• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

একজন মায়ের গল্প

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০১৯  


 
ইমাম শাফিয়ির মায়ের নাম ছিল ফাতিমা। তারা ছিলেন অসম্ভব গরিব। শাফিয়ির মা তাকে ছোট থেকেই বিভিন্ন ইসলামি হালাকায় নিয়ে যেতেন। যখনি দেখতেন কোথাও দীনি ইলম চর্চার আসর বসেছে, ফাতিমা তার ছেলেকে নিয়ে হাজির। তিনি তার ছেলের পড়াশোনার ফি দিতে পারতেন না। এটা নিয়ে শাফিয়ি (রহ.) মাঝে মাঝে লজ্জা পেতেন। তার মা ছেলেকে সাহস দিবার জন্যে বলতেন, ‘তুমি ওখানে যাচ্ছ ইলম অর্জন করতে। তুমি যখন প্রবেশ করবে, এমন আদব নিয়ে প্রবেশ করবে যেন কেউ কোন প্রশ্ন করতে না পারে।’

ইমাম শাফিয়ির মা তার স্বামীর মৃত্যুর পর বিয়ে করেন নি; যেন পুরোপুরি তার পুত্রের ইলমের দিকে মনোনিবেশ করতে পারেন। তাদের কাগজ-কলম কিনার মত টাকা ছিল না। তার মা মাঝে মাঝে ফেলে দেওয়া কাগজ, গাছের পাতা, হাড়-গোড় আস্তাকুঁড় থেকে কুড়িয়ে নিতে রাখতেন ছেলের নোট লিখার জন্যে। কিন্তু সেটা সংগত কারণেই যথেষ্ট হতো না।

শাফিয়ি (রহ.) মাকে বলতেন, ‘মা! কাগজ-কলম ছাড়া আমি কিভাবে ইলম টুকে রাখব?’ তার মা বলতেন, ‘মুখস্থ করবে বাবা! তোমার সব নোট মাথায় টুকে রাখবে।’ ইমাম শাফিয়ি (রহ.) এভাবেই ফটোগ্রাফিক মেমোরি গঠন করেন ৬ বছর বয়স থেকেই। সুবহানাল্লাহ, ৬ বছরের একটা বচ্চা ছেলে ক্লাসে উস্তাদ যা বলতেন, মনে মনে রিপিট করে করে তৎক্ষণাৎ মুখস্থ করে ফেলতেন। 

বিরতির সময় দেখা যেত বাকি সব ছাত্ররা ইমাম শাফিয়ির কাছ থেকে নিজেদের নোট মিলিয়ে নিচ্ছে। ৬ বছরের শাফিয়ি গড় গড় করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরা লেকচার বলে যেত। তার উস্তাদ এটা খেয়াল করেন এবং শাফিয়িকে বলেন, ‘আমি যখন বিরতিতে যাবো, তুমি আমার ছাত্রদেরকে পড়াবে, এটাই তোমার টিউশান ফি।’

আলহামদুলিল্লাহ এভাবেই তিনি আল্লাহর রহমতে অল্প বয়সেই তুখোড় ইসলামিক স্কলার হয়ে যান। 

তার জীবনের একটা ঘটনা আমি কখনোই ভুলবো না। 

একবার ইমাম শাফিয়ি (রহ.) রোজার মাসে মসজিদে ‘রোজার ফিকহ’ এর উপর ক্লাস করাচ্ছিলেন। ক্লাস করতে করতে তিনি এক চুমুক পানি খেলেন। তার ছাত্ররা তো অবাক। জিজ্ঞেস করে জানা গেলো, ইমাম শাফিয়ি (রহ.) তখনও বালেগ হননি এবং তখনও তার উপর রোজা ফরজই হয় নি, অথচ তিনি রোজার উপর ক্লাস নিচ্ছেন। সুবহানাল্লাহ। 

তার আরেকটি ঘটনা বলি। ইমাম শাফিয়ি (রহ.) একবার ভরা মজমায় ক্লাস করাচ্ছিলেন। এক লোক হুড়মুড় করে তার ক্লাসে ঢুকে গেল এবং তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, ‘তুমিই কি শাফিয়ি?’ ইমাম বললেন,‘জ্বি, আমিই শাফিয়ি।’ তখন লোকটি সবার সামনে চেঁচিয়ে বলল, ‘তুমি একটা ফাসিক, কাফির এবং জঘন্য প্রকৃতির লোক!’ ইমাম শুনলেন। শুধু সমালোচনা না, তাকে সবার সামনে খুব খারাপভাবে অপমান করা হয়েছে। তিনি কোনো প্রতিবাদ তো করলেনই না, বরং তৎক্ষণাত দু’হাত তুলে সবার সামনে দুয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! এই ব্যক্তি যদি সত্য বলে থাকে, তাহলে তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার উপর দয়া করো এবং আমার তাওবা কবুল করে নাও। আর যদি এই ব্যক্তি যা বলল, সেটা সত্য না হয়, তাহলে তার এ আচরণের জন্যে তুমি তাকে ক্ষমা করে দাও, তার উপর দয়া করো এবং তার তাওবা কবুল করে নাও!’ 

সুবহানআল্লাহ। ইমাম শাফিয়ি (রহ.) এরকম একজন স্কলার হতে পেরেছেন, কারণ তার মা তাকে সেভাবে গড়ে তুলেছেন। একজন মাকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কতটা শক্তি দিয়েছেন ইসলামের সিংহদেরকে বড় করতে। মায়েরা সন্তানদের ইসলামের পথে আনার জন্যে গেড়ে বসলে, আল্লাহ তায়ালা কেমন বরকত ঢেলে দেন সে নেকিতে! সুবহানাল্লাহ, এক মায়ের আল্লাহর দীনের জন্যে নিখুঁত আত্মত্যাগ আর নিষ্ঠার ফসল হিসেবে ইমাম শাফিয়ির কত অবদান আমরা এখন পর্যন্ত ভোগ করে যাচ্ছি।

ঝালকাঠি আজকাল