• মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৭ ১৪৩১

  • || ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

লিপ ইয়ার বা ২৯ ফেব্রুয়ারি নিয়ে যত মজার তথ্য

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ মানে বছরের একটি অতিরিক্ত দিন। আর ফেব্রুয়ারি মাসের একটা বাড়তি দিন যুক্ত হওয়ার গল্প জানতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে ২ হাজার ৬৬ বছর আগে। অর্থাৎ খ্রিস্টের জন্মের ৪৬ বছর আগে। অবশ্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের কারণে ২৯ ফেব্রুয়ারি ‘লিপ ডে’ হলেও এ নিয়ে বৈজ্ঞানিক আগ্রহ কম।

এখন প্রশ্ন হলো কীভাবে হয় লিপ ইয়ার? চলুন জেনে নিই সে বিষয়ে বিস্তারিত-

মূলত সৌরজগতের বিশৃঙ্খল অবস্থার জন্যই লিপ ইয়ারের অতিরিক্ত দিন। ৩৬৫ দিনে বছর ধরা হলেও সব মিলিয়ে সময় লাগে ৩৬৫.২৪২২ দিনের মতো। যা প্রতি চার বছরে একটা বাড়তি দিন যোগ করে।

রোমের ক্ষমতাধর শাসক জুলিয়াস সিজারের শাসন আমল শুরুর আগে ৩৫৫ দিনে বছর গণনা করা হত। এতে করে প্রতি দুই বছর পরপর ২২ দিনের মাস যুক্ত হতো। যা একটি জটিল প্রক্রিয়া ছিল। এর সমাধানে এ শাসকের নির্দেশেই ৩৬৫ দিনে বছর গণনা শুরু হয়। যে অতিরিক্ত প্রায় ছয় ঘণ্টা থেকে যায়, তা মিলিয়ে নিতে চার বছর পরপর একটা অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে যুক্ত করা হয়।

দেখা গেল, পার্থিব বছরের সময়ের ক্ষয়ক্ষতির প্রায় পুষিয়ে দেয়া যায় চার বছর অন্তর ফেব্রুয়ারি মাসের সঙ্গে একটা দিন যোগ করে দিলে। আর সেই থেকেই জন্ম হলো ২৯ ফেব্রুয়ারির। যার নাম ‘লিপ ডে’। আর এই দিনটি যে বছরে যুক্ত হয়, সেই বছরটির নাম ‘লিপ ইয়ার’।

প্রতি চার বছর অন্তত একটি দিন যোগ করার সিস্টেম চলল প্রায় ১৬০০ বছর। এরপর ১৫৮২ খ্রিস্টাব্দে তদানীন্তন পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি ক্যালেন্ডারে ‘লিপ ডে’ আরও নিখুঁতভাবে সাজানোর পরিকল্পনা করলেন এবং নতুন ক্যালেন্ডার চালু করলেন। যা আজও পৃথিবীজুড়ে অনুসরণ করা হয়।

হিসাব করলে দেখা যায়, যেহেতু পার্থিব বছরের আয়ু ৩৬৫.২৪২১৯ গড় সৌর দিবস তাই প্রতি ৪০০ বছরে ৯৭টি দিন বেশি হয়। সেই দিনগুলিকে পার্থিব বছরের হিসাবের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে হলে কোনো শতাব্দীর যে বছরগুলোর শেষে দুটি শূন্য (০) রয়েছে তাকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করতে হবে। যদি কোনো ভাগশেষ থাকে তাহলে সেই বছরগুলো লিপ ইয়ার হবে না। আর ভাগশেষ না থাকলে, সেগুলো লিপ ইয়ার হবে। এই কারণে ১৬০০ সাল ইয়ার হলেও ১৭০০, ১৮০০ এবং ১৯০০ সাল লিপ ইয়ার ছিল না। একইভাবে ২০০০ লিপ ইয়ার হলেও ২১০০, ২২০০ এবং ২৩০০ সাল লিপ ইয়ার হবে না।

অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানীর ধারণা সম্রাট সিজার অগাস্টাসের ব্যক্তিগত ইচ্ছাতেই ফেব্রুয়ারি মাস ২৯ দিনের। এক সময় ফেব্রুয়ারি মাস ৩০ দিনের ছিল। লিপ ইয়ারের এই দিনে এক সময় মেয়েরা ছেলেদেরকে মনের কথা জানাতেন। যার অন্যতম উদাহরণ পঞ্চম শতকে সেন্ট ব্রিজেটের ঘটনা, যা নিয়ে অবশ্য বেশ বিতর্ক আছে। প্রচলিত আরেকটি ঘটনার সঙ্গে যুক্ত আছেন স্কটল্যান্ডের রানি মার্গারেট। সে সময় কোনো পুরুষ লিপ ইয়ারে মেয়েদের দিক থেকে আসা বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলে জরিমানা দিতে হত। এই রীতি বেশি প্রচলিত ছিল ১৯ শতকে।

লিপ ইয়ারে মেয়েদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টিতে বিশ্বজুড়ে ভিন্নতা দেখা যায়। ডেনমার্কে জুলিয়াস সিজারের সময় থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি ছেলেদের মনের কথা জানাতেন মেয়েরা। এ দিনে কোনো পুরুষ নারীর দেয়া বিয়ের প্রস্তাব না মানলে ওই নারীকে ১২ জোড়া দস্তানা দিতে হয়। ফিনল্যান্ডে দিতে হতো স্কার্ট বানানোর কাপড়। অন্যদিকে গ্রিসে লিপ ইয়ারের দিন বিয়ে করা অশুভ।

টেক্সাসের অ্যান্থনি শহর লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের রাজধানী বলে স্বীকৃত। ১৯৮৮ সালে এই শহরের বাসিন্দা ও লিপ ইয়ারে জন্ম নেয়া ম্যারি অ্যান ব্রাউন চেম্বার অব কমার্সের কাছে যান শহরে একটা লিপ ইয়ার উৎসবের আবেদন নিয়ে। সেই আবেদন গ্রহণ করা হয়। সেময় অ্যান্থনিকে ঘোষণা দেয়া হয় বিশ্বের লিপ ইয়ার রাজধানী হিসেবে।

গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ছাড়াও অন্যান্য ক্যালেন্ডারেও লিপ ইয়ারের প্রয়োজন পড়ে। আধুনিক ইরানের ক্যালেন্ডারে প্রতি ৩৩ বছরে ৮টা লিপ ডে আছে। এ ছাড়াও ভারতের জাতীয় ক্যালেন্ডার এবং বাংলাদেশের যে বাংলা পঞ্জিকাবর্ষ তাতেও লিপ ইয়ার এমনভাবে রাখা হয় যাতে লিপ ডে সব সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৯ ফেব্রুয়ারির কাছাকাছি থাকে।

ক্রিস্টোফার কলম্বাসের অভিযাত্রা নিয়েও রয়েছে এ ফেব্রুয়ারির ২৯ দিন নিয়ে মাজার তথ্য। তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে চূড়ান্ত অভিযানের সময় ১৫০৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারির চন্দ্রগ্রহণকে নিজের সুবিধার্থে কাজে লাগান।

ঝালকাঠি আজকাল