• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

পেঁয়াজ ছাড়াও হয় মজাদার রান্না

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৯  

টেলিভিশন বা পত্রিকা খুললেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। বাপরে বাপ, এতো দাম পেঁয়াজের! এতো সাধ করে বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে মজাদার সব ভুনা, ঝোল, ভাজি রান্না হতো, এতো দাম বাড়লে সেটা কীভাবে সম্ভব?

সম্ভব, কারণ পেঁয়াজ ছাড়াও রান্না হয়। ভালোভাবেই হয়। এমনকি স্বাদে এমন কোনো তারতম্য হয় না। পেঁয়াজ ছাড়া দেখুন না রান্না করে, দেখবেন এক্সপেরিমেন্টও হলো, খাবারে আবার আলাদা স্বাদ পাচ্ছেন দেখবেন। কিছু ধারণা থাকছে আপনার জন্য-

শুক্তো

পেঁয়াজ ছাড়া রান্নার কথা ভাবলেই মাথায় আসে নিরামিষ রান্নার কথা। আর শীতের মরসুমে নানা রকমের সবজি দিয়ে শুক্তো রান্নার মজাই আলাদা। অল্প মেথি, মৌরি বা পাঁচফোড়ন বাগাড় দিয়ে পছন্দের সবজির সাথে দুধ বা নারকেল বাটা বা সর্ষে দিয়ে খুব কম সময়েই বানানো যায় এই পদটি৷ পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় এই রান্নায় পেঁয়াজ, রসুন একদমই দেওয়া হয় না।

পেঁয়াজ ছাড়া মাংস রান্না​র রেসিপি

পেঁয়াজ ছাড়া কখনো মাংস রান্না হয় নাকি! পেঁয়াজে মশলা আর মাংস মিশিয়ে কষিয়ে মাংস ভুনা বা ঝোল রান্না হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এই পেঁয়াজের বাজারে বেশি করে পেঁয়াজ দিয়ে মাংস খাওয়া অসম্ভব বলে একমদই মাংস খাওয়া হবে না, তা তো না। পেঁয়াজ ছাড়াও মাংস খাওয়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে অন্যান্য মশলার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। আর সবচেয়ে ভালো হয় মাংসটি মেরিনেট করে রাখলে।

পরিমাণমতো মাংস, রসুন বাটা, আদা বাটা, হলুদ, মরিচ, ধনিয়া, জিরা, দই, তেজপাতা, গরম মসলা, জয়ত্রী গুঁড়া, লবণ ও তেল পরিমাণমতো দিয়ে মেরিনেট করে রেখে দিন একঘণ্টা।

এবার পাত্র চুলায় দিয়ে মাংস কষিয়ে নিন। এবার পরিমাণমতো গরম পানি দিয়ে ঢেকে রাখুন। পানি শুকিয়ে তেল ওপরে উঠলে নামিয়ে গরম পরিবেশন করুন। সঙ্গে আলু কিংবা পেঁপে একটু বেশি সেদ্ধ করে দিতে পারেন। ঝোলটা ঘন হবে। চাইলে ক্যাপসিকামও দিতে পারেন।

আবার মাশরুম দিয়ে মাংস রান্না করলেও পেঁয়াজের ঘাটতিটা অনেক সময় পূরণ হতে পারে।

খিচুড়ি

আপনি চাইলে পেঁয়াজ ছাড়া খিচুড়িও খেতে পারেন। এই একটু একটু ঠাণ্ডা পরিবেশে খিচুড়ি খেতে অবশ্যই ভালো লাগে। এই শীতের মৌসুমে উঠতি শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি জম্পেশ খাওয়া যায়, এবং সেটা পেঁয়াজ ছাড়া। সেক্ষেত্রে সবজি এবং চাল-ডালের অনুপাত ঠিক রেখে খুব সাধারণভাবেই আপনি খিচুড়ি রান্না করে নিতে পারেন। রসুন, আদা, জিরা এবং গরম মশলার পরিমাণটা একটু বেশি করেই দিলেন। নামানোর আগে কাচামরিচ এবং গোটা রসুন ছেড়ে দিন খিচুড়িতে।

মুগডালের খিচুড়ি

নিরামিষ খিচুড়ি মূলত করা হয় মুগের ডাল দিয়ে। রসুন বা পেঁয়াজের জায়গায় বাগাড় দেয়া হয় পাঁচফোড়ন, শুকনা মরিচ বা গরম মশলা দিয়ে। আদাবাটার সাথে নানা রকম সবজিও দেয়া হয় এই খিচুড়িতে।

লাবড়া

পাঁচমিশালি সবজির আরেকটি নাম লাবড়া। সাধারণত হিন্দুদের পুজোবাড়িতে নিরামিষ খিচুড়ির সাথে খাওয়া হয় এই লাবড়া। আলু, মিষ্টি কুমড়া, বাঁধাকপি, ফুলকপি, সিম ও বেগুনের এই সবজি রান্না করতে ব্যবহৃত হয় শুকনা মরিচ, পাঁচফোড়ন ও তেজপাতা। অনেক সময় ধরে কষিয়ে মাখামাখা এই পদটি শুধু রুটি দিয়েও খেতে পছন্দ করেন অনেকে।

ইলিশের তেল ঝোল

বাংলাদেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গেও রয়েছে ইলিশের নানা রকমের রান্নার জনপ্রিয়তা। তার মধ্যে রয়েছে বিখ্যাত ইলিশের ‘তেল ঝোল’, যা অন্য মাছ দিয়েও করা হয়। শুধু কালোজিরের বাগাড় ও কাঁচামরিচের স্বাদের উপর ভিত্তি করেই করা হয় এই রান্নাটি। কেউ কেউ মাছের সাথে ডালের বড়ি ভাজা দিয়েও এই রান্নাটি করে থাকেন।

বিভিন্ন ভাজি আর ভর্তা

বিভিন্ন ভাজিতে একটু বেশিই পেঁয়াজ খেতে ভালো লাগে। কিন্তু একটু মচমচে ভাজিতে পেয়াজ না দিলেও চলে। আর ভর্তাতে একটু অন্য মাত্রা আনুন। রসুনের পাতা, কাঁচা টমেটো, ধনেপাতা দিয়ে সুন্দর মুখরোচক ভর্তা বানিয়ে ফেলুন।

আরও কিছু টিপস

পিঁয়াজু , ডিম ভাজি ইত্যাদি তৈরিতে পেঁয়াজের বদলে ব্যবহার করতে পারেন মুলা বা পেঁপে। হ্যাঁ, চিকণ করে মুলা বা পেঁপে ঝুরি করে, পানিতে ভালো করে ধুয়ে চিপে নিলেই ব্যবহারের জন্য একদম তৈরি। পেঁয়াজ তো কম লাগবেই, সঙ্গে দারুণ সুস্বাদু হবে পেঁয়াজু কিংবা ডিম ভাজি।

ঘন, থকথকে ঝোল খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করে পাতলা ঝোলের তরকারি খেতে পারলে সবচাইতে ভালো। সেটা স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। আর ঘন ঝোল খেতে চাইলে পেঁয়াজ দিয়েই যে খেতে হবে, সেটা কিন্তু নয়। আপনি আলু সেদ্ধ করে মিহি করে চটকেও ব্যবহার করতে পারেন ঝোল ঘন করতে। এমনকি ভুনা তরকারিতেও দিতে পারেন। কেউ বুঝতেই পারবে না।

পেঁয়াজ ব্যবহার না করে রসুনের ব্যবহারের দিকে একটু জোর দিতে হবে। গরম তেলে রসুন ও শুকনা মরিচের ফোঁড়ন দারুণ সুবাস তৈরি করে। ডাল কিংবা বিভিন্ন ধরনের ভাজি এভাবেই তৈরি করা যাবে।

পেঁয়াজের বদলে স্প্রিং অনিয়ন কিংবা পেঁয়াজ কলি রান্নায় ব্যবহার করলে তরকারিতে পেঁয়াজের স্বাদ ও গন্ধ পাওয়া যাবে।

সয়াবিন তেলে রান্না না করে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এই তেল খাবারে স্বাদ বাড়াবে।

পেঁয়াজের পরিবর্তে বেল পেপার কিংবা ক্যাপসিকাম ব্যবহার করতে পারেন। ক্যাপসিকাম খাবারের স্বাদ বাড়াবে। ভাজি, মাছ বা মাংসের ঝোলে ক্যাপসিকামের ঝাঁঝালো স্বাদ ও গন্ধ ভালো।

মাংস কিংবা মাছের ঝোল ঘন করতে পেঁয়াজের বদলে পরিমাণমতো পেঁপে বাটা ব্যবহার করতে পারেন। এতে মাছ-মাংসের আঁশটে গন্ধ দূর হবে ও ঝোলও ঘন হবে। রান্নায় টমেটো বাটার ব্যবহার খুব সহজেই যেকোন খাবারকে সুস্বাদু করে তুলবে। যেকোনো খাবার রান্নাতেই টমেটো মানিয়ে যায়।

আর ডাল রান্নার ক্ষেত্রেও যে পেঁয়াজ ছাড়া ডাল তেলে দেওয়া সম্ভব, সেটাও জানুন। ডালে জলপাই, টমেটো দিন। তেলে দেওয়ার সময়ে পাঁচফোড়ন, শুকনো মরিচ আর বেশি করে রসুন দিন। দেখবেন পেঁয়াজের ঘাটতি মনেই থাকবে না।

ঝালকাঠি আজকাল