• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

অকস্মাৎ হানায় হাজারো বাঙালি গ্রেফতার

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৬ মে ২০২১  

পাকিস্তানি পুলিশ গভীর রাতে হানা দিয়ে ঘুমন্ত শত শত আটক বাঙালিকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত এইসব নিরপরাধ বাঙালির সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। ১৯৭৩ সালের এইদিন বিবিসির সংবাদ বুলেটিনে বলা হয়, গতরাতে পাকিস্তানি পুলিশ আকস্মিক অভিযান চালিয়ে ইসলামাবাদ থেকে গণহারে সকল আটক বাঙালিকে গ্রেফতার করেছে এবং গ্রেফতারকৃত এইসব বাঙালিকে রাজধানী থেকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে।
 
রাজধানী ইসলামাবাদের রাস্তায় রাস্তায় শত শত পুলিশ ও ট্রাক দেখা যায়। গভীর রাতে হানা দিয়ে পাকিস্তানি পুলিশ নারী-পুরুষ শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকল আটক বাঙালিকে গাদাগাদি করে ট্রাকে তুলে একমাত্র হ্যান্ড ব্যাগ ও ছোটখাটো সুটকেস ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিতে দেওয়া হয়নি।

রয়টার্সের সংবাদদাতা বলেন, গ্রেফতারকৃত হাজার হাজার বাঙালিকে ট্রাকে-বাসে ভরে নিয়ে যেতে দেখেছি। এইসব হতভাগ্য আটক বাঙালিদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চাওয়া হলে স্পষ্ট কোনও জবাব তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।

পাকিস্তানি সরকারি মুখপাত্র ও সহকারী অফিসাররা এ সম্পর্কে যা বলেন তা পরস্পরবিরোধী। একজন সহকারী মুখপাত্র বলেন, বাঙালিদের রাজধানী থেকে ভিন্ন স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে জায়গার অভাবের জন্য। আবার একজন পদস্থ সরকারি কর্মচারী বলেন, আটক বাঙালিদের নিজ দেশে পাঠানোর জন্যই রাজধানী থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

একজন সরকারি মুখপাত্র আটক বাঙালিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন, তাদের অনেকেই নাকি পাকিস্তানের জরুরি সরকারি ফাইল নিয়ে আফগান সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়েছে। তিনি বলেন আটক বাঙালিদের বিচারের জন্য তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং যে কোনও দিনই বিচার শুরু হতে পারে।

ওই মুখপাত্র বলেন, ইসলামাবাদ থেকে বাঙালিদের কোনও বন্দিশিবিরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন এসব বাঙালিদের অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মাত্র এবং রেডক্রসের লোকজনদের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হবে।

বর্বরতার নিন্দা

ইসলামাবাদ শহরে রাতের অন্ধকারে হানা দিয়ে হাজার হাজার বাঙালিকে গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার খবরের সঙ্গে সঙ্গে পরদিন রাজধানী ঢাকায় দারুণ ক্ষোভে ফেটে পড়ে দল-মত-নির্বিশেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল।

পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের এই ঘৃণ্য তৎপরতাকে বর্বরতা বলে অভিহিত করে তারা বলেন, সাম্প্রতিককালে এমন চরম বর্বরতার দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত নেই।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের এই বর্বরতায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ভুট্টোর সরকার নির্দোষ বাঙালিদের প্রকৃতপক্ষে বন্দিশিবিরে নিক্ষেপ করছেন। পাকিস্তানের সামরিক চক্র নিয়ন্ত্রিত ভুট্টো সরকার এই অমানবিক তৎপরতা চালিয়ে মানবতার বিরুদ্ধে আরও এক নতুন অপরাধ করছে।

গতরাতে বার্তাসংস্থা এনার সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পাকিস্তানি জঙ্গি সরকারের এই বর্বর তৎপরতা সভ্য সমাজের বিবেকের প্রতি একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ। নিরপরাধ অসহায় বাঙালিদের প্রতি এই বর্বরতা থেকে পাকিস্তানকে নিবৃত্ত করতে চাপ প্রয়োগের জন্য তিনি সমাজের প্রতি আবেদন জানান।

তীব্র ক্ষোভের যৌথ বিবৃতি

ইসলামাবাদে রাতের অন্ধকারে পাইকারিভাবে বাঙালিদের গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রধান মেজর অবসরপ্রাপ্ত এম এ জলিল ও দলের সাধারণ সম্পাদক আ স ম আব্দুর রব।

তারা বলেন, নিরপরাধ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের এই বর্বরতার বিরুদ্ধে সারা দুনিয়ার সভ্য সমাজের তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা উচিত। পাকিস্তানি একনায়ক সরকারের এই বর্বর তৎপরতার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ ও পাকিস্তানে আটক বাঙালিদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনার জন্য যৌথ বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আবেদন জানান।

ঝালকাঠি আজকাল