• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

টাকার বিনিময়ে ‘ভুয়া’ নিয়োগ দেন তারা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২০  

ডিগ্রি পাস করা মো. রেজাউল করিম ঢাকার মিরপুরে রেঁনেসা প্রি-ক্যাডেট নামে একটি কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকতার আড়ালে তার অন্য পরিচয় তিনি একজন নিয়োগদাতা। গ্রামের যুবকদের তিনি নিয়োগ দেন চট্টগ্রাম বন্দর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে।

কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বেকার যুবকদের হাতে তুলে দেন সরকারি চাকরি নামের সোনার হরিণের নিয়োগপত্র। তাদের কাছ থেকে নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে যুবকেরা দেখতে শুরু করেন বেকারত্ব ঘুচানোর স্বপ্ন।

কিন্তু সেই স্বপ্ন নিমিষেই মাটি হয়ে যায় যখন ওই যুবকেরা নিযোগপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে যান। তখনই জানতে পারেন তার কাছে থাকা নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

এমন কাজ রেজাউল করিম একা করেন তা নয়। তার সঙ্গে রয়েছেন আরও অনেকে। যারা একই ভুয়া নিযোগ প্রক্রিয়ার ভিন্ন ভিন্ন কাজ করে থাকেন। রেজাউল করিমের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করা চতুর্থ শ্রেণির কিছু অসাধু কর্মচারী।

এসব অসাধু কর্মচারীরা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম, সিলসহ স্বাক্ষর নকল করতে সহায়তা করেন। তারা এমনভাবে নিয়োগপত্র তৈরি করেন যেটি দেখে বুঝার উপায় নেই সেটি আসল নাকি নকল।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে অর্থের মাধ্যমে ভুয়া নিয়োগ দেয় এমন একটি প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ।

গ্রেফতার তিনজন হলো- গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার শ্রীপুর এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে মো. রেজাউল করিম (৪৪), সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার সিরাজী রোডের মো. আবদুল হামিদের ছেলে জহুরুল ইসলাম (৩৭) ও মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানার তিলকপুর এলাকার আবদুল বারীর ছেলে মো. আবদুস সহিদ (২৯)।

বুধবার (২৪ জুন) বিকেলে নগরের ডবলমুরিং থানাধীন চৌমুহনী দুবাই হোটেলে থেকে তাদের আটক করেন ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্নব বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি টিম।

যেভাবে ধরা পড়ে

পঞ্চগড় থেকে সোহেল মিয়া নামে এক যুবককে চট্টগ্রাম বন্দরে পিয়ন পদে চাকরি দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টকা চুক্তি করে প্রতারক চক্র। চট্টগ্রামে এসে প্রতারক চক্রকে দুই দফায় ৫০ হাজার টাকাও দেয় সোহেল। বাকি সাড়ে ৪ লাখ টাকার অর্ধেক নিয়োগপত্র পেয়ে এবং বাকি অর্ধেক চাকরিতে যোগদান করে পরিশোধ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয় সোহেল।

চাকরিপ্রত্যাশী সোহেলকে নিয়ে রেজাউল করিম চট্টগ্রাম বন্দরের এক কর্মচারী জিতুর কাছে যায়। জিতু সোহেলের সাক্ষাতকার নেয়। সোহেলকে একটি নিয়োগপত্রও দেয় চক্রটি। নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ার পর ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা প্রতারক চক্রকে পরিশোধের কথা থাকলেও নিয়োগপত্র যাচাইয়ের পর তা পরিশোধের কথা জানায় সোহেল।

সোহেলের এক আত্মীয় তার পূর্ব পরিচিত চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও এনডিসি মো. মাসুদ রানার মাধ্যমে নিয়োগপত্র যাচাইয়ের চেষ্টা করে। এনডিসি মো. মাসুদ রানা নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের পরিচালক (প্রশাসন) মো. মমিনুর রশিদকে ফোন করে নিয়োগপত্রের বিষয়ে জানালে তিনি তা ভুয়া বলে জানান। পরে এনডিসি মো. মাসুদ রানা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে বিষয়টি জানান।

জানতে পেরে ডবলমুরিং থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. জহির হোসেন ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্নব বড়ুয়ার নেতৃত্বে একটি টিম চৌমুহনী দুবাই হোটেলে থেকে রেজাউল করিমসহ তিনজনকে আটক করেন।

ভুয়া নিয়োগ চক্রে কারা

মো. রেজাউল করিমসহ এ ভুয়া নিয়োগ চক্রে রয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির পদে চাকরি করা একাধিক অসাধু ব্যক্তি। তারা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম, সিলসহ স্বাক্ষর নকল করতে সহায়তা করেন। তারা এমনভাবে নিয়োগপত্র তৈরি করেন যেটি দেখে বুঝার উপায় নেই সেটি আসল নাকি নকল।

ভুয়া নিয়োগ চক্রের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন মো. রেজাউল করিম, জহুরুল ইসলাম, মো. আবদুস সহিদ, মনিরুল ইসলাম জিতু, সোহাগ, মফিজুলসহ ৮-১০ জনের একটি চক্র।

এদের মধ্যে জহুরুল ইসলাম একজন ব্যবসায়ী। তিনি সিরাজগঞ্জে স্প্রিরিটের পাইকারি ব্যবসা করেন। মো. আবদুস সহিদ পেশায় গাড়ি চালক এবং মনিরুল ইসলাম জিতু চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মচারী।

ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ বলেন, অর্থের বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগ প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তাদের কাছ থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নকল করে তৈরি করা ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, প্রতারক চক্রের তিন সদস্যকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। আদালত তিনজনের দুইদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

এসআই অর্নব বড়ুয়া বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি-গ্রামের বেকার যুবকদের টার্গেট করে তাদের বিভিন্ন সরকারি প্রতষ্ঠানে চাকরির প্রলোভন দেখায় এ চক্রের সদস্যরা। কেউ তাদের ফাঁদে পা দিলে চাকরি দেওয়ার জন্য তার সঙ্গে ২ থেকে ৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে। চট্টগ্রাম বন্দর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভুয়া নিয়োগপত্র বানিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু অসাধু কর্মচারী জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছি আমরা। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

ঝালকাঠি আজকাল