• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

নলছিটির ৫টি গ্রামে এখন মুড়ি তৈরির ধুম

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১১ মে ২০১৯  

রমজান মাস এলে ব্যস্ত হয়ে ওঠে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের মুড়িপল্লি নামে পরিচিত ৫টি গ্রাম। এখানে নাখুচি অথবা মোটা ধান থেকে দেশি পদ্ধতিতে মুড়ি ভাজা হয়। রফতানি হচ্ছে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে। স্বাদে অতুলনীয় বলে দপদপিয়ার মোটা মুড়ির খ্যাতি ছড়িয়েছে সর্বত্র। এখানে বছরজুড়েই চলে মুড়ি ভাজা ও বিক্রির কাজ। তবে রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীতে থাকা বাড়তি মুড়ির চাহিদা মেটাতে ব্যস্ততা বাড়ে মুড়ি তৈরির কারিগরদের।

রমজান উপলক্ষে তাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। বরিশাল-পটুয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশেই দপদপিয়া ইউনিয়নের রাজাখালি, দপদপিয়া, তিমিরকাঠি, ভরতকাঠি, জুরকাঠি এবং কুমারখালী গ্রাম। রমজানে মুড়ির জোগান দিতে এসব গ্রামে দিন-রাত চলে মুড়ি ভাজার কাজ। গ্রামগুলো বর্তমানে ‘মুড়িপল্লি’ নামে পরিচিত। রমজান মাস এলেই রাত ২টা থেকে শুরু হয় মাটির হাঁড়ি-পাতিলের টুংটাং শব্দ। মুড়ি ভাজার উৎসবে জ্বলে ওঠে ৩০০ ঘরের ১ হাজার ২০০ চুলার আগুন। তৈরি হয় সুস্বাদু মোটা মুড়ি।

muri-in

দপদপিয়াসহ আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন তৈরি হয় ২০০ মণ মুড়ি, যা পাইকারদের হাত বদল হয়ে দেশের বিভিন্ন বাজারে চলে যায়। রমজান আসা মাত্র মুড়ির চাহিদা আরও ১০০ মণ বেড়ে যায়। দপদপিয়ার মুড়িপল্লির শ্রমিকরা প্রমাণ করেছেন মুড়ি ভাজাই একটা শিল্প। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অসংখ্য মানুষের জীবন-জীবিকা। রোজার মাসকে সামনে রেখে বেড়েছে মুড়ির চাহিদা। উৎসবের আমেজে পরিবারের সবাই মিলে শুরু করে মুড়ি ভাজার কাজ। একটু বাড়তি লাভের আশায় পরিবারের বৃদ্ধ ও শিশুরাও হাত লাগায় মুড়ি ভাজার কাজে।

জানা যায়, ১৯৪৮ সালে ঝুরকাঠির বাসিন্দা আমজেদ মুড়ি ভেজে তা বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন। তার দেখাদেখি তিমিরকাঠির আরও কয়েকটি পরিবার তাদের সংসারের আয় বাড়াতে মুড়ি ভেজে বিক্রি শুরু করে। গ্রামের বেশকিছু মানুষ মুড়ি ভেজেই তাদের সংসার চালাতে শুরু করে। বিগত শতাব্দীর আশির দশকে আব্দুল হক নামের এক বিএসসি শিক্ষক বিভিন্ন স্থানের পাইকারদের মুড়ি ক্রয়ের জন্য উদ্বুদ্ধ করে এ গ্রামে নিয়ে আসেন। এরপরই তিমিরকাঠি গ্রামের মুড়ির কদর বাড়তে থাকে।

সরেজমিনে জানা যায়, শ্রমিকদের মধ্যে যারা একটু আর্থিকভাবে সচ্ছল, তারা নিজেরা বাজার থেকে ধান কিনে আনে। তারপর বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করে চাল তৈরি করে মুড়ি ভেজে নিজেরাই বাজারজাত করে। আবার যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তারা আড়তদারদের কাছ থেকে বিনামূল্যে চাল আনে। এই চাল দিয়ে মুড়ি ভেজে আড়তে সরবরাহ করে। এতে তাদের লাভ কম হয়। প্রতিদিন একজন গড়ে ৫০ কেজি চাল ভাজতে পারে। যেখান থেকে ৪২-৪৩ কেজি মুড়ি পাওয়া যায়। এখানকার মুড়ি ৭৫ টাকা কেজি দরে পাইকারি এবং ৮৫ টাকা খুচরা বিক্রি হয়।

muri-in

তবে সম্প্রতি এ শিল্পে দেখা দিয়েছে নানা সমস্যা। মেশিনের মাধ্যমে রাসায়নিক মিশিয়ে কম খরচে মুড়ি তৈরি করে কম মূল্যে বাজারজাত করায় গ্রামবাসীর রোজগারের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া স্থানীয় পাইকার ও আড়তদারদের দৌরাত্ম্যে লাভ থাকছে সামান্য।

তিমিরকাঠির ভূইয়া বাড়ির মুড়ির কারিগর নাছির উদ্দিন বলেন, ‘মেশিনে ভাজা মুড়ির চেয়ে আমাদের হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা বেশি। পাইকাররা যে পরিমাণের মুড়ি চায়, আমরা তা দিতে পারি না।’ একই গ্রামের ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমরা অন্যের মুড়ি ভাজি। সেখান থেকে প্রতিবস্তায় ৪০০ টাকা পাই। তা দিয়ে কোনমতে আমাদের সংসার চলে। স্বামী মারা যাবার পরে সন্তানদের নিয়ে মুড়ি ভেজেই সংসার চালাই।’

muri-in

স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম খান শফিক জানান, বেশির ভাগ মেশিনে ভাজা মুড়িতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মেশানো হয়। হাতে ভাজা মুড়িতে খরচ একটু বেশি, তাই দামও একটু বেশি পড়ে। রোজা এলে চাহিদা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। মুড়ির গ্রামগুলোকে বাণিজ্যিক মুড়ি উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে দাবি জানিয়ে আসছে মুড়িপল্লির শ্রমিকরা।

নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, ‘মুড়ির গ্রামগুলোকে বাণিজ্যিকীকরণ করে আরও উৎপাদন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন বলে আমরা মনে করি। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের নজরে বিষয়টি এনে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’

ঝালকাঠি আজকাল