• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ ও বর্বর হত্যাকান্ড

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৯ জুলাই ২০২১  

পৃথিবীর ইতিহাসে বর্বরতম আইনগুলোর একটি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। শুধু বর্বর বললেও এই আইনের প্রতি উপযুক্ত ঘৃণা প্রকাশ হয় না। কেননা নৃশংস হত্যাকাণ্ড বা অন্য কোনও ঘৃণ্য অপরাধকে আমরা বর্বর বলে থাকি, কিন্তু একটি রাষ্ট্রের স্থপতি, জাতির জনককে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার পর যদি আইন করে সে হত্যার বিচার রুদ্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে এরূপ আইনকে বিশেষায়িত করতে কী উপযুক্ত শব্দ ব্যবহার করবেন? কী ছিল এই আইনে? জনককে সপরিবারে হত্যার এক মাস দশ দিন পর ৯ জুলাই সভ্যতা ও মানবতার ইতিহাসের যে ভয়ংকর কালো আইন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয় সে অধ্যাদেশের মূল কথা হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন খুনিদের বিরুদ্ধে কোনও আদালতে মামলা বা অভিযোগ দায়ের করা যাবে না।

নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞের পর খুনিদের যাতে বিচার করা না যায় এবং হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা ছিল তাদের নাম যাতে প্রকাশ না পায় সেজন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনি মোশতাক। এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশে খুনি মোশতাকের স্বাক্ষর থাকলেও অনেকেই মনে করেন এই অধ্যাদেশ জারির পেছনে মূল ক্রীড়নক ছিলেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ৯ দিনের মাথায় সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকে হটিয়ে নতুন সেনাপ্রধান বনে যাওয়া জিয়াউর রহমান। এমন মনে করার পেছনে প্রধান যুক্তিগুলো হলো–

এক. বঙ্গবন্ধু হত্যার পর খুনিরা সামরিক আইন জারি করলেও সংবিধান বাতিল করেনি। সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনও কারণে দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করবেন। খন্দকার মোশতাক মন্ত্রী ছিলেন, উপ-রাষ্ট্রপতি কিংবা স্পিকার ছিলেন না। সে সময় উপ-রাষ্ট্রপতি ছিলেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর স্পিকার ছিলেন আব্দুল মালেক উকিল। খুনিরা উপ-রাষ্ট্রপতি ও স্পিকারকে রাষ্ট্রপতি না করে মোশতাককে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি করলো। আর ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের ৯ দিন পর সেনাপ্রধান শফিউল্লাহকে সরিয়ে জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করা হলো। খুনিদের পছন্দ জেনারেল শফিউল্লাহ নয় কেন? কিংবা সামরিক বাহিনীর অন্য কোনও কর্মকর্তা নয় কেন? জিয়াউর রহমানই কেন খুনিদের পছন্দ? জিয়া উপ-সেনাপ্রধান ছিলেন সেই নিয়মের কারণে? তাহলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিয়ম অনুযায়ী উপ-রাষ্ট্রপতি ও স্পিকার নয় কেন?

দুই. সংবিধান লঙ্ঘন করে নিযুক্ত অবৈধ রাষ্ট্রপতির প্রতি জিয়া কেন আনুগত্য প্রকাশ করলেন? সেনাপ্রধান হিসাবে সংবিধান সমুন্নত রাখা তার কি দায়িত্ব ছিল না?

তিন. রাষ্ট্রপতি হিসেবে মোশতাকের দায়িত্ব গ্রহণ ছিল সংবিধান লঙ্ঘন। কাজেই সংবিধান লঙ্ঘন করে জোর করে রাষ্ট্রপতি বনে যাওয়া অবৈধ রাষ্ট্রপতি মোশতাক কর্তৃক খুনিদের বাঁচানোর জন্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি। তদুপরি রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশের মাধ্যমে ইচ্ছাখুশি যে কোনও বিধান জারি করতে পারেন না। সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ প্রণয়নের ক্ষমতা বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘সংসদ ভাঙ্গিয়া যাওয়া অবস্থায় অথবা উহার অধিবেশনকাল ব্যতীত, কোন সময়ে রাষ্ট্রপতির নিকট আশু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিদ্যমান রহিয়াছে বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি উক্ত পরিস্থিতিতে যেরূপ প্রয়োজনীয় বলিয়া মনে করিবেন, সেইরূপ অধ্যাদেশ প্রণয়ন ও জারী করিতে পারিবেন এবং জারী হইবার সময় হইতে অনুরূপভাবে প্রণীত অধ্যাদেশ সংসদের আইনের ন্যায় ক্ষমতাসম্পন্ন হইবেঃ তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার অধীন কোন অধ্যাদেশে এমন কোন বিধান করা হইবে না, (ক) যাহা এই সংবিধানের অধীন সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না;…’। কোন বিধান সংসদের আইন-দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে করা যায় না সে বিষয়ে সংবিধানের ৭ ও ২৬ অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত আছে। ৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও আইন যদি সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয়, তাহলে সে আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হবে। অন্যদিকে, ২৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংবিধানে বর্ণিত মৌলিক অধিকারের সাথে অসমঞ্জস আইন বাতিল। ২৬(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র সংবিধানের মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্য কোনও আইন আইন প্রণয়ন করবেন না এবং অনুরূপ কোনও আইন প্রণীত হলে তা মৌলিক অধিকারের কোনও বিধানের সাথে যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হয়ে যাবে।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক আইন জারি হলেও সংবিধানকে বাতিল করা হয়নি বিধায় সংবিধানের প্রদত্ত মৌলিক অধিকারগুলো বিদ্যমান ছিল। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার হিসেবে প্রত্যেকের আইনের আশ্রয়লাভ নিশ্চিত করা হয়েছে, সে বিধানগুলো তখন বলবৎ ছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী হওয়ায় তা শুরু থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবেই বাতিল ছিল। অন্যদিকে, বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায়, রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হিসেবে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং সুবিচার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সংবিধানে বর্ণিত আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার লাভের নিশ্চয়তার সঙ্গে সুস্পষ্টভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বিধায় সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শুরু থেকেই অসাংবিধানিক ও বাতিল ছিল। খুনি মোশতাকের অসাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা দখল করায় সে ছিল অবৈধ রাষ্ট্রপতি। একজন অবৈধ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত সংবিধানবিরোধী অধ্যাদেশ ছিল আইনের ভাষায় অস্তিত্বহীন ও অবৈধ। বিএনপি নেতারা বলে থাকেন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ মোশতাক জারি করেছে, এখানে জিয়াকে জড়ানো ইতিহাস বিকৃতি। প্রশ্ন হলো, মোশতাক খুনের সহযোগী ছিল তাই ইনডেমনিটি দরকার ছিল খুনিদের ও প্রকারান্তরে নিজেকে বাঁচানোর জন্য। কিন্তু সামরিক আইনের আওতায় এই অবৈধ অধ্যাদেশকে জোর করে বহাল রাখা হলেও ১৯৭৯ সালে সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই অধ্যাদেশটি কার্যকারিতা হারায়। সে সময়ের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ইচ্ছা করলে ১৫ আগস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারতেন। কিন্তু জিয়া খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দূরে থাক, অন্য কেউ যাতে ব্যবস্থা নিতে না পারে সেজন্য দায়মুক্তিকে আরও পাকাপোক্ত করতে অস্তিত্বহীন, অবৈধ অধ্যাদেশকে সংসদের আইনের মর্যাদা দেন। পরবর্তীতে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে মানবতা, মানবাধিকার, সভ্যতা, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচাবিরোধী এই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে জিয়া সংবিধানের অংশে পরিণত করে নজিরবিহীন রক্তমূল্য ও সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত সংবিধানকে কলংকিত করেন। জিয়া কেন, কার স্বার্থে অবৈধ রাষ্ট্রপতির অবৈধ আইন যা অসাংবিধানিক ও আইনের ভাষায় অস্তিত্বহীন ছিল, যা সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল, সেই আইনকে সংসদে নিয়ে সংসদের আইনের মর্যাদা দিলেন ও পরে তা সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অংশে পরিণত করলেন? খুনিদের বাঁচাতে হত্যার বিচার চাওয়ার পথ সাংবিধানিকভাবে রুদ্ধ করতে কী স্বার্থ ছিল জিয়ার? কী দায়বদ্ধতার কারণে যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও জিয়া খুনিদের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিলেন? কী কারণে খুনিদের প্রতি জিয়ার এ ভালোবাসা, সহানুভূতি?

চার. ইসলাম ধর্মে অন্যায়ভাবে হত্যা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা জমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করলো সে যেন দুনিয়ার সব মানুষকেই হত্যা করলো, আর যে মানুষের প্রাণ বাঁচালো, সে যেন তামাম মানুষকে বাঁচালো।’ (সুরা মায়িদা: ৩২)

অন্য এক আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন, তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩) কোরআনের বিধান অনুসারে হত্যাকারীকে আইনের সহায়তায় ঠিক সেভাবেই হত্যা করা হবে, যেভাবে সে হত্যা করেছে, যদি না নিহতের নিকটজন হত্যাকারীকে ক্ষমা করে ছেড়ে দেয়। কোরআনে হত্যার বিচার বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘মুমিনরা, তোমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে অন্যায়ভাবে হত্যার বিরুদ্ধে অনুরূপ প্রতিশোধ নিতে’ (সুরা বাকারাহ ১৭৮-১৭৯) হাদিসে বর্ণিত হয়েছে: ‘দুনিয়া ধ্বংস করার চেয়েও আল্লাহর কাছে ঘৃণ্যতর কাজ হলো মানুষ হত্যা করা।’ (তিরমিজি শরিফ) অন্য এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যদি আসমান ও জমিনের সব অধিবাসী একজন মুসলমানকে অন্যায়ভাবে হত্যার জন্য একমত হয়, তবে আল্লাহ তাদের সবাইকে অবশ্যই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ) ইসলামে যুদ্ধক্ষেত্রেও নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা করা নিষিদ্ধ’।(মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ: ষষ্ঠ খণ্ড, পৃ: ৪৮৭-৪৮৮) অথচ ১৫ আগস্ট নিরীহ, নিরস্ত্র নারী ও শিশু হত্যাকে দায়মুক্তি দেওয়া হলো জিয়া-মোশতাকের জারি করা আইনে। জিয়া একদিকে সংবিধানে বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম ও এক আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন যুক্ত করলেন, আর অন্যদিকে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স.) আদেশ-নির্দেশের বিরুদ্ধে যেয়ে খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করতে ইনডেমনিটিকে সংবিধানের অংশে পরিণত করলেন। খুনিদের বাঁচাতে কেন এ বৈপরীত্য আর ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান?

পাঁচ. ইনডেমনিটি আইনে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করে জিয়া যে অন্যায় করেছেন তার অনুসারীরা কী সে অপরাধ অনুধাবন করেন? যদি করেন, তাহলে ইনডেমনিটি পাসের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর যেদিন ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ রহিত করার জন্য সংসদে আইন পাস হয়, সেদিন বিএনপি ও জামায়াতের সংসদ সদস্যরা সংসদে অনুপস্থিত ছিলেন কেন? খুনিদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি বাতিলের বিরুদ্ধে হরতাল আহ্বান করেছিলেন কেন? ইনডেমনিটি আইন বাতিলকে চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৭ সালে খুনি শাহরিয়ার রশিদ উচ্চ আদালতে যে রিট দায়ের করেছিলেন সে মামলায় শাহরিয়ার রশিদের আইনজীবী ছিলেন খালেদা জিয়া সরকারের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কোরবান আলী। এ মামলায় আদালত বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দীন আহমেদকে নিরপেক্ষ পরামর্শ দেওয়ার জন্য আদালতের মিত্র তথা অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধ আইন হিসেবে যুক্তি তুলে ধরেন। তার মানে পরোক্ষভাবে জনক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকে তিনি বৈধ মনে করেন। কথায় কথায় ৭৫ এর ১৫ আগস্টের পুনরাবৃত্তির হুমকি শুনি বিএনপি ও জামায়াত নেতাদের মুখে। ২০১৭ সালে আগস্ট মাসে ‘১৫ আগস্ট ও ২১ আগস্ট’ নিয়ে এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘১৫ আগস্ট এবং ২১ আগস্ট এগুলো কোনও বিষয় না, এরকম দুর্ঘটনা হতে পারে। এটা নিয়ে সারাজীবন কান্নাকাটির কী আছে?’ এসব ঘটনা প্রমাণ করে ইনডেমনিটির বিষয়ে জিয়ার অনুসারীদের অবস্থান ও জিয়ার অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

পরাশক্তি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছি আমরা। কিন্তু কিছু বিচ্ছিন্ন প্রতিবাদ ছাড়া মোশতাক-জিয়া গংয়ের জারিকৃত বর্বর ইনডেমনিটির বিরুদ্ধে সাহস করে দৃঢ়ভাবে প্রতিবাদ করতে পারিনি আমরা। ২১ বছর ধরে জনক হত্যার বিচারহীনতাকে সরব প্রতিবাদহীনতায় মেনে নিয়েছি। এখনও যারা ইনডেমনিটির পক্ষে, যারা এই বর্বর আইনকে বৈধ মনে করে, তাদেরকে অনেকে সমর্থন করি, ভোট দেই, নির্বাচিত করি। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, খুনিদের একাংশের দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, যদি ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ৩২ নম্বরে থাকতেন কিংবা জনকের প্রতি কিছু কৃতঘ্ন বাঙালির বিশ্বাসঘাতকতার অভিমানে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতেন, তাহলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আজও কি সংবিধানের অংশ হয়ে থাকতো না? জাতির পিতাকে হত্যা করে হত্যার বিচারের পথ আইন করে রুদ্ধ করে দেওয়ার কলঙ্কের দায় আজও বয়ে বেড়াতে হতো না?

মো. জাকির হোসেন

লেখক: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ঝালকাঠি আজকাল