• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

যে দশ দেশ থেকে আসছে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২০  

মহামারি করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যেও দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় আহরণে রেকর্ড হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।

সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এক হাজার ৮২০ কোটি ডলার বা ১৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ৭টি দেশ থেকে এক হাজার কোটি ৫৬ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথম দুই মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে ৩০৮ কোটি ৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এর মধ্যে দুই মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ১৮২ কোটি ৩৩ লাখ ডলার। এছাড়া গেল অর্থবছরে প্রবাসী আয় পাঠানোর শীর্ষে থাকা ১০ দেশের মধ্যে ৬টি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে সৌদি আরব থেকে। দেশটি থেকে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৪০১ কোটি ৫১ লাখ ডলার, যা মোট আহরিত রেমিট্যান্সের ২২ শতাংশ।

বাংলাদেশের বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে গড়ে ৫০-৬০ হাজারের মতো মানুষ বিদেশে কাজ করতে যান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশটি যায় সৌদি আরবে। দেশটিতে গত জানুয়ারি গেছেন ৫২ হাজার, ফেব্রুয়ারিতে ৪৪ হাজার মানুষ, আর মার্চে ফ্লাইট বন্ধের আগ পর্যন্ত ৩৮ হাজার লোক গেছে। বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদি আরবে আছেন।

এদিকে সম্প্রতি সৌদি আরবের ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, করোনা মহামারির কারণে এ বছর সৌদি শ্রমবাজারে ১২ লাখ বিদেশী কর্মী চাকরি হারাবেন। রিপোর্টে দেশটির এক গবেষণা সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়, নির্মাণ খাত, পর্যটন (হজ), রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন খাতে এই কর্মচ্যুতি ঘটতে পারে।

ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চে ফ্লাইট চলাচল বন্ধের আগ পর্যন্ত সৌদি আরব থেকে ৪১ হাজারের মতো শ্রমিক ফিরে এসেছেন। পরে চার্টার্ড বিমানে দেশে ফিরেছেন ১৩ হাজারের বেশি শ্রমিক, তারও একটি বড় অংশ সৌদি আরব থেকে এসেছে। এর বাইরে তিন মাসে সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল এমন শ্রমিকের সংখ্যাও ৫০ হাজারের বেশি।

জানা গেছে, করোনার কারণে হজের কার্যক্রম না থাকায় হোটেল-রেস্তোরাঁসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। অনেকে দেশে ফিরে এসেছেন। আবার কেউ অপেক্ষায় রয়েছেন ফিরে আসার। এতো সব সংকটের মধ্যেও রেমিট্যান্স পাঠানো অব্যাহত রেখেছেন প্রবাসীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গেল অর্থবছরে রেমিট্যান্স পাঠানোয় শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে সৌদি ছাড়া অন্য দেশগুলো হলো- আরব আমিরাত, যুক্তরাষ্ট্র, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, ওমান, মালয়েশিয়া, কাতার, ইতালি ও সিঙ্গাপুর।

গেল অর্থবছরে রেমিট্যান্স আহরণের দ্বিতীয় শীর্ষে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত। দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪৭ কোটি ২৫ লাখ ডলার। তৃতীয় দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪০ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। চতুর্থে থাকা কুয়েত থেকে এসেছে ১৩৭ কোটি ২২ লাখ ডলার, যুক্তরাজ্য থেকে পাঠিয়েছে ১৩৬ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। ওমান ১২৪ কোটি ৫ লাখ ডলার, মালয়েশিয়া থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৩ কোটি ১৩ লাখ ডলার। কাতার থেকে পাঠিয়েছে ১০১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। এছাড়া ইতালি থেকে এসেছে ৬৯ কোটি ৯১ লাখ ডলার এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রবাসীরা মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে) এক লাখ ৫৪ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা। এর আগে কোনো এক অর্থবছরে এতো অর্থ দেশে আসেনি। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের তুলনায় সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা ১৫ হাজার কোটি টাকা।

রেমিট্যান্সের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল প্রবাসীরা। তার আগে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। এ সময় রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ ডলার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার, যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।

ঝালকাঠি আজকাল