• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

বঙ্গবন্ধুর জয়ে জনতার উল্লাস, বাঙালি এগিয়েছে ২৫ বছর

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৭ মার্চ ২০২১  

৭ মার্চ, ১৯৭৩। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এদিন। ২৮৮টি আসনে সরাসরি ভোটে বাংলার জনতা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। বহুল প্রতীক্ষিত এ সাধারণ নির্বাচন ছিল ইতিহাসের অনন্য উপহার। সংগ্রামের উত্তাল তরঙ্গ অতিক্রম করে রক্ত-সাগরে ভেসে জন্ম হয়েছে যে নতুন জাতির, সেই বাঙালি মুখোমুখি হয়েছিল আপন বিবেক-বুদ্ধির। এর আগে ১৯৭০ সালেও একবার ব্যালটের মাধ্যমে রায় দিয়েছিল বাঙালি। তবে সে ছিল এক অন্ধকারময় যুগের কাহিনি।

কেন ৭ই মার্চ?
নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ১৫ মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত হয় এই নির্বাচন। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রত্যক্ষ নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ এই দিন দেশের সর্বোচ্চ আইন প্রণয়নকারী সংস্থা জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচন করে।

সকাল আটটা থেকে ভোট শুরু হয়। বিকাল চারটা পর্যন্ত চলে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আজকের দিনটিও নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু ডাক দিয়েছিলেন স্বাধীনতার। মুক্তিসংগ্রামের দিনটিকে স্বরণীয় করে রাখতেই এই তারিখ নির্ধারণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনের জন্য।

সেদিন জাতীয় সংসদের ৩শ আসনের মধ্যে নির্বাচন হয় ২৮৮টিতে। ১১টি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়। একজন প্রার্থীর মৃত্যুতে একটি আসনে নির্বাচন স্থগিত হয়।

ভোটকেন্দ্রগুলোতে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ছিল পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। নির্বাচন পরিচালনার জন্য সারাদেশে নিয়োগ করা হয় প্রায় দুই লাখ কর্মচারী। নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর সরকার বারবার তাদের আন্তরিক সহযোগিতার কথা ঘোষণা করেন।

এ নির্বাচনের আরেক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো একাধিক আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্থানে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম এ জলিল। তিনি বাকেরগঞ্জে ৬টি ও ঢাকায় সাতটি আসনে প্রার্থী ছিলেন।

 বঙ্গবন্ধুর জয়ে জনতার উল্লাস
জাতীয় সংসদের নির্বাচনে ঢাকার দুটি আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগকর্মীসহ বিপুল জনতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অভিনন্দন জানাতে গণভবনে ভিড় করেন। বঙ্গবন্ধুকে সেদিন ব্যাপকভাবে মাল্যভূষিত করা হয়। বাসসের খবরে জানানো হয়, আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, শিল্পমন্ত্রী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ডাক ও তারমন্ত্রী মোল্লা জালালসহ বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতা ও বঙ্গবন্ধুকে অভিনন্দন জানাতে গণভবনে যান।

এর আগে বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। সময় সকাল ৯ টায়। বঙ্গবন্ধুকে সেসময় বেশ উৎফুল্ল দেখাচ্ছিল। সঙ্গে ছিলেন বেগম মুজিব ও ছোট্ট শেখ রাসেল। বঙ্গবন্ধু ধীরে ধীরে হেঁটে ভোটকেন্দ্রের পুরুষ সারির দিকে এবং লাল পেড়ে সাদা শাড়ি পরা বেগম মুজিব মহিলা বুথের দিকে যান। ভোটদানের পর বঙ্গবন্ধু চারপাশে সমবেত জনতার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং কয়েকজন নারী স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে আলাপ করেন।

 শতকরা ৮২
আওয়ামী লীগ প্রধান জাতির জনক প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা ১২ ও ঢাকা ১৫ আসনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। ঢাকা আসনে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার চার ’শ এক ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৩৬ হাজার ৬শ ৭২ জন ভোট দেন। সেখানে বঙ্গবন্ধু পান ১ লাখ ১৩ হাজার ৩শ ৮০ ভোট। বঙ্গবন্ধুর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যথাক্রমে ১৭ হাজার ৩শ ৪৮ ও ৫ হাজার ৯শ ৪৪ ভোট পান। এতে কাজী জাফর আহমেদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।

ঢাকা-১৫ আসনে বঙ্গবন্ধুর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী জাসদ প্রধান অবসরপ্রাপ্ত মেজর এম এ জলিল। এই আসনে বঙ্গবন্ধু পান ৮১ হাজার ৩শ ৭০ ভোট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পান ১৪ হাজারের কিছু বেশি ভোট।

২৫ বছর এগিয়েছে
ন্যাপ নেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বলেন, এবারের নির্বাচনে বাংলার মানুষ মুক্তির পথে ২৫ বছর এগিয়ে গেছে। তিনি বলেন, বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের চেতনা দেখে তিনি আনন্দিত। ‘এবার আমি শান্তিতে মরতে পারবো।’ নির্বাচনের দিন রোগশয্যায় ৯২ বছর বয়সী জননেতা এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই তাঁর অনুভূতি জানান।

ঝালকাঠি আজকাল