• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

জানেন কি, মুহাম্মদ (সা.) এর তৈরি প্রথম মসজিদ কোনটি?

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৪ জানুয়ারি ২০২২  

মসজিদে কুবা বা কুবা মসজিদ সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত। এটি ইসলামের প্রথম মসজিদ। হিজরতের পর স্বয়ং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এই মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন। শুধু তাই নয়, কিবলা পরিবর্তনের স্বাক্ষী হিসেবে এখনো এই মসজিদে দুটি মেহরাব এবং আজান দেয়ার জন্য দুটি মিনার রয়েছে। মদিনায় দ্বিতীয় বৃহত্তম ইবাদাতগাহ এটি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এখানে তিনি বেশ কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) নবুয়ত লাভের পর মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করেন। এতে তার প্রতি নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মহানবী মুহাম্মদ (সা.) প্রিয় সাহাবী হযরত আবু বকর (রা.) সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর নির্দেশে মদিনার উদ্দেশ্যে ৬২২ খ্রিস্টাব্দের ২২ সেপ্টেম্বর মক্কা ত্যাগ করেন।

প্রিয়নবীর আগমন বার্তার সংবাদ পেয়ে মদিনাবাসী সেদিন আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠেন। মদিনার সর্বস্তরের মানুষ প্রতিদিন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) -কে অভ্যর্থনা জানাতে মদিনার অদূরে কুবা পল্লীর হাররা নামক স্থানে জড়ো হতেন। তার দেখা না পেয়ে সবাই হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে যেতেন।

একদিন এক ইহুদি তাদের দুর্গের প্রাচীরে উঠে বহু দূরে মরুভূমির ধূলাবালি উড়তে দেখে মদিনাবাসীকে তার আগমন সংবাদ জানান। সঙ্গে সঙ্গে মদিনাবাসীগণ আনন্দের অতিশয্যে ভালোবাসায় মহানবীকে সদরে বরণ করে নেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে সর্ব প্রথম কুলসুম ইবনুল হিদমের আতিথ্য গ্রহণ করেন। সেখানে তিনি ১৪ দিন অবস্থান করেন। বিশ্বনবী কুলসুম ইবনুল হিদম (রা.) এর খেজুর শুকানোর জায়গায় একটি মসজিদ তৈরি করেন। এটি ইসলামের ইতিহাসে মুসলমানদের প্রথম স্থাপনা। যা কুবায় স্থাপিত হয়। এটিই ঐতিহাসিক মসজিদে কুবা।

ইতিহাসবিদরা বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) যখন মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, তখন কেবলার দিকের প্রথম পাথরটি নিজ হাতে স্থাপন করেন। অতঃপর হযরত আবু বকর (রা.) একটি পাথর স্থাপন করেন। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আবু বকর (রা.)-এর পাথরের পাশের পাথরটি স্থাপন করেন হযরত উমর (রা.)। এরপর যৌথভাবে নির্মাণকাজ শুরু হয়।

মসজিদে কুবা উম্মতে মুহাম্মাদির সর্ব প্রথম মসজিদ। সম্মান ও মর্যাদার দিক থেকে মসজিদে হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদে আকসার পরই মসজিদে কুবার স্থান। মসজিদে কুবা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যে মসজিদ প্রথম দিন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর (মসজিদে কুবা) -তাই বেশি হকদার যে, তুমি সেখানে নামাজ কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালোবাসে। আর আল্লাহ্ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা তাওবা : আয়াত ১০৮)

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত মসজিদে কুবাকে অনেকবার সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়। বিশ্বনবীর পর ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (রা.)-এর খিলাফতকালে সর্বপ্রথম মসজিদে কুবার সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে আরও সাত বার এই মসজিদের পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়।

অনেক পুরনো ও জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে মসজিদটির পুনঃর্নিমাণ করা হয়। এই মসজিদ পুনঃর্নিমাণে পুরো মসজিদে এক ধরনের উন্নতমানের সাদা পাথর ব্যবহার করা হয়।

বর্তমানের যে কুবা মসজিদের স্থাপনা রয়েছে, তা অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। মসজিদটির চার কোনে রয়েছে সুদৃশ্য ৪টি মিনার ও দুই তলা বিশিষ্ট মসজিদে কুবার ছাদে রয়েছে ১টি বড় গম্বুজসহ অপেক্ষাকৃত ছোট ছোট ৫টি গম্বুজ রয়েছে। তাছাড়া ছাদের অন্য অংশে আছে গম্বুজের মতো ছোট ছোট অনেক অবয়ব। চারপাশের খেজুরের বাগান ও বনায়ন মসজিদটির সৌন্দর্যকে করে তুলেছে অতুলনীয়। যা দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। সূর্যাস্তের হলদে বিকেলে মসজিদটি দেখলে হৃদয় ভরে যায়।

মদিনায় মসজিদে নববীর দক্ষিণ পশ্চিম দিকে মসিজদে কুবা অবস্থিত। মসজিদে নববী থেকে এর দূরত্ব মাত্র ৩.২৫ কিলোমিটার। হিজরতের পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) মদিনায় ১০ বছর কাটিয়েছেন। এ সময়ে মহানবী পায়ে হেঁটে, কখনো উটে আরোহণ করে কুবা মসজিদে যেতেন এবং সেখানে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করতেন।

হজরত উসাইদ ইবনে হুজাইব আল আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মসজিদে কুবায় এক ওয়াক্ত নামায আদায় করা; সওয়াবের দিক থেকে একটি ওমরা আদায়ের সমতুল্য।’ (তিরমিজি)

মসজিদে কুবার এ অনন্য সম্মান ও মর্যাদার কারণে মহানবীর মৃত্যুর পরও হযরত আবু বকর, হযরত ওমরসহ বিশিষ্ট সাহাবারা মহানবীর অনুকরণে প্রায়ই মদিনা থেকে মসজিদে কুবায় আসতেন ও তাতে নামাজ আদায় করতেন।

বর্তমানে মদিনায় অনেক সুন্দর সুন্দর মসজিদ রয়েছে। মসজিদে নববীর পর সৌন্দর্য্য ও নান্দনিকতার তালিকায় মসজিদে কুবা অন্যতম। ওমরা, হজ ও দর্শণার্থীদের জন্য মসজিদে কুবা সাওয়াব ও সৌন্দর্য্যের অনন্য প্রতীক।

 

ঝালকাঠি আজকাল