• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

কোরআন নাজিলের মাস রমজানের ফজিলত

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৬ মার্চ ২০২৩  

বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর দরজায় কড়া নাড়ছে ইবাদতের মৌসুম মহিমান্বিত রমজান মাস। যে বরকতময় মাসে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা নেক আমলের সওয়াব সীমাহীনভাবে বাড়িয়ে দেন এবং অফুরন্ত কল্যাণ দান করেন। নেক আমলে উৎসাহী ব্যক্তিদের জন্য কল্যাণের সব দরজা উন্মুক্ত করে দেন।
রমজান পবিত্র কোরআন নাজিলের মাস। কল্যাণ ও বরকতের মাস। পুরস্কার ও দানের মাস। মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর। (সূরা: বাকারা: আয়াত: ১৮৫)

রমজান রহমত, মাগফেরাত এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। যার প্রথমে রহমত, মাঝে মাগফেরাত এবং শেষে রয়েছে জাহান্নাম হতে মুক্তি। এ মহিমান্বিত মাসের ফজিলতের সম্পর্কে হাদিসের একাধিক বর্ণনা এসেছে-

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- وَمَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

অর্থ: ‘... আর যে ব্যক্তি ঈমানসহ সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা পালন করবে, তারও অতীতের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ১৯০১)

রমজানে অধিকহারে নেক আমল করার জন্য এবং আমলকারীদের উৎসাহ প্রদানের জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়। আর ঈমানদারদের গুনাহ কম হওয়ার কারণে জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রমজানের এ মোবারক মাসে মানুষকে যেন পথ ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যেতে না পারে সে জন্য শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। হাদিসে পাকে এসেছে-

(২) হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- إِذَا جَاءَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ النَّارِ، وَصُفِّدَتِ الشَّيَاطِين

অর্থ: ‘যখন রমজান মাস আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে রাখা হয়।’ (বুখারি ১৮৯৯; মুসলিম ১০৭৯)

রমজানের মূল্যবান পাঁচটি বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদিকে দান করেছেন। যা অন্য কোনো উম্মতকে দান করা হয়নি। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুহাম্মাদির প্রতি নেয়ামাত পূর্ণ করে বিশেষ ইহসান করেছেন। এভাবে আল্লাহর কতই না নেয়ামত ও অনুগ্রহ এ উম্মতের উপর ছায়া হয়ে আছে; কারণ আল্লাহ তাআলা বলেছেন- كُنتُمۡ خَيۡرَ أُمَّةٍ أُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَتَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِ وَتُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِۗ

অর্থ: ‘তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত। মানুষের কল্যাণের জন্যই তোমাদের বের করা হয়েছে। তোমরা সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। আর আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান রাখবে।’ (সূরা: আল-ইমরান, আয়াত: ১১০)

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- أُعْطِيَتْ أُمَّتِي خَمْسَ خِصَالٍ فِي رَمَضَانَ، لَمْ تُعْطَهَا أُمَّةٌ قَبْلَهُمْ: خُلُوفُ فَمِ الصَّائِمِ أَطْيَبُ عِنْدَ اللَّهِ مِنْ رِيحِ الْمِسْكِ، وَتَسْتَغْفِرُ لَهُمُ الْمَلَائِكَةُ حَتَّى يُفْطِرُوا، وَيُزَيِّنُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ كُلَّ يَوْمٍ جَنَّتَهُ، ثُمَّ يَقُولُ: يُوشِكُ عِبَادِي الصَّالِحُونَ أَنْ يُلْقُوا عَنْهُمُ الْمَئُونَةَ وَالْأَذَى وَيَصِيرُوا إِلَيْكِ، وَيُصَفَّدُ فِيهِ مَرَدَةُ الشَّيَاطِينِ، فَلَا يَخْلُصُوا فِيهِ إِلَى مَا كَانُوا يَخْلُصُونَ إِلَيْهِ فِي غَيْرِهِ، وَيُغْفَرُ لَهُمْ فِي آخِرِ لَيْلَةٍ " قِيلَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَهِيَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ؟ قَالَ: لَا، وَلَكِنَّ الْعَامِلَ إِنَّمَا يُوَفَّى أَجْرَهُ إِذَا قَضَى عَمَلَهُ

অর্থ: ‘আমার উম্মতকে রমজানে পাঁচটি বৈশিষ্ট্য দেওয়া হয়েছে, যা আগের কোনো উম্মতকে দেওয়া হয়নি-

(১) রোজা পালনকারীর মুখের না খাওয়াজনিত গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।

(২) ইফতারের আগ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ রোজা পালনকারীর জন্য মাগফেরাতের দোয়া করতে থাকে।

(৩) আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন তার জান্নাতকে সুসজ্জিত করে বলেন, আমার নেককার বান্দাগণ কষ্ট স্বীকার করে অতিশীঘ্রই তোমাদের কাছে আসছে।

(৪) দুষ্ট প্রকৃতির শয়তানদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়, ফলে তারা অন্য মাসের ন্যায় এ মাসে মানুষকে গোমরাহীর পথে নিতে সক্ষম হয় না।

(৫) রমজানের শেষ রাতে রোজা পালনকারীদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। বলা হলো- হে আল্লাহর রাসূল! এ ক্ষমা কি কদরের রাতে করা হয়? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘না’, বরং কোনো শ্রমিককে তার পারিশ্রমিক তখনই দেওয়া হয়, যখন সে কাজ শেষ করে।’ (মুসনাদে আহমাদ)

ঝালকাঠি আজকাল