• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

বান্দার জন্য কোরআন ও রোজার সুপারিশ

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২২ এপ্রিল ২০২১  

মহিমান্বিত রমজান মাস। আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে এ মাসে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে রমজান মাসের এই বৈশিষ্ট্য কেউ এমনিতেই লাভ করতে পারে না। নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও হক আদায় করে সিয়াম সাধনার মাধ্যমেই এগুলো অর্জন করা সম্ভব। নিম্নে তদসংশ্লিষ্ট কোরআন ও হাদিসের বর্ণনাগুলো তুলে ধরা হলো।

রমজান মাসের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক
রমজানের সঙ্গে কোরআনের সম্পর্ক খুবই নিবিড়। আল্লাহ তায়ালা কোরআন ও রমজানের প্রসঙ্গ কয়েক জায়গায় একসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রমজান ওই মাস যে মাসে কোরআন নাজিল করা হয়েছে, যা মানব জাতির জন্য পথপ্রদর্শক এবং (যাতে রয়েছে) সৎপথ পাওয়ার ও সত্যকে মিথ্যা থেকে পৃথক করার উত্তম উজ্জ্বল প্রমাণাদি।’ (সুরা বাকারা, আয়াত নং-১৮৫) আল্লামা শিব্বির আহমদ উসমানি (রাহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, ‘হাদিসে এসেছে হজরত ইবরাহি (আ.) এর সহীফা, তাওরাত ও ইঞ্জিল সবই রমজান মাসে নাজিল হয়েছিল। 

কোরআন মাজিদও রমজানের লাইলাতুল কদরে লৌহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে সবটুকু এক সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছিল। এরপর অবস্থার প্রেক্ষিতে অল্প অল্প করে হুজুর (সা.) এর উপর নাজিল হতো। প্রতি রমজানে অবতীর্ণ অংশটুকু হজরত জিবরাইল (আ.) নবীজী (সা.)কে শুনিয়ে দিতেন। এসব ঘটনা থেকে রমজান মাসের ফজিলত ও কোরআন মাজিদের সঙ্গে এ মাসের সম্পর্ক স্পষ্ট হয়।’ (তাফসিরে উসমানি) অন্যত্র ইরাশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় আমি কোরআন নাজিল করেছি শবে কদরে। আপনি জানেন, শবে কদর কী? শবে কদর হাজার মাস থেকে উত্তম।’ রমজানের সঙ্গে কোরআনের এই গভীর সম্পর্কের কারণে তারবির নামাজের বিধান দেয়া হয়েছে, যে নামাজে পূর্ণ কোরআন তেলাওয়াত করে শেষ করতে হয়। 

সহীহ বুখারি ও মুসলিম শরীফে এসেছে, হজরত জিবরাইল (আ.) রমজানে নবীজী (সা.) এর সঙ্গে কোরআন শরীফের ‘দাওর’ করতেন। ‘দাওর’ বলা হয় কোরআনের তেলাওয়াত একজন অন্যজনকে শুনানো। এজন্য রমজানকে অনেকে কোরআনের ‘দাওর’ এর মাস বলে থাকেন। ইবনে রজব হাম্বলি (রাহ.) বলেন, ‘রমজান মাসে একজন আরেকজনকে কোরআন শুনানো মুস্তাহাব, যা এই হাদিস দ্বারা প্রমাণ হয়।’ 

অতএব রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে কোরআন তেলাওয়াত ও এর অর্থ ও তাফসির জানা। আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং কোরআন তেলাওয়াতের ফজিলত বলে দিয়েছেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার প্রত্যাশা করতে পারে যা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নয়’। (সুরা ফাতির, আয়াত নং ২৯-৩০) 

বান্দার জন্য কোরআনের সুপারিশ 
হাশরের ময়দানে বান্দার নেক আমল নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, দান-সদকাসহ সব ইবাদতের একটা আকৃতি থাকবে এবং বান্দার মুক্তির জন্য সেগুলো পথপ্রদর্শক হবে। এ সবের মাঝে কোরআনের ভূমিকা থাকবে বেশি। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, ‘কোরআন ও রোজা আল্লাহ তায়ালার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশাত মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। 

কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তখন আল্লাহ তায়ালা সুপারিশ কবুল করে নিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) সহীহ মুসলিমের হজরত আবু উমামা আল বাহিল্লি (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, ‘ তোমরা কোরআন পড়ো, কেননা তেলাওয়াতকারীদের জন্য কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আসবে।’ (সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৮০৪) 

সহীহ ইবনে হিব্বানে এসেছে, ‘কোরআন এমন সুপারিশকারী যার সুপারিশ কবুল করা হবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পথপ্রদর্শক বানাবে কোরআন তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তি কোরআনকে পশ্চাতে ফেলে রাখবে কোরআন তাকে জাহান্নামে পাঠাবে।’ (হাদিস নং-১২৪)  তাছাড়াও খাস খাস কিছু সুরা ও আয়াতের সুপারিশের কথা এসেছে। 

যেমন হজরত আবু হুরাইরা (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, ‘আল কোরআনে ত্রিশ আয়াতের একটি সুরা রয়েছে, যা তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ করবে, এমনকি এর সুপারিশের উসিলায় আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দিবেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাছির, খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-১৫০) এজন্য নবীজী (সা.) আকাঙ্ক্ষা করেছেন, যেন তা প্রত্যেক উম্মতের ভেতরে থাকে। 

কোরআন যাদের বিপক্ষে যাবে 
তেলাওয়াতকারীর জন্য কোরআন সুপারিশ করলেও কারো কারো বিপক্ষেও কোরআন দাঁড়াবে, বিশেষভাবে যারা কোরআনের হক আদায় করে না। সহীহ মুসলিমে এসেছে, ‘কোরআন তোমার পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষী হবে।’(সহীহ মুসলিম-২২৩) হক আদায় না করার অর্থ হচ্ছে, তেলাওয়াত, অধ্যয়ন ও আমলের দিক থেকে কোরআনকে পরিত্যাগ করা। 

বান্দার জন্য রোজার সুপারিশ 
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) সূত্রে বর্ণিত, নবীজী (সা.) বলেন, ‘কোরআন ও রোজা আল্লাহ তায়ালার কাছে সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, ‘আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের খায়েশাত মিটানো থেকে বিরত রেখেছিলাম। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের ঘুম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব আমাদের সুপারিশ কবুল করুন। তখন আল্লাহ তায়ালা সুপারিশ কবুল করে নিবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) 

তবে সুপারিশকারী হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে রোজার হক আদায় করে তা পালন করা। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, ‘রোজা বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষার ক্ষেত্রে ঢাল স্বরূপ। অতএব রোজাদারের উচিত কোন অশ্লীল কথা না বলা, গুনাহের কাজে লিপ্ত না হওয়া। কেউ যদি তাকে গালি দেয় বা হত্যা করতে আসে সে যেন বলে দেয় আমি রোজাদার।’ (সহীহ বুখারি ও মুসলিম) 

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, নবীজী (সা.) বলেন, ‘ যে ব্যক্তি রোজা রেখে অশ্লীল কথা ও গুনাহের কাজ না ছাড়বে, তো আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই তার পানাহার ছাড়ার প্রতি ।’ তাই রোজাকে সুপারিশকালী হিসেবে পেতে হলে করণীয় হচ্ছে তার হক আদায় করে রোজা রাখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মহায় হন। আমিন।

ঝালকাঠি আজকাল