• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

রাজাপুরে কুটির শিল্পের কাজ করে সাবলম্বী গ্রামের অর্ধশত পরিবার

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

রাজাপুর প্রতিনিধিঃ এক সময় অভাব ছিল। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারত না তারা। চরম দারিদ্র সীমার মধ্যে বসবাস করত এ গ্রামের মানুষ। কিন্তু কুটির শিল্পের কাজ করে এখন সাবলম্বী তারা। বলছি ঝালকাঠির রাজাপুর  উপজেলার পারগোপালপুর গ্রামের কথা। কুটির শিল্পের কাজ করে এই গ্রাম আজ বেকার মুক্ত। এখানের অর্ধশত পরিবার বেকারের অভিষাপ ঘোচিয়ে হয়েছে সাবলম্বি। স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে উন্নত জীবনের। তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় প্রশাসন। দিচ্ছেন স্বপ্ল সুদে ঋনের সুবিধা। জানাগেছে, ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম পার গোপালপুর। এ গ্রামের ৫০টি পরিবারের বসবাস। এরমধ্যে অধিকাংশ সনাতন ধর্মের। যারা শত বছর ধরে বংশপরমপরায় বাঁশ বেতের তৈরি কুটির শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা চালিয়ে আসছে। কিন্তু প্রশিক্ষন ও অর্থের অভাবসহ নানা সমস্যার কারনে এ গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। বেকার ছিল অনেকে। বর্তমানে স্থানীয় যুব উন্নয়নের মাধ্যমে প্রশিক্ষন ও স্বল্প সুধে ঋন নিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়েছেন সবাই। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে উন্নত জীবনের সোনালী স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। বাঁশ ও বেতসহ বিভিন্ন কাঁচামাল দিয়ে কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হলো সাজি, কূলা, চাটাই, হাতপাখা, মোডা, ফুলদানি, ছাইদানি ইত্যাদি। মনের মাধুরি মিসিয়ে বিভিন্ন রকমের কারুকার্য করে এসকল জিনিসপত্র গুলো তৈরি করা হয়। এখানের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা রয়েছে জেলা জুড়ে। এমনকি পাশ্ববর্তী জেলা গুলোতেও রপ্তানি হয় পারগোপালপুর গ্রামের উৎপাদিত পণ্য। গ্রামের নারীরা সংসারে কাজের পরে বাঁশ ও বেত নিয়ে বসে যায় পুরুষের কাজে সহযোগীতা করে। মূলত পুরুষের চেয়ে নারীরাই বেশি কাজ করেন কুটির শিল্পের বিভিন্ন জিনিস তৈরিতে। আর পুরুষের নারীদের উৎপাদিত পন্য গুলো বিভিন্ন হাট ও বাজারে নিয়ে বিক্রি করেন। পাশাপাশি কুটির শিল্পের জন্য কাঁচা মালও সংগ্রহ করেন তারা। এখানকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নত থাকায় এখানকার উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিতে সমস্যা হচ্ছে। তবে পুঁজি কম হওয়ায় এখনও ছোট পরিসরে কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে পারগোপালপুর গ্রামবাসী। সরকারি ভাবে সুদ মুক্ত ঋনের পরিমান বারানো হলে বড় পরিসরে কুটির শিল্পের কাজ করে এখানকার উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করতে পারবে বলে দাবি পারগোপালপুর গ্রামবাসীর।
পারগোপালপুল গ্রামের স্বপন মাতুব্বর বলেন,‘ আমরা প্রায় এক’শ বছর ধরে কুটির শিল্পের কাজ করে আসছি। আগে আমাদের অনেক অভাব ছিল। কোন প্রশিক্ষন পাইনি, এমনকি সরকারি ভাবে সহযোগীতাও জোটেনি। আর এখন কম হলেও যুব উন্নয়ন থেকে লোন পেয়েছি। তারা আমাদের বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষন দিয়েছে। যার ফলে আমরা এখন আগে চেয়ে অনেক ভাল আছি।
একই গ্রামের রমেন পাটিকর বলেন,‘ কুটির শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কাঁচামাল বাঁশ ও অন্যান্য জিনিসের দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদের সমস্যা হয়। সরকার যদি লোনের পরিমান বারিয়ে দেয় তাহলে এই কাঁচামালগুলো একসাথে পরিমানে অনেক বেশি কেনা যাবে। আর তাতে আমাদের লাভ বেশি হবে।
এখানের গৃহবধু আরতী মাতুব্বর বলেন,‘ সংসারের কাজ করে অবসর সময় আমরা কুটির শিল্পের কাজ করি। এখানের আয় থেকে আমাদের সংসার চলে। ছেলে মেয়েদের লেখা পড়া করাতে পারছি। আগের চেয়ে এখন আমরা ভাল আছি।
রাজাপুর উপজেলা যুব-উন্নয়ন কর্মকর্তা মু. আল-আমিন বাকলাই বলেন,‘ আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করেছি ওনাদের সহযোগীতার করার জন্য। পারগোপালপুর গ্রামের এই পরিবার গুলোর চলাচলে রাস্তা, বিদ্যুৎ, গভীর নলকুপসহ সরকারি বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ড এখানে করা হয়েছে। তবে হস্ত শিল্পের সাথে যারা জরিত রয়ে তাদের বেশি পরিমানের লোন দেয়ার মত তহবিল এখনও হয়নি। তহবিল হলে এদেরকে বেশি পরিমানের লোন দেয়া হবে।

ঝালকাঠি বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক শাফাউল করিম বলেন,‘ আমরা ওই গ্রামটি ভিজিট করতে যাব। ওনারা যদি ঋন এর আওতায় পরে তাহলে বিসিকের পক্ষ থেকে তাদের প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত লোন দেয়া যেতে পারে।

 

ঝালকাঠি আজকাল