• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:

বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার-চাঁদাবাজির মামলা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২০  

ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত ও বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও চাঁদাবাজির অভিযোগে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার (৭ জুন) সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মাে. ইব্রাহিম হােসেন বাদী হয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এ মামলা করেন। মামলা নম্বর ৩।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার ও অজ্ঞাত আরও কয়েকজন। তবে খালেদ ছাড়া অপর উল্লিখিত আসামিরা অর্থপাচারে খালেদকে সহযোগিতা করেছেন মর্মে জানা যায়।

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া (৪৬), ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত অবৈধ প্রভাব বিস্তার ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীর কমলাপুরের রেলভবন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, পানি উন্নয়ন বাের্ড, যুব ভবন, কৃষি ভবন, ঢাকা ওয়াসার ফকিরাপুল জোন ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সব প্রকল্পের কাজের টেন্ডার একচ্ছত্রভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছেন। পছন্দমতো প্রকল্পের কাজ নিজের মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস লিমিটেড, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রোপার্টিজের নামে এসব কাজ করায়াত্ত করেন। অবশিষ্ট প্রকল্পের কাজের জন্য অন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে ২ থেকে ১০ শতাংশ হারে নগদ চাঁদা আদায় করেন।

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা যেমন- মতিঝিল, সবুজবাগ, খিলগাঁও, কমলাপুর, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মাছের বাজার, কোরবানির পশুর হাট, সিএনজি স্টেশন, গণপরিবহন থেকে ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে অর্থ আদায় ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অপরাধলব্ধ আয় করেন। রাজধানীর শাহজাহানপুরে রেলওয়ের জমিতে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ ও বিক্রয় করে অবৈধভাবে লাভবান হন। এছাড়া মতিঝিলের ‘ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে’ অবৈধ ক্যাসিনাে পরিচালনার মাধ্যমেও তিনি বিপুল পরিমাণ অবৈধ আয় করেন। তার মালিকানাধীন ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপারস, অর্ক বিল্ডার্স এবং অর্পণ প্রোপার্টিজ থেকে তিনি অপরাধকার্য পরিচালনা করেছেন বলেও মামলায় উল্লেখ করা হয়। এসব অপরাধলব্ধ আয় তার নিজ নামে ও তার স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বর্ণিত প্রতিষ্ঠানের হিসাবসমূহে লেনদেন করেন।

মামলার নথি সূত্রে আরও জানা যায়, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার এ৪, ১৯৫, উত্তর শাহজাহানপুর, ঢাকায় আরবি বিল্ডার্সের নির্মিত ফ্ল্যাট যার আয়তন ১২৫০ বর্গফুট, গুলশান-২ এ ৩৫০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট এবং মােহাম্মদপুর কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে একটিসহ রাজধানীতে মােট তিনটি ফ্ল্যাট বা বাসার সন্ধান মিলেছে। এছাড়া তার নিজ নামে একটি ২০১৬ সালের মডেলের প্রাডো, একটি নোয়াহ গাড়ি আছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, তিনি আয়ের উৎস গােপন করতে আইয়ুব রহমানের সহযােগিতায় মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে অবৈধভাবে পাচার করেন। গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর গুলশান থানায় দায়ের করা মানি লন্ডারিং মামলার তদন্তকালেও মালয়েশিয়ার মাইব্যাংকের একটি আরএইচবি ব্যাংকের একটি; সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকের একটি এবং থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকের একটি এটিএম ডেবিট কার্ড জব্দ করা হয়।

সিআইডি অনুসন্ধানের তথ্য উল্লেখ করে জানায়, ২০১৮ সালের মে মাসে খােলা মালয়েশিয়ার মাইব্যাংক ও আরআইআইবি ব্যাংকের চারটি হিসাবে আসামি খালেদের নামে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ লাখ ৫৭ হাজার মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত যার মধ্যে দুটি সঞ্চয়ী হিসাবে ২২ লাখ ৫৭ হাজার এবং দুটি এফডিআর হিসাবে মােট তিন লাখ রিঙ্গিত পাওয়া যায়। ২০১৮ সালের ৪ মে ইস্যু করা মালয়েশিয়ার ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ ৩ মে ২০২১। ভিসাটিতে “MYS MY 2 HOME" লেখা আছে, যা সেকেন্ড হোম ভিসা নামে অধিক পরিচিত। এই সেকেন্ড হােম ভিসার পূর্বশর্ত হিসেবে মালয়েশিয়ায় সে এফডিআর করেছে মর্মে জানা যায়।

শুধু তাই নয়, সিঙ্গাপুরে খালেদ অর্পণ ট্রেডার্সের নামে একটি ইলেকট্রনিক্স পণ্যবিপণি প্রতিষ্ঠান খোলেন। ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকে মালিকানাধীন একই প্রতিষ্ঠানের নামে একটি চলতি হিসাব খোলেন। যেখানে ৫ লাখ ৫ হাজার সিঙ্গাপুর ডলারের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা শেয়ারহােল্ডার সিঙ্গাপুর নাগরিক আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার ও আইয়ুব রহমানের সহযােগিতায় এই টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যায়।

২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার নামে থাইল্যান্ডের ব্যাংকক ব্যাংকে আরও একটি হিসাব খােলেন, যাতে ১০ লাখ থাই বাথ জমা হয়। এই টাকাও আইয়ুব রহমানের সহযােগিতায় হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা হয়। থাইল্যান্ডে দীন মজুমদার সে টাকা তার হিসাবে জমা করেন।

উল্লিখিত তিন দেশের ব্যাংক হিসাবে ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত খালেদের মােট স্থিতির পরিমাণ প্রায় আট কোটি ৫০ টাকার সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, যা আসামি আইয়ুব রহমান, আবু ইউনুস ওরফে আবু হায়দার, দীন মজুমদার ও অজ্ঞাত আসামিদের সহযােগিতায় বাংলাদেশ থেকে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে দেশের বাইরে পাচার করে।

আসামি খালেদের পাসপাের্টে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও চীনের ভিসা রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে মালয়েশিয়া সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে তার ৭০ বার ভ্রমণের তথ্য পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে সম্পৃক্ত অপরাধে জড়িত থাকা ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পত্তি অর্জনের দায়ে মতিঝিল, গুলশান থানায় মাদক, মানি লন্ডারিং, দুদক আইনসহ ছয়টি মামলা তদন্তাধীন।

ঝালকাঠি আজকাল