• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

ভিসা ছাড়াই দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘার!

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৩০ অক্টোবর ২০১৯  

 

বাংলাদেশের সর্বোউত্তরের জেলা পঞ্চগড় যা হিমালয় কন্যা নামে পরিচিত। অপরূপ সৌন্দর্যের স্বপ্নের শহর তেঁতুলিয়া। এক দিকে মহানন্দা নদী আর অপরদিকে এশিয়ান হাইওয়ে। আবার ব্রিটিশ আমলের ডাক-বাংলো থেকে শুরু করে বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট সবকিছুই যেন অতুলনীয়। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া বাংলাদেশের একমাত্র স্থান যেখান থেকে অক্টোবর ,নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে দেখা যায় হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্টের চূড়া। তবে এ সময় আকাশ মেঘাছন্ন না থাকায় প্রতিদিন এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন নানান পেশাজীবীসহ ভ্রমণ পিপাসু মানুষেরা। বিশেষ করে এ সময়টাতে প্রতিদিন ভিড় জমাতে শুরু করেছে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার মহানন্দা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা পিকনিক কর্নারসহ বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে।

সরেজমিনে দেখা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের ডাকবাংলো থেকে সুস্পষ্ট দেখা মিলছে হিমালয়, কাঞ্চনজঙ্ঘা ও এভারেস্ট চূড়ার মনকাড়া অপরূপ দৃশ্য। সাধারণত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাঝেমাঝেই তাকে দেখা যায় তবে নিশ্চিত করে বলা যায়না কবে দেখা যাবে। তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা অধিকাংশ পর্যটক তেঁতুলিয়া আসেন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে কিন্তু ভাগ্য প্রসন্ন না হলে তার দেখা পাওয়া যায়না। বিশেষ করে তেঁতুলিয়া ডাক-বাংলো আর বাংলাবান্ধা দুই জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় এমনকি পঞ্চগড় শহর থেকেও মাঝে মাঝে এর দেখা মিলে। সকাল ৬টা থেকে ১০টা আর বিকাল ৪টা থেকে ৫ টা পর্যন্ত এই সময়টুকুতে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। তবে ভাগ্যে ভালো থাকলে তেঁতুলিয়া  ভালোভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যেতে পারে।

জানা যায়, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকেই এই দুর্লভ দৃশ্যের দেখা মিলে। অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মেঘমুক্ত আকাশে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার ডাকবাংলো ও জেলার বিভিন্ন স্থানের ফাঁকা জায়গা থেকে খালি চোখেই দেখা যায় কার্শিয়ং, হিমালয়, এভারেস্ট ও কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্য। এর জন্য বাইনোকুলারের প্রয়োজন হয় না। সূর্যের আলোর সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন সময় হিমালয়ের রূপও পরিবর্তিত হয়। যা প্রকৃতি প্রেমিদের আরও মুগ্ধ করে। উত্তর আকাশে দেখতে পাওয়া নয়নাভিরাম হিমালয় মূলত বরফে আচ্ছাদিত শুভ্র মেঘের মতো লাগে। তার সঙ্গে রয়েছে পিরামিডের মতো এভারেস্টের চূড়া। নিচের অংশে কালো ও সবুজ আকৃতির পাহাড়টি মূলত কাঞ্চনজঙ্ঘা।

ঢাকা থেকে আগত শারমিন আক্তার নামে এক পর্যটক দৈনিক অধিকারকে বলেন,আমি প্রথমবারের মতো পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বেড়াতে এসেছি। কিন্তু খুব সকালে তেঁতুলিয়ার মহানন্দা নদীর পাড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা পাবো তা বিশ্বাস করতে পারিনি। এটা দেখতে পেরে ভীষণ ভালো লেগেছে।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মাহামুদুর রহমান ডাবলু দৈনিক অধিকারকে বলেন,বছরের এ সময়টাতে তেঁতুলিয়ায় হাজার হাজার পর্যটক খালি চোখে হিমালয় দেখতে আসে। এখানে এছাড়াও কয়েকটি পিকনিক স্পট ও চা বাগানসহ কিছু দর্শনীয় জায়গা রয়েছে। যা সহজেও পর্যটকদের আকর্ষণ করে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তেঁতুলিয়া দেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে। 

তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো
তেঁতুলিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় জায়গাটি হলো ব্রিটিশ আমলের তৈরি জেলা পরিষদের ডাক-বাংলো যাকে ঘিরে এখন পিকনিক স্পট গড়ে উঠেছে। স্থানীয় মানুষের বেড়ানোর জায়গাও এই পিকনিক স্পট। এই ডাক-বাংলোর সীমানাকেই বাংলাদেশের শেষ সীমানা বলা হয় কারণ এর সীমানা হচ্ছে মহানন্দা নদী। ডাক-বাংলোতে বসেই আপনি ভারতের অংশ দেখতে পাবেন। যেকোনো জ্যোৎস্নায় প্রিয়জনের সঙ্গে ডাক-বাংলোতে রাত কাটানো সময় আপনার জীবনের সেরা একটা স্মৃতি হয়ে থাকতে পারে।

সমতল ভূমির চা বাগান
পঞ্চগড়ে সবচেয়ে বেশি সমতল চা বাগান আছে এই তেঁতুলিয়া উপজেলায়। নদীর পাড়ের চা বাগানগুলোর সৌন্দর্য বলে বোঝান সম্ভাবনা। এক বিকেল মহানন্দার পাড়ে বসে এই চা বাগান দেখে দেখে পার করে দেওয়া যাবে।

মহানন্দা নদী
মহানন্দা নদী বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্ত নির্ধারণ করে। সারাদিন মানুষ পাথরে তুলে নদী থেকে আর এই পাথরের উপরই নির্ভর করে অধিকাংশ মানুষের জীবিকা। নদীতে পানি খুবই অল্প আপনি চাইলে মাঝ নদী পর্যন্ত হেটেই যেতে পারবেন।

 এশিয়ান হাইওয়ে
এশিয়ান হাইওয়ে যেকোনো বাইকারের মাথা নষ্ট করার জন্য যথেষ্ট। দুই পাশে যতদূর চোখ যাবে তত দূর শুধু মাঠ। 

মানুষ ও খাবারের মান
এখানকার মানুষগুলো এক কথায় অসাধারণ। খুবই সাধারণ জীবন যাপন করে সবাই। সারাদিন কাজ আর সন্ধ্যায় সবাই বাজারে আড্ডা। তেঁতুলিয়ায় খাবার যেমন সস্তা ঘুরতেও পারবেন তেমন সস্তাতেই। এখানে রয়েছে বাংলা হোটেল, নুরজাহান হোটেল ও শাপলা হোটেল। তবে বাংলা হোটেল খাবারের জন্য বিখ্যাত সব থেকে পুরানো হোটেল। 

আবাসিক হোটেল
তেঁতুলিয়ায় রাত যাপনের জন্য ডাক-বাংলোর কোন তুলনা কম। এখানে রাত যাপনের জন্য বর্তমানে সীমান্তের পাড়, কাজী ব্রাদার্স, আরডিআরএস বাংলো, তেঁতুলিয়া ইকো পার্কের বাংলো রয়েছে। এছাড়াও সরকারি জেলা পরিষদ ডাক বাংলো, বেরং কমপ্লেক্স রয়েছে।

যেভাবে যাবেন
রাজধানী ঢাকার গাবতলি ও কল্যাণপুর থেকে পঞ্চগড়, তেঁতুলিয়া আর বাংলাবান্ধার জন্য ছেড়ে আসে। যারা একদিনের জন্য আসতে চান তাদের বাংলাবান্ধার বাসে আসাই ভালো। সকালে বাংলাবান্ধা থেকে ঘুরাঘুরি শুরু করবেন তারপর তেঁতুলিয়ায় সারাদিন ঘুরে রাতের বাসে তেঁতুলিয়া থেকে ঢাকা। তবে যারা একটু সময় নিয়ে আসবেন তারা তেঁতুলিয়ার বাসে এসে পঞ্চগড় শহর থেকে ১০ কি.মি পরে বোর্ড বাজারে নেমে মহারাজার দিঘী দেখে পরে তেঁতুলিয়ার লোকাল বাসে তেঁতুলিয়া এসে সেদিন সারাদিন তেঁতুলিয়া দেখে পরের দিন বাংলাবান্ধা ঘুরে আসতে পারেন। 

ঝালকাঠি আজকাল