• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

ধান কিনতে কৃষকের পেছনে ছুটছেন বেপারীরা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২০  

বোরো ধানের ভালো দাম পেয়ে কৃষক এবার দারুণ খুশি। বিভিন্ন জাতের প্রতিমণ ধান ৭৫০ থেকে শুরু করে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারের চাইতে এবার বাড়ি থেকেই বেশি ধান বেছাকেনা হচ্ছে। বেপারীরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে ধান কিনছে।

গত আমন মৌসুমে কৃষক বেপারীর কাছে ধর্ণা দিয়েও ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারেননি। ৪০০-৫০০ টাকায় একমণ ধান বিক্রি করে কৃষাণের মজুরি দিতেই চলে গেছে। তবে এবারের চিত্রটা উল্টো।এবার ধানের দামও বেশি আবার বেপারীরাই কৃষকের বাড়ি বাড়ি ছুটছে ধান কেনার জন্য।

বগুড়া জেলার উল্লাপাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল খাঁ। ধানের দাম নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার ধানের দাম খুব ভালো পাচ্ছি আমরা। জমি থেকে নিয়ে এসে খলা থেকেই কাঁচা ধান (শুকনো নয়) বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা দরে। শুকালে প্রতিমণ ধান ৩০ কেজি হবে। আর শুকানো ধান চিকনটা ৯০০-৯৫০ পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত আমন মৌসুমে একমণ ধান ৪০০- ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। তাও বেপারী পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার চিত্র ভিন্ন। বেপারীরা ছুটছে কৃষকের ঘরে ঘরে। এখন আর ধান বাজারে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। শত শত মণ ধান হলেও বাড়ি থেকেই বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।

একই জেলার চরপাড়া গ্রামের ধানের বেপারী মজিবর রহমান বলেন, ধানের দাম এবার বেশি। ধানের তুলনায় এবার চালের দাম কম। আমরা যারা ধান কিনে চাল করে বিক্রি করি তারা এবার লাভ করতে পারছি না। ধানের দাম স্থির না হলে ব্যবসা করে লাভ হবে না।

তিনি বলেন, কিছুদিন স্থির থাকে আবার ধানের দাম বাড়ে। এ কারণে চাল ব্যবসায়ীরা লাভবান হতে পারছি না। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছি ধান কেনার জন্য কিন্তু অনেক কৃষক ধান ঘরে থাকতেও বিক্রি করতে চাচ্ছে না। আরও বেশি দাম পাওয়ার আশায় তারা এখন ধান বিক্রি করছে না।

শেরপুরের যমুনা সেমি অটো রাইস মিলের স্বত্বাধীকারী আইয়ুব আলী বলেন, উত্তরের মোকামগুলোতে এখনো যথেষ্ঠ পরিমাণ ধান উঠছে না। অবস্থা দৃষ্টে বলা চলে ভরা মৌসুমে ধানের সংকট চলছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে মোকামে বিআর ২৮ জাতের ধান ৮০০-৮৫০ টাকা, বিআর ২৯ জাতের ধান ৭৮০-৮০০ টাকা, কাটারি ভোগ ধান ৮৮০-৯০০ টাকা এবং মোটা বিভিন্ন জাতের ধান ৭৩০-৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁ জেলার চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, কৃষকদের ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধান ও চাল বেশি করে কিনছে। বর্তমান ধানের বাজার যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামীতে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হবেন।

তিনি বলেন, সরকার এবং মিল মালিকরা একই সঙ্গে ধান ক্রয় করায় এবার কৃষক ধানের দাম ভালো পাচ্ছে। এ ছাড়া যারা মজুত করবে তারাও একই সময়ে ধান ক্রয় করার কারণে দাম এখানো ঊর্ধ্বমুখী।

এদিকে সুনামগঞ্জের হাওরে এবার বাড়ি থেকেই ধান বিক্রি করতে পেরে খুশি কৃষকরা। নৌ-চলাচল শুরু হওয়ায় বেপারীরা বড় বড় নৌকা নিয়ে বাড়ির ঘাটে ঘাটে গিয়েই কিনছেন শত শত মণ ধান। এতে ধানের দামও কিছুটা বেড়েছে। বিভিন্ন জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৯০০ টাকা মণ দরে। এছাড়া হাওরাঞ্চলে ধানের সবচেয়ে বড় আড়ৎ মধ্যনগরে এখন গভীর রাত পর্যন্ত চলছে কেনা-বেচা।

জেলার শাল্লার আনন্দপুর গ্রামের কৃষক শহীদ মিয়া জানান, সোমবার ৭০ মণ মোটা ধান বিক্রি করেছেন ৭২০ টাকা দরে। তিনি বলেন, গত ৮-১০ বছরে কোনো বেপারী গ্রামের ঘাটে নৌকা নিয়ে ধান কিনতে আসেননি। এবার কয়েকদিন ধরে ৭-৮ হাজার মণের বেপারীর নৌকা গ্রামের ঘাটে ঘাটে ভিড়ছে ধান কেনার জন্য। তিনি আরও বলেন, চাতাল বা মিল মালিকদের পাশাপাশি সরকারও এবার আগেভাগে ধান কেনায় বাজারে ধানের দাম ওঠেছে।

ঝালকাঠি আজকাল