• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

রাশিয়ানরা হৃদরোগে আক্রান্ত কম হয় যে কারনে

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৪ জানুয়ারি ২০১৯  

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্ব জুড়ে অকাল মৃত্যুর এক তৃতীয়াংশ হৃদরোগের কারণে হয়ে থাকে। যদিও আশ্চর্যজনক ভাবে রাশিয়ার অধিবাসীদের হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা একদমই শোনা যায় না। রহস্য কী?

রাশিয়ার অধিবাসীরা কি এমন করেন যে সারা বিশ্বের উল্টো পথে সুস্থ সবল জীবনযাপন করছেন? এমন প্রশ্ন আপনাদের মনে আসতেই পারে 

তাহলে আর  না  ঘুরিয়ে  রহস্যটি বলেই দেই। মাছের তেলের নাম তো নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন। রাশিয়ানরা প্রতিদিন তাদের খাদ্যের সাথে  মাছের তেল খেয়ে থাকেন বলেই তাদের মধ্যে হৃদরোগী নেই বললেই চলে। মাছের তেলে রয়েছে ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স নামে এক ধরণের জরুরী ফ্যাটি অ্যাসিড, যা আমাদের হৃৎপিণ্ডকে সচল এবং কর্মক্ষম রাখে এবং একে সব ধরণের ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করে।

মাছের তেল কিভাবে রাশিয়ানদের মত আপনাকেও হৃদরোগের হাত থেকে বাঁচাবে তা জানতে একদম শেষ পর্যন্ত পড়তে হবে লেখাটি।

#হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়ঃ 
মাছের তেল প্রতিদিন খাওয়া শুরু করলে প্রথমেই যে ক্ষতিকর উপাদানের উপর কাজ শুরু হয় তা হলো খারাপ কোলেস্টেরল বা এল ডি এল (লো ডেনসিটি লিপিড)। আমাদের দেহে দুই রকম কোলেস্টেরলের উপস্থিতি রয়েছে। খারাপটার তো জানলেন, এর বিপরীতটাও তো নিশ্চয়ই থাকবে, অর্থাৎ উপকারী বা ভালো কোলেস্টেরল বা এইচ ডি এল(হাই ডেনসিটি কোলেস্টেরল)  পরিমাণও বৃদ্ধি করে মাছের তেল। এলডিএল বা খারাপ কোলেস্টেরল ধমনির দেয়ালে ক্ষতিকর প্লাক তৈরিতে সাহায্য করে, তাই একে খারাপ বলা হয়। আর এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল ধমনির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় এলডিএল কোলেস্টেরলকে সরিয়ে দিতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এ জন্য এটিকে ভালো কোলেস্টেরল বলা হয়। মাছের তেলের ওমেগা থ্রি এবং ওমেগা সিক্স হার্ট-অ্যাটাক সহ বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি একদম কমিয়ে আনে।

#খুব দ্রুত জটিল সমস্যা সমাধানে ক্ষমতা বাড়েঃ 
ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আমাদের মস্তিষ্কের সেল মেমব্রেন সুস্থ রাখে এবং স্নায়ু কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এই কারণে আলজাইমার’স রোগের হাত থেকে বাঁচতে বহু আগে থেকেই নিয়মিত মাছের তেল খাওয়ার কথা বলে আসছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিভিন্ন গবেষণায় এও প্রমাণিত হয়েছে যে মাছের তেল মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

#রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ 
বিভিন্ন দেশে নিয়মিত খাবারে পলিআনস্যাচুরেটেড অ্যাসিড যুক্ত মাখন বা মার্জারিন যোগ করা হয়। মজার ব্যাপার হলো এই উপাদানটি মাছের তেলেও পাওয়া যায় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তোলে।

#কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়ঃ 
বিখ্যাত আইস হকি খেলোয়াড় মাইকেল হাচিনসন তার লেখা Faster: The Obsession, Science and Luck Behind the World’s Fastest Cyclists, বইয়ে উল্লেখ করেছেন- কর্মক্ষমতা বাড়াতে ১০০% কাজ করে এমন যেসব জিনিসের উপর তিনি ভরসা করেন তার মধ্যে রয়েছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড এবং মাছের তেল।

বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেছেন, প্রতিদিন মাছের তেল খেলে শরীরে অহেতুক জমে থাকা মেদ ঝড়তে শুরু করে এবং খেলোয়াড়দের মত সাধারণ মানুষেরও কর্মক্ষমতা অনেক বৃদ্ধি পায়।

# বাত ব্যাথা প্রতিরোধ করেঃ 
গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, যারা সমুদ্রতীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করেন এবং প্রচুর মাছ  খান তাদের বাত ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার হার অন্যদের তুলনায় কম। এর কারণ হলো, জয়েন্ট সুস্থ এবং টিস্যুর স্থিতিস্থাপকতা ধরে রাখার জন্য ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন হয়। তা না হলে বাত ব্যথার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যদিও মাছের তেল বাত ব্যথা দূর করার ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখে না, কিন্তু বাত ব্যথা প্রতিরোধ তো করতে পারে।

#মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করেঃ
পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড সেরোটোনিন হরমোনের উৎপাদন বাড়ায়, যে হরমোনটি আমাদের মেজাজ-মর্জি ভালো করতে সাহায্য করে। ফলে মানসিক চাপ দূর হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতি চঞ্চল এবং অমনোযোগী শিশুদের মাছের তেল খেতে দেন চিকিৎসকরা।

গবেষণায় জানা যায়, মাছের তেল সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত বা মানসিক ভাবে অসুস্থ ব্যক্তিদের বেলায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

#চোখের উচ্চ চাপ কমায়ঃ
গ্লুকোমা অন্ধত্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ। এ রোগে চোখের ভেতর চাপ বেড়ে গিয়ে চোখের অপটিক স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে দৃষ্টির পরিসীমা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। গ্লুকোমায় আক্রান্তদের চিকিৎসকরা নিয়মিত মাছের তেল খাওয়ার কথা বলেন। চোখের অন্যান্য সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতেও নিয়মিত মাছের তেল খাওয়া উচিৎ।

#ভিটামিন এবং খনিজের অতিরিক্ত উৎসঃ
মাছের তেলে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি রয়েছে একগাদা খনিজ এবং ভিটামিন। কোন মাছের তেল তার উপর ভিত্তি করে এদের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।চিকিৎসকেরা  মাল্টি ভিটামিন সাপ্লিমেন্টের পরিবর্তে মাছের তেল বিকল্প হিসাবে খাওয়াকে উত্তম বলে বিবেচনা করে থাকেন।

মাছের তেলের ভিটামিন এ এবং ডি আগা ফাটা সহ চুলের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতে পারে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, আগের দিনে রিকেটস রোগ থেকে বাঁচাতে শিশুদের মাছের তেল খাওয়ানো হতো।

**মাছের তেল খাবেন,কিন্ত কোন ধরণের মাছের তেল খাবেন? 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মাছের তেল বলতে কড মাছের যকৃত থেকে উৎপাদিত তেলকেই বোঝানো হয়। এজন্যই একে কড লিভার অয়েল বলা হয়। কিন্তু এটাই সবচেয়ে ভালো মাছের তেল এমন দাবি করা যাবে না। তৈলাক্ত এমন অনেক মাছ আছে যার তেল আমাদের দেহের জন্য উপকারী। কিন্তু বিভিন্ন মাছের তেলের মধ্যে আপনার দেহের জন্য উপযুক্ত কোনটি তা পুষ্টিবিদ বা চিকিৎসকরাই বিচার করতে পারেন। তাই মাছের তেল খাওয়া শুরুর আগে তাদের কাছ থেকে জেনে নিন কখন এবং কোন পরিস্থিতিতে খাওয়া যাবে না।


মোঃশাকিল আহমেদ 
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ 
বরিশাল

ঝালকাঠি আজকাল