা কিছু দেখেছেন; জান্নাত, জাহান্নাম, আল্লাহ তায়ালার কুদরতের বিভিন্ন নিদর্শন, পাপীদের বিভিন্ন আজাব ইত্যাদি বিশ্বাস করা। কারণ, নবিজি দেখা মানেই উম্মতের দেখা।
তিন. নবীজি মেরাজে গিয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য যে মহাপুরস্কার নামাজ নিয়ে এসেছেন তা বিশ্বাস করা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে কায়েম করতে সচেষ্ট হওয়া।

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঝালকাঠি আজকাল