• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলবদের চিহ্নিত করতে কমিশন

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৮ আগস্ট ২০১৯  

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর ঘটনাক্রম ও ষড়যন্ত্র উদঘাটন, এর পৃষ্ঠপোষক, মদদদাতা ও পটভূমি রচনাকারীদের চিহ্নিত করতে কমিশন গঠনের জোর চিন্তাভাবনা চলছে সরকারি মহলে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনি দিকগুলো নিয়ে পর্যালোচনা চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। আগামী সোমবার বা পরবর্তী মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশনা চাইবেন আইনমন্ত্রী। 

এই কমিশনের প্রধান কে হবেন, কারা থাকবেন এর সঙ্গে, রূপরেখা কী হবে, তাদের কাজের আওতা কতটুকু, তদন্ত কাজে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হবে সে বিষয়গুলো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। পৃথিবীর যেসব দেশে এ ধরনের কমিশন কাজ করেছে তাদের কর্মপদ্ধতি ও রিপোর্ট বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা চলছে। একাধিক বঙ্গবন্ধু গবেষক এ নিয়ে তাদের চিন্তাভাবনা ও পর্যালোচনা তৈরি করে রেখেছেন।

সূত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের সাবেক কোনো জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে কমিশনপ্রধান করা হতে পারে। তার সঙ্গে একাধিক বিচারপতি, আইনজীবী, গবেষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থাকতে পারেন।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান, সরকারপ্রধান বা সম পর্যায়ের কোনো ব্যক্তি নিহত হলে বিচারিক আদালতের বিচার সম্পন্ন করার পাশাপাশি কমিশন গঠন করা হয়ে থাকে। যাতে পূর্বাপর সব ঘটনা এবং এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবার সম্পর্কে জনগণ ও প্রজন্ম জানতে পারে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিহত প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি হত্যাকান্ডের পূর্বাপর ঘটনা ও ষড়যন্ত্র উদ্‌ঘাটনে ওয়ারেন কমিশন, ভারতের নিহত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য ঘড়যন্ত্র উন্মোচনে ঠাকুর ও জৈন কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সে কমিশন তাদের রিপোর্ট পেশ করেছিল জাতির সামনে।

কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্তদের বিচার ২১ বছর পর শুরু হলেও তার সঙ্গে জড়িত অন্যরা আড়ালেই থেকে গেছে। এ হত্যাকাণ্ডের পটভূমি রচনাকারী, নেপথ্য মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক ও দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের মুখোশ উন্মোচন করা সম্ভব হয়নি ৪৪ বছরেও। গত কয়েক বছর ধরে এ দাবিটি সামনে এলেও এ নিয়ে সরকারের কোনো চূড়ান্ত অবস্থান লক্ষ করা যায়নি। এবার বিষয়টিকে আমলে নেয়া হয়েছে এমন দাবি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী এবং সরকারদলীয়দের।

জানতে চাইলে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ ঘটনাক্রম জাতির সামনে তুলে ধরতে সরকার সিরিয়াসলি কমিশন গঠনের চিন্তাভাবনা করছে। বিষয়টি নিয়ে তারা অনেক দূর এগিয়েছে। যেহেতু এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কমিশন হবে, সেহেতু এর রূপরেখা এবং কাঠামো কী হবে তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের মতামত চাওয়া হবে। তাই মন্ত্রিসভার আসন্ন কোনো বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় বিষয়টি উত্থাপন করা হবে। সেখানকার নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব ও পটভূমি রচনাকারীদের চিহ্নিত করে জাতির সামনে মুখোশ উন্মোচন করা এখন সময়ের দাবি। এ জন্য কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশকে হত্যা করার জন্য। এর পেছনে যে ষড়যন্ত্রকারী, মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষক রয়েছে তাদের চিহ্নিত করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বঙ্গবন্ধু গবেষক অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড শুধু একজন ব্যক্তিকে হত্যা করা নয়। একজন রাষ্ট্রপ্রধান বা রাষ্ট্রকে হত্যা করা হয়েছে এর মাধ্যমে। কেন, কারা এর সঙ্গে নানা পরিক্রমায় যুক্ত তা জাতির জানা উচিত। তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধান নিহত হলে বিচারিক আদালতের পাশাপাশি পূর্বাপর ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনার জন্য কমিশন গঠন করে রিপোর্ট জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এর নজির আছে। কিন্তু বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৪ বছরেও এ ধরনের উদ্যোগ দেখিনি। এবার এমন কমিশন গঠনের সম্ভাবনা তৈরি হতে যাচ্ছে জনমতের চাপে।’

তিনি বলেন, ৩ বা ৫ সদস্যের একটি কমিশন গঠন করা যেতে পারে। যার প্রধান একজন বিচারপতি হতে পারেন। এই কমিশন হত্যাকাণ্ডের বেনিফিশিয়ারিদের কর্মকাণ্ড, বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গ ও তাদের দায়িত্ব পালন, মোশতাক সরকারের সহযোগীদের কর্মকাণ্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব বিষয় খতিয়ে দেখবে।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, তিনিসহ দেশের ও বিদেশের অনেকের কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পূর্বাপর ঘটনাক্রমের অনেক তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। প্রয়োজন হলে তিনি এ বিষয়ে সাক্ষী দিতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু ১৪ আগস্ট কারা, কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বোমা বর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছিল, কারা কেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারতীয় হাই কমিশনার সমর সেনকে অপহরণ করতে চেয়েছিল, ১৫ আগস্টের পরের দিন যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দচিত্তে ঘোরাঘুরি করছিলেন তারা কারা তার স্বরূপ উন্মেচিত হওয়া উচিত। 

ঝালকাঠি আজকাল