• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির

মুহাম্মাদ (সা:) : বাস্তবিকই যিনি ছিলেন চাঁদের চেয়েও সুন্দর

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০১৯  

 

‘তুমি দেখতে চাঁদের মতো।’
এখন এটা খুব সস্তা একটা ডায়লগ। যে কারো মুখ থেকে যে কারো জন্যেই হুট করে বের হয়ে যায়। ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। তবে প্রথম যিনি এই উপমাটি ব্যবহার করেছিলেন সেটা কত অসাধারণ এক ডায়লগ ছিল তা চিন্তা করাও কঠিন। যাকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, তিনি যতই রূপবতী হোন না কেন সামান্য এই কথায় যে গলে গিয়েছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহই নেই। আর এখন? সাধারণ চেহারার কোনো নারীকে এ কথা একবারের জায়গায় দুইবার বললে মুখ ঝামটা মেরে বলবে, নতুন কিছু বলতে পার না? যত্তসব!

নতুন কিছু বলা আসলেই কঠিন। আমাকে কারো চেহারা নিয়ে মন্তব্য করতে বললে আমি ভাঙা ভাঙা আরবিতে সর্বোচ্চ বলতে পারব, أنت جميلة جدا ‘তুমি না দেখতে অনেক সুন্দর!’ কিংবা, وجهك كالقمر ‘তোমার মুখখানি চাঁদের মতো।’ 

এরপর নতুন কিছু বলতে বললে আমার কবিত্ব নীরব হয়ে যাবে। আমি তো আর ভারতচন্দ্র না যে বলব,

‘কে বলে শারদ শশী সে মুখের তুলা
পদনখে পড়ে আছে তাঁর কতগুলা।’

অর্থাৎ, কে বলে তার মুখখানি শরতের চাঁদের মতো। এমন কতগুলো চাঁদ তো তার পায়ের নখের সমানও না। সন্দেহ নেই, প্রশংসা করতে গিয়ে কবি বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছেন। বাড়াবাড়ি করাই কবিদের অভ্যেস। আল্লাহর রাসুল (সা.) তাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। না হয় সাহাবিদের মুখেও হয়তো ভারতচন্দ্রের চেয়ে হাজারগুণ সুন্দর কবিতা আমরা শুনতাম রাসুল (সা.)-এর মুবারকময় মুখের প্রশংসায়। আর সত্যি বলতে কী, অনেক প্রশংসা করলেও তা যথেষ্ট হতো না। বাড়াবাড়ি তো পরের কথা।

পৃথিবীতে চাঁদ নিয়ে বহু কবিতা রচিত হয়েছে। কত ভাষায়, কত ছন্দে! মেয়েরা যে লিখেনি তা না, তবে বেশিরভাগই লিখেছে ছেলেরা। ছেলেরা বরাবরই রূপের প্রশংসায় অত্যন্ত উদার। এক মেয়েলি ঢঙ্গের কবিতা পেয়েছিলাম যেখানে মেয়েটা বলছে, 

‘এক অন্ধও সামনে এলে তোমার প্রতি ভালোবাসা দেখবে আমার মুখখানিতে,
নেই কোনো চন্দ্র তোমার মুখের মতো, কী ওপারে, কী এই পৃথিবীতে।’

পরে দেখি কবিতাটি জালাল উদ্দিন রুমির লেখা। উনি নিজেই মেয়েলি ঢঙ্গে কবিতাটা লিখেছেন।

আবেগের বশে স্ত্রীকে চাঁদের সাথে তুলনা করতে গিয়ে বিপদে পড়ার ইতিহাসও আছে। এক ব্যক্তি একবার প্রেমের আতিশয্যে স্ত্রীকে বলে ফেলল,

أَنْتِ طَالِقٌ ثَلَاثًا إِنْ لَمْ تَكُونِي أَحْسَنَ مِنَ الْقَمَرِ
‘তুমি অবশ্যই চাঁদের চেয়েও সুন্দর। (যদি না হও, তবে যাও) তোমার তিন তালাক হয়ে গেছে।’

এ দিকে স্ত্রী সত্যি উঠে তার কাছ থেকে পর্দা করা শুরু করল। বলল, ‘তুমি আমায় তালাক দিয়ে ফেলেছো!’

এ কথা শুনে তো স্বামী বেচারার অবস্থা খারাপ। ছটফট করে সে পুরো রাতটা কাটালো। পরদিন খলিফার দরবারে ছুটে গেলো। খলিফা ব্যাপারটা নিষ্পত্তি করার জন্য ফকিহদের ডেকে পাঠালেন। সব ফকিহ মত দিলেন যে, তালাক হয়ে গেছে। একজন বাদে। তিনি ছিলেন ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর সাথী। তাকে এ ব্যাপারে মত জিজ্ঞেস করা হলে উনি কুরআনের আয়াত পড়া শুরু করলেন, 

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ: وَالتِّينِ وَالزَّيْتُونِ. وَطُورِ سِينِينَ. وَهذَا الْبَلَدِ الْأَمِينِ. لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسانَ فِي أَحْسَنِ تَقْوِيمٍ

আর-রহমান ও রহিম আল্লাহর নামে। শপথ তীন, যায়তুন ও তুর পর্বতের। আরো শপথ এই নিরাপদ নগরীর। অবশ্যই মানুষকে আমি সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম অবয়বে। [সুরা তীন, ৯৫ : ১-৪] 

তারপর তিনি বললেন, 

يَا أمير المؤمنين، فالإنسان أحسن الأشياء، ولا شي أحسن منه

‘হে আমিরুল মুমিনিন! মানুষই সবচেয়ে সুন্দর। মানুষের চেয়ে কোনো কিছুই অধিক সুন্দর নয়।’ [তাফসিরে কুরতুবি, ২০/১১৪] 

আব্দুল্লাহ নজিবের বইতে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে রোমান্টিক ডায়লগ পড়েছিলাম। যেখানে স্ত্রী স্বামীকে উদ্দেশ্য করে বলছে (নিজের মতো অনুবাদ করছি)-
انت مثل قمر
‘ওগো! তুমি না দেখতে চাঁদের মতো।’

মেয়েরা প্রশংসায় ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে থাকবে, তাতো হতেই পারেই না। স্বামী একটু পরেই বউকে ক্লীন বোল্ড করে বলল,

القمر يأخذ منك نوره يا شمس
“চাঁদের আলোতে আছে যতো কারুকার্য,
তা সবই তোমা থেকে পাওয়া, হে সূর্য!”

এগুলোও নিঃসন্দেহে অত্যুক্তি। তবে একজন কিন্তু ছিলেন সত্যিই চাঁদের চেয়ে সুন্দর। তিনি মুহাম্মাদ (সা:)। সাহাবি জাবির (রা.) তাই বলেছিলেন, ‘আমি জোৎস্নাস্নাত একরাতে রাসুলকে দেখলাম। আমি একবার তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলাম আরেকবার তাকাচ্ছিলাম চাঁদের দিকে। তাঁর গায়ে ছিল লাল পোশাক।’ সে পোশাকে রাসুল (সা:)-কে দেখে তিনি বললেন,

فَإِذَا هُوَ عِنْدِي أَحْسَنُ مِنَ القَمَرِ
‘আমার কাছে তাঁকে চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর লাগছিল।’ [তিরমিযি, হাদিস নং ২৮১১]

শুধু জাবির (রা.) না, সব সাহাবিরাই রাসূল (সা:)-এর চেহারায় চাঁদের সাদৃশ্য খুঁজে পেতেন। তিনি তো সত্যিকার অর্থেই চাঁদের চেয়ে সুন্দর ছিলেন। কাব ইবনু মালিক (রা.)- এর ভাষায় : 

كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سُرَّ اسْتَنَارَ وَجْهُهُ ، حَتَّى كَأَنَّهُ قِطْعَةُ قَمَرٍ
‘রাসুল (সা.) যখন আনন্দিত থাকতেন তখন তাঁর মুখখানি ঠিক যেন একফালি চাঁদের ন্যায় দ্যুতি ছড়াত।’ [সহিহ বুখারি, হাদিস নং ৩৫৫৬] 

হাদিসের কথাগুলো পড়লে আকুলতা জাগে। তাকে এক নজর দেখার ইচ্ছে জাগে। এ ইচ্ছার মধ্যেও সওয়াব রয়েছে। রাসুল (সা:) বলেছেন, ‘এ উম্মতের মধ্যে আমি তাদেরকে সবচেয়ে ভালোবাসি, যারা আমার পরে আসবে। কিন্তু তারা প্রত্যেকে আমাকে শুধু এক নজর দেখার জন্য এতোটাই আকুল থাকবে যে, নিজের পরিবার এবং সম্পদের বিনিময়ে হলেও তা কামনা করবে।’ [সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৮৩২] 

স্বপ্নে সম্ভব হলেও বাস্তবে তো আর তাঁকে দেখা সম্ভব না, তাই আশা রাখি এই ভালোবাসার বদৌলতে আখিরাতে আল্লাহ তায়ালা চাঁদের চেয়েও সুন্দর ঐ মুখখানিকে দেখার সৌভাগ্য দান করবেন।

দুনিয়ার কতো ত্রুটিপূর্ণ চেহারাকে আমাদের চাঁদের মতো মনে হয়। বাস্তবিকই যিনি চাঁদের চেয়ে সুন্দর ছিলেন তাঁকে দেখার অনুভূতি নিঃসন্দেহে বর্ণনাতীত হবে।

ঝালকাঠি আজকাল