• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

মিতব্যয়ী হয়ে মানুষের সহযোগী হওয়া ইসলামের শিক্ষা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২ নভেম্বর ২০১৯  

মিতব্যয়িতা মানে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সংযম-সতর্কতা অবলম্বন করা। কিংবা ‘আয় বুঝে ব্যয় করা’। ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করাকেও মিতব্যয়িতা বলা হয়। প্রতি বছর ৩১ অক্টোবর ‘বিশ্ব মিতব্যয়িতা দিবস’ পালন করা হয়। বাংলাদেশে সরকারিভাবে জাতীয় সঞ্চয় পরিদফতর এই উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।

ইসলাম মানুষকে অপব্যয়, অপচয় ও কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে। মিতব্যয়িতার নির্দেশও দিয়েছে অসংখ্যবার। মিতব্যয়ী হওয়া কোনো বিশেষ কোনো দিবসের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং সারা জীবনই মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করা ইসলামের বিধান।

বাড়াবাড়ি কিংবা সীমা লঙ্ঘন করা কোনোটিই ইসলামে অনুমোদিত নয়। মিতব্যয় মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে। অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না। ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার জীবন দর্শন হচ্ছে ইসলাম। আর মিতব্যয়িতা ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া নিষিদ্ধ। আবার প্রাচুর্যের সময় অপচয় অপব্যয় করে সম্পদ নষ্ট করাও জায়েজ নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আহার এবং পান করো, আর অপচয় করো না; তিনি (আল্লাহ) অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩২)

প্রাচুর্যের সময় খরচের উৎসবে মেতে না উঠে পরবর্তী সময়ে যেন হাত পাতার মতো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হতে হয়—এ বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। পবিত্র কোরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি একেবারে ব্যয়কুণ্ঠ হয়ো না এবং একেবারে মুক্তহস্তও হয়ো না, তাহলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।’ (বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৯)

অর্থ সঞ্চয় করে রাখা ইসলামের শিক্ষা
অপচয় ও কৃপণতা—এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে মধ্যমপন্থা হিসেবে মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখা ইসলামের শিক্ষা। যারা অপচয় এবং কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদেরকে নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যায়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৭)

আল্লাহ তাআলার রীতি হলো চেষ্টা ও উপায় অবলম্বনের ভিত্তিতে জীবিকা দান করা। তাই হালাল পন্থায় জীবিকা অর্জনের চেষ্টাকে ফরজ করা হয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে : ‘হালাল উপার্জনের সন্ধান অন্যান্য ফরজের পর একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ।’ (সুনানে কুবরা, বায়হাকি: ৬/১২৮)

সন্তানদের জন্য সঞ্চয় করতে ইসলামের আদেশ
অপব্যায় না করে সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবীজি (সা.) পছন্দ করেননি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদেরকে মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদেরকে সচ্ছল রেখে যাবে- এটাই উত্তম।’ (বুখারি, হাদিস: ১/৪৩৫; মুসলিম, হাদিস: ৩/১২৫১)

ইসলাম সঞ্চয়কে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছে তা আরও স্পষ্ট হয় রাসূলে কারিম (সা.)-এর হাদিস থেকে। আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘উত্তম দান তাই, যা নিজ অভাবমুক্ততা রক্ষার সঙ্গে হয়।’ (বুখারি, হাদিস: ২/১১২)

পরিমিত ব্যয় করে মানুষ দরিদ্র হয় না

কৃপণ না হয়ে ইসলাম নির্দেশিত খাতে খরচে কোনো রকম দ্বিধা না করে, হারাম পথে খরচের সব পথ বন্ধ করে দিয়ে; অপচয়-অপব্যয় না করার মাধ্যমে মিতব্যয়ী হলে দারিদ্রমুক্ত জীবন আল্লাহ তাকে দান করবেন। এটা রাসূলে কারিম (সা.)-এর ভবিষ্যতবাণী।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলে কারিম (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ: ৭/৩০৩)

অর্থাৎ যে ব্যক্তি অর্থব্যয়ে পরিমিতবোধের চর্চা করবে, অনটন তার নাগাল পাবে না। ইসলামের এ মহান শিক্ষাটি যথাযথ অনুসরণ না করার কারণে মানুষ উপার্জনের যাচিত সুফল থেকে বঞ্চিত। 

কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে মানুষ হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারে। ইসলাম এভাবে সঞ্চয় করে বিত্তশালী হতে নিষেধ করে না। বরং সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর আমলগুলো করা যাবে।

অর্থের প্রাচুর্য থাকলে জনকল্যাণমূলক নানা কাজে শরিক হওয়া যাবে। সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত ধারা চালু করা যাবে। আবার উদ্ধৃত অর্থ যখন নেসাব পরিমাণ হয়ে বর্ষপূর্ণ হলে জাকাতের মতো আরেকটি মহান ইবাদতেরও সুযোগ মিলবে। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

ঝালকাঠি আজকাল