• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

নিপা ভাইরাসের ব্যাপারে সতর্ক থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৫ ডিসেম্বর ২০১৯  

শুরু হয়েছে নিপা ভাইরাসের মৌসুম। তাই এ ভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এই রোগের নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করাতে হয়। দেশে এ রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর হার শতকরা ৮৯ ভাগ।

নিপা একটি ভাইরাসজনিত মারাত্মক রোগ, যা বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হয়। আবার আক্রান্ত মানুষ থেকে মানুষেও সংক্রমিত হতে পারে। বাদুড় খাওয়া কাঁচা খেজুরের রস খেয়ে নিপা ভাইরাস আক্রান্ত হয় মানুষ। এ বছর ইতোমধ্যে খেজুরের রস সংগ্রহের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। সাবধানতা অবলম্বন না করলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যাবে না। কাঁচা খেজুরের রস এবং বাদুড় খাওয়া ফলমূলের অংশ বিশেষ না খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, বাদুরের পান করা খেঁজুরের কাঁচা রসে বা আংশিক আহার করার ফলে বাদুরের লালা বা মলমূত্র মিশে থাকে। বাদুরের পান করা খেঁজুরের রস পান করলে বা আংশিক আহার করা বা কামড়ানো ফল খেলে নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাদুরের আংশিক আহার করা ফল অথবা ঘাস গরু, ছাগল, শূকর খেলে তাদের শরীরেও নিপা ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে। সব অবস্থায় বাদুরের লালা, মলমূত্র এড়িয়ে চলতে হবে। তবে খেঁজুরের গুড়, রান্না করা খেঁজুরের রসের পায়েস, রান্না করা শাক-সবজি নিরাপদ।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা জানান, প্রতিবছরই কিছু লোক নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসকরা খেজুরের রস খাওয়ার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দেয়া ছাড়া এ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর কিছু করতে পারেননি। শীতের সময় খেজুর গাছে বাঁধা রসের হাড়িতে বাদুড় মুখ দেয়। বাংলাদেশে এভাবেই রোগটি মানুষে ছড়ায় বলে চিকিৎসকদের ধারণা। এ রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কে ভয়াবহ প্রদাহ দেখা দেয়। এর প্রধান লক্ষণগুলো হচ্ছে, জ্বরসহ মাথাব্যথা, খিঁচুনি, প্রলাপ বকা, অজ্ঞান হওয়াসহ কোন কোন ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট। চিকিৎসকরা জানান, বাদুড় গাছে বাঁধা হাড়ি থেকে রস খাওয়ার চেষ্টা করে বলে ওই রসের সঙ্গে তাদের লালা মিশে যায়। আর সেই বাদুড় নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকলে এবং সেই রস খেলে মানুষের মধ্যেও তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অন্যদিকে, বিশ্বে ১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়ায় সর্বপ্রথম নিপা ভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশকে এ রোগের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিবেচনা করা হয়। ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত মেহেরপুর, নওগাঁ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁও, কুষ্টিয়া, মানিকগঞ্জ ও রংপুরে মানব দেহে নিপা ভাইরাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। ২০০১ সালে দেশের উত্তর জনপদের সীমান্ত এলাকায় প্রথমবারের মতো নিপা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা যাওয়ার পর এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৫২ জনের মধ্যে ১১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। নিপা ভাইরাস এতটাই সংক্রামক যে, ২০০৪ সালে ফরিদপুরে এক পরিবারের একজন আক্রান্ত হওয়ার পর ওই পরিবারের ৪জনের মৃত্যু হয়। এক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার রিক্সাচালকও নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২০১২ সালে এ রোগে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছিলো। আর ২০১৫ সালে পঞ্চগড়, নীলফামারী, ফরিদপুর, মাগুরা, নওগাঁ ও রাজবাড়ীতে আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে ৬ জন মারা যায়।

এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান জানান, এ রোগটি অনেকটা ছোঁয়াচে হতে পারে। এমন রোগীর সংস্পর্শে যাওয়া ঠিক হবে না। একই প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, এ রোগটি পুরোপুরি ছোঁয়াচে। এ জ্বরে আক্রান্তকে জরুরী ভিত্তিতে হাসপাতালে নিতে হবে। আর চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিভাইরাস ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে রোগীকে আইসিইউতে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর লালা, কফ-কাশি এমনকি কাপড়-চোপড়ের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

ঝালকাঠি আজকাল