• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

ঐতিহ্য জাদুঘর

দুই শ বছরের ঢাকা একসঙ্গে

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০১৯  

১৭০০ থেকে ১৯০০ সাল। এই দুই শ বছরে ঢাকায় বসবাসকারীদের জীবনধারা কেমন ছিল? কেমন ছিল মানুষের ব্যবহার্য তৈজসপত্র, মসলিন কাপড়, প্রচলিত মুদ্রা? এসব নিয়ে বর্তমান সময়ের মানুষের মধ্যে কৌতূহলের শেষ নেই। একটু অবসর পেলে মানুষ ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে নানা দর্শনীয় স্থানে। ঐতিহ্যপিয়াসি কৌতূহলী মানুষের জ্ঞানপিপাসা মেটাতে আজ বৃহস্পতিবার উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি ঐতিহ্য জাদুঘর’। দুই শ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এই জাদুঘরে। প্রদর্শিত নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ঢাকার বহু বনেদি ও সংস্কৃতিবান পরিবার থেকে।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় এক কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে জাদুঘরটি নির্মিত হয়েছে। গত বছরের ১১ অক্টোবর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জাদুঘরটি উদ্বোধন করলেও অবকাঠামোগত কিছু কাজ বাকি থাকায় সে সময় জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যায়নি। অবকাঠামোর কাজ শেষে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে জাদুঘরটি। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ৬৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ প্রথম দিনে ঐতিহ্য জাদুঘরটি সোসাইটির সদস্যদের পরিদর্শনের জন্য দুপুর ২টা পর্যন্ত খোলা রাখা হবে। এ ছাড়া সাধারণ দর্শকের জন্য সপ্তাহে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। শুক্রবার দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত থাকবে নামাজের বিরতি। জাদুঘরটি দেখতে সাধারণ মানুষকে ২০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখানো সাপেক্ষে ১০ টাকা ও বিদেশি দর্শকের জন্য ২০০ টাকা প্রবেশমূল্য দিতে হবে।

সরেজমিনে জাদুঘরটি ঘুরে দেখা যায়, পাঁচটি গ্যালারিতে ৮০টি ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন সাজানো রয়েছে। এ ছাড়া চারটি মনিটর, চারটি ট্যাব ও দুটি টাচ স্ক্রিনের মাধ্যমে ঢাকার দুই শ বছরের ইতিহাস ও ঐতিহ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। দোতলা ভবনের নিচতলায় একপাশে ‘এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা’ নামে এক নম্বর গ্যালারিতে এশিয়াটিক সোসাইটির গঠন ইতিহাস, সোসাইটির প্রথম সভাপতি আবদুল হামিদ ও সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ হাসান দানীর ছবিসহ উল্লেখযোগ্য আলোকচিত্র ও তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পাশেই ‘দেউড়ি ভবন সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার’ নামে দ্বিতীয় গ্যালারিতে ঢাকার নায়েব-নাজিমদের নিমতলী প্যালেসের গেট হাউস নিমতলী দেউড়ি সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে সাজানো রয়েছে। এখানে নিমতলী প্যালেস ও দেউড়ির ১৮৬৩, ১৮৭৪ ও ১৯৫০ সালের ছবিসহ ভবনটি সংরক্ষণের আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।

অন্য পাশে ‘সুবা বাংলার নায়েব-নাজিমদের ঐতিহাসিক পটভূমি’ নামে তৃতীয় গ্যালারিতে নায়েব-নাজিম প্রথার পটভূমি উপস্থাপন করা হয়েছে। এখানে ১৬ জন নায়েব-নাজিম ও তাঁদের প্রতিনিধির কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণী উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে সে সময়ের উল্লেখযোগ্য স্থাপনার বিবরণ ও ছবি প্রদর্শিত হয়েছে। ‘নায়েব-নাজিমদের ইতিহাস ১৭১৭-১৮৪৩’ নামে চতুর্থ গ্যালারিতে সময়ের ক্রমানুসারে নায়েব-নাজিমদের তালিকা ও আলোকচিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ইস্ট-ইন্ডিয়া কম্পানির প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন আর্চিবল্ড সুইন্টনের ঢাকা আগমন এবং নিমতলী প্রাসাদ নির্মাণের তথ্য-উপাত্ত এই গ্যালারিতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘ঢাকা জীবন ও শিল্পকর্ম (১৭০০-১৯০০)’ নামে পঞ্চম গ্যালারিতে ওই সময়ের মানুষের জীবনযাত্রা ও শিল্পকর্ম, মসলিনের তৈরি একলাই, তাম্রমুদ্রা, গয়নার বাক্স, প্লেট, রৌপ্যমুদ্রা, ধাতব কেটলি, পিতলের প্রদীপদানি, কাঠের টোকরা (তাক) প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে। এই গ্যালারির অন্যতম আকর্ষণীয় প্রদর্শনী হলো ‘ডিওরেমা’। নায়েব-নাজিম নুসরাত জংয়ের দরবার ‘ডিওরেমা’ নামে পরিচিত। ডিওরেমায় দেখা গেছে, নবাব নুসরাত জং দরবারে বসে আছেন, নবাবের হাতে হুঁকার নল। নবাবের পাশেই একজন প্রহরী তরবারি হাতে দণ্ডায়মান এবং একজন হাতপাখা নিয়ে পেছনে দাঁড়িয়ে আছেন। তখনকার নবাবদের দরবারে ডিওরেমা উপস্থাপিত হতো।

ঐতিহ্য জাদুঘরটির বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানকার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর হোসেন জানালেন, ঢাকায় আদি নবাবদের স্মৃতিবিজড়িত নিমতলী প্রাসাদ। বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাকে সংরক্ষণ করে ১৭০০ থেকে ১৯০০ শতাব্দীর সময়কালের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে এখানে। ঐতিহ্যবাহী স্থাপনাটি শুধু জাদুঘর নয়, এটি একটি শিক্ষা, গবেষণা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে তোলা হয়েছে। শিক্ষার পাশাপাশি এটি বহুমুখী গবেষণার জন্যও ব্যবহার করা যাবে। ঐতিহ্য নিয়ে আগ্রহী মানুষ, ঢাকাপ্রেমিক, গবেষক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরা এই জাদুঘরের মূল উদ্দেশ্য।

বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাব্বীর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ঢাকার মোগল নায়েব-নাজিমদের জন্য দুই শ বছর আগে নির্মিত প্রাসাদ ভবনের মূল অংশ সংরক্ষণের অভাবে এরই মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে। একটি অংশ এখনো আছে। আমরা সেটাকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজধানী ঢাকার ৪০০ বছর পূর্তি উদ্যাপন কর্মসূচির আওতায় ২০০৯-১১ সালে সংরক্ষণ করি। কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার না করায় পুনরায় এটির প্রায়োগিকতা হারাতে বসেছিল। ভবনটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য এই ভবনে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। ১৭০০-১৯০০ সাল পর্যন্ত ঢাকা ও পূর্ব বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি ও জীবনভিত্তিক নিদর্শন দিয়ে জাদুঘরটি সাজানো হয়েছে।’

ঝালকাঠি আজকাল