• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম অধ্যায় ইনডেমনিটি

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২১  

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের দিন। সেদিন বিপথগামী উচ্চাভিলাসী একদল সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে শহীদ হন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এটি পৃথিবীর রাজনৈতিক ইতিহাসের নৃশংসতম একটি ঘৃণ্য অধ্যায়। ঘাতকের বুলেট শুধু স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই হত্যা করেনি, হত্যা করেছিল তার গোটা পরিবারকে। এমনকি সেই বুলেট থেকে রক্ষা পায়নি ছোট্ট শিশু রাসেলও।

রক্তের দাগ তখনও শুকায়নি। জাতির পিতাকে হত্যার ৪২ দিনের মাথায়, ২৬ সেপ্টেম্বর কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনী খন্দকার মোশতাক। অধ্যাদেশে যে কোন আদালতে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। যেহেতু তখন সংসদ অধিবেশন ছিল না, সেহেতু ১৯৭৫ সালের এই দিনে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতির পদ দখলকারী খুনী মোশতাক আহমেদ একটি অধ্যাদেশ আকারে ইনডেমনিটি জারি করে। এটি ১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে অভিহিত ছিল।

ইনডেমনিটি শব্দের অর্থ ‘শাস্তি এড়াইবার ব্যবস্থা’, অর্থাৎ, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ হলো সেই অধ্যাদেশ যার মাধ্যমে শাস্তি এড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সহযোগী এবং তৎকালীন রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গকে হত্যার পেছনে যারা জড়িত ছিল তাদের শাস্তির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য এই অধ্যাদেশটি জারি করা হয়। পরে ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জিয়াউর রহমানের আমলে সংসদে এই কালো আইনটিকে অনুমোদন দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জেনারেল জিয়ার আমলে বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। আইনের শাসনের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন।

এতে আইন করা হলো হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এরকম কালো আইন আগে ও পরে আর কখনোই ছিল না। এই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের ছুতা দিয়ে ২১ বছর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার করা হয়নি। প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলতে হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, রাজিব গান্ধী, পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বেনজির ভুট্টো, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট বন্দর নায়েককে গুলিতে হত্যার পর কোন দেশেই এমন ন্যক্কারজনক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়নি।

নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের পর খুনীদের যাতে বিচার করা না যায় এবং হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিল তাদের নাম যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনী মোশতাক। এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে খুনী মোশতাকের স্বাক্ষর থাকলেও অনেকেই মনে করেন এই অধ্যাদেশ জারির পেছনে মূল ক্রীড়নক ছিল বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৯ দিনের মাথায় সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকে হটিয়ে নতুন সেনাপ্রধান বনে যাওয়া জিয়াউর রহমান।

‘দি বাংলাদেশ গেজেট, পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাকের স্বাক্ষর রয়েছে। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর আধ্যাদেশে তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ রহমানের স্বাক্ষর রয়েছে। অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবত আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রীম কোর্টসহ কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোন আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোন আইনী প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।

১৯৭৫ সালের ৭ নবেম্বর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। সে সময় বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি সায়েম জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল সায়েম রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে দাঁড়ান এবং জিয়া রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রæয়ারি সামরিক আইনের অধীনে দেশে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল বিএনপি দুই-তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা দেয়া হয়। সংশোধনীটি পাস হয় ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিল ‘সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯’। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা দায়মুক্তি পেয়ে যায়।

একটু লক্ষ্য করুন, মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যেত। জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, ভবিষ্যতে কেউ যাতে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থা করা হয়। ঐ সময়ে একটি প্রপাগাণ্ডা ছড়িয়ে গেল যে, যেহেতু এটি সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে এটি আর পরিবর্তন করা যাবে না এবং এই দোহাই দিয়েই জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেনি।

জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকাকালীন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। যেহেতু মোশতাক সরকার ছিল সেনাসমর্থিত। জিয়াউর রহমান ছিল সেনাপ্রধান। সেহেতু ওই সময় রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়ন্ত্রণকারী সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের নির্দেশ কিংবা সম্মতি ছাড়া নামেমাত্র রাষ্ট্রপতি খুনী মোশতাকের পক্ষে কোনভাবেই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দায়মুক্তি দিতে এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা কোনদিনই সম্ভব হতো না। সে কারণে এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির দায় জিয়াউর রহমান কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারেন না। আর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীরা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিতে সাক্ষাতকার দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জেনারেল জিয়াউর রহমানও যে জড়িত ছিল তা স্পষ্ট করেই বলেছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও আইনজ্ঞদের মতে, খুনী মোশতাকের জারি করা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৈধতা দেয়া না হলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ আগস্টের খুনীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া যেত। ক্ষমতা দখলকারী জিয়াউর রহমানই ব্যবস্থা নিতে পারত। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া দূরের কথা, ভবিষ্যতে কেউ যাতে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থা করে দেয়। ওই সময় একটি প্রপাগাণ্ডাৈ ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, যেহেতু এটি সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে এটি আর পরিবর্তন যাবে না।

শুধু এই দোহাই দিয়েই জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পরও বিচারপতি আবদুস সাত্তার, জেনারেল এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশটি বাতিল বা রহিত করেনি। ফলে দায়মুক্তি পেয়ে খুনীরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াত। জিয়া থেকে শুরু করে খালেদা জিয়া পর্যন্ত সব সরকারই বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচারের পরিবর্তে করেছে পুরস্কৃত, করেছে ক্ষমতার অংশীদার। যা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক।

হত্যার বিচার চাওয়ার পথ সাংবিধানিকভাবে অবরুদ্ধ করে দিয়ে জিয়া বাংলাদেশকে মানবাধিকার ও সভ্যতাবিরোধী অমানবিক, অসভ্য, জংলি রাষ্ট্রে পরিণত করে। জিয়া খুনীদের দায়মুক্তি অধ্যাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেই থেমে থাকেনি, দূতাবাসে চাকরির যোগ্যতা না থাকা সত্তে¡ও বিশেষ ব্যবস্থায় খুনীদের চীন, আর্জেন্টিনা, আলজিরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, ইরান, কুয়েত, আবুধাবি, মিসর, কানাডা ও সেনেগালের বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করে। জিয়াউর রহমানের পর বিচারপতি সাত্তার, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকলেও কেউই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেনি। বরং জিয়া খুনীদের দূতাবাসে যে চাকরি দিয়েছিল, এরশাদ ও খালেদা জিয়া তাদের পদোন্নতি দিয়ে বাঙালী জাতির কলঙ্কের দায়কে দীর্ঘায়িত করেছে। দায়মুক্তি পেয়ে ও দূতাবাসে চাকরি-পদোন্নতি পেয়ে খুনীরা ১৫ আগস্টের হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াত। এরশাদ খুনীদের রাজনৈতিক দল গঠন ও সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিল। আর খালেদা জিয়া ’৯৬-এর ১৫ ফেব্রæয়ারির নির্বাচনে খুনী শাহরিয়ার রশিদকে সংসদে বিরোধী দলের নেতা নির্বাচন করেছিল।

একটি দেশে প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরী। কিন্তু এদেশের মানুষসহ বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করেছে, জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পরই মানবতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বিচারের পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কোন সভ্য দেশে ও সমাজে বিচার বন্ধ করে দেয়ার এ ধরনের জঘন্য অধ্যাদেশ/আইন থাকার কথা চিন্তাও করা যায় না। সেনাসমর্থিত ষড়যন্ত্রকারী অকৃতজ্ঞ খন্দকার মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক আদর্শকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল।

দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে ২১ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পাল্টে যায় পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রথমেই জাতির পিতা হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত করতে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল সংক্রান্ত আইনগত দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব আমিন উল্লাহর নেতৃত্বে যে কমিটি গঠন করা হয়, তাদের রিপোর্টেই প্রকাশ পায় এই কুখ্যাত আইনটি বাতিলের জন্য সংবিধান সংশোধনের কোন প্রয়োজন নেই।

কমিটির ওই রিপোর্ট আইন কমিশনের মতামতের জন্য পাঠানো হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি এফ কে এম মুনীরের নেতৃত্বাধীন এই কমিশনও তা সমর্থন করে। এরপর তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী (পরবর্তীতে মন্ত্রী) সদ্য প্রয়াত এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিলের জন্য ‘দি ইনডেমনিটি রিপিল এ্যাক্ট-১৯৯৬’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ নবেম্বরের ঐতিহাসিক দিনে সংসদে পাস হয় মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বিল। ঘোচানো হয় ২১ বছরের জাতীয় কলঙ্ক। যার মাধ্যমে বাতিল হয়ে যায় কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। খুলে যায় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ।

দীর্ঘ ২১ বছর পর শুরু হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া। ১৯৯৮ সালের ৮ নবেম্বর তারিখে মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে ১৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা উচ্চ আদালতে আপীল করার সুযোগ পায়। আপীলে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল এবং ৩ জনকে খালাস প্রদান করা হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে এ মামলার কার্যক্রম ফের স্থবির হয়ে পড়ে।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবার এ বিচারকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৯ সালে লিভ-টু-আপীলের মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপীল শেষে ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে আদালত। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি খুনীদের মধ্যে পাঁচ জনের ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে আরও এক জন দণ্ডিতকে গ্রেফতার করে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। জাতি কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে অবসান হয়েছে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি ও গøানি। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসে জাতির পিতার স্বপ্নের বাংলাদেশ।

লেখক : খায়রুল আলম

যুগ্ম সম্পাদক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)

ঝালকাঠি আজকাল