• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ পদ খালি রাখা যাবে না

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৪ মে ২০২৩  

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগেই উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে হবে। এসব পদ ফাঁকা রাখা যাবে না। দেরি হলে বা গড়িমসি করলে এসব পদে নিয়োগ দেবে সরকার।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ সংশোধনী খসড়ায় এমন ধারা যুক্ত করা হয়েছে। খসড়াটি সুপারিশের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে এসব পদ ফাঁকা রেখে পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নিয়োগে স্বজনপ্রীতি এবং প্রশাসনিক অনিয়ম বাড়ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির একজন কর্মকর্তা  বলেন, এসব অনিয়ম রোধে আইনের প্রয়োগ কঠোর ও দ্রুততম করতে আইনটি সংশোধন করা প্রয়োজন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ লক্ষ্যে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দকে আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. আব্দুল মতিনকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পক্ষ থেকে খসড়াটি প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোতে সুপারিশের জন্য পাঠানো হয়েছে।

সংশোধিত খসড়ায় দেখা যায়, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম চলছে, সেগুলোতে উল্লিখিত পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের মেয়াদোত্তীর্ণের কমপক্ষে চার মাস আগে যোগ্যতাসম্পন্ন অধ্যাপকদের তালিকা পাঠাতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) নির্ধারিত সময়ে তালিকা পাঠাতে ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সুপারিশে সরকার এসব পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে পারবে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে আচার্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর পরিবর্তে ইউজিসির কাছে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। আচার্যের কাছে এই প্রস্তাব পাঠাবে ইউজিসি।

ইউজিসির সর্বশেষ তথ্য মতে, দেশের মোট অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১১১টি। এর মধ্যে ১০৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাঠদান কার্যক্রম চলছে ১০২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩১টির উপাচার্য নেই, ৩৬টিতে কোষাধ্যক্ষ নেই।

ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতা কমছে : বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের বিভিন্ন স্থান থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। সিন্ডিকেটের সুপারিশক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর পদ সৃষ্টি, সৃষ্ট পদের দায়িত্ব-কর্তব্য, চাকরির শর্তাবলি ও বেতনক্রম, শিক্ষার্থী ফি নির্ধারণ এবং নিয়োগসংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা ট্রাস্টি বোর্ডের অধীনে থাকার বিষয়টি আইনের ধারা থেকে বিলুপ্ত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সিন্ডিকেটসভা থেকেই অনুমোদনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধি প্রণয়নে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অনুমোদনের জন্য পাঠানোর উপধারাটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনে নতুন দুটি উপধারা যোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিওটির কোনো সদস্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সভায় বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য কোনো আর্থিক সুবিধা নিতে পারবেন না। বিওটি সদস্যদের পরিবারের কেউ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না, আর্থিক সুবিধাও গ্রহণ না করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

খসড়া আইন অনুযায়ী, উপাচার্য তাঁর কাজের জন্য আর বিওটির কাছে দায়ী থাকবেন না। বরং সিন্ডিকেটের কাছে দায়ী থাকবেন। ‘আচার্য বিওটির সুপারিশে উপাচার্যকে অপসারণ করতে পারবেন’ বলে যে আইন রয়েছে, এখানে বিওটির ‘সুপারিশ’ শব্দটি বাতিল করা হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ অপসারণে সিন্ডিকেটের সুপারিশে বিওটি আচার্যের কাছে প্রস্তাব করার বিষয়টিও সংশোধন করা হয়েছে। খসড়া আইন অনুযায়ী, আচার্য চাইলে বিওটির প্রস্তাব ছাড়াই যেকোনো সময় কোষাধ্যক্ষকে অপসারণ করতে পারবেন।

বোর্ড অব ট্রাস্টিজে (বিওটি) অন্যূন এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। কমিশনের সুপারিশে সরকারের অনুমোদন ছাড়া বিওটিতে কোনো পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করা যাবে না। প্রয়োজনে বিওটিতে কমিশন বা সরকার থেকে সাময়িকভাবে একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন করা যাবে।

সিন্ডিকেট কমিটিতে পরিবর্তন : সিন্ডিকেট কমিটিতে সদস্যপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিওটি থেকে মনোনয়নের সংখ্যা তিনজন কমিয়ে দুজন করা হয়েছে। সিন্ডিকেট কমিটিতে ইউজিসির মনোনীত একজন অধ্যাপকের পরিবর্তে দুজন শিক্ষাবিদ যুক্ত করার বিষয় যোগ করা হয়েছে। ‘কোষাধ্যক্ষ যিনি সিন্ডিকেটের সচিব হবেন’ দফাটি বিলুপ্ত করে এর পরিবর্তে দুটি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। কোষাধ্যক্ষ সিন্ডিকেটসভার সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনের নীতিমালা অনুসরণ করে কমপক্ষে প্রতি তিন মাসে একবার সিন্ডিকেটসভা হবে।

একাডেমিক কাউন্সিল : বিওটির মনোনীতি তিন সদস্য থেকে একজনকে সভাপতি করার আইন সংশোধন করা হয়েছে। খসড়া আইন অনুযায়ী, উপাচার্য হবেন একাডেমিক কাউন্সিলের সভাপতি। অ্যালামনাই সদস্যদের এই কমিটিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি অনুষদ বা স্কুল থেকে একজন করে অ্যালামনাই সদস্য একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণে সতর্কতা : দেশে বা বিদেশে স্বীকৃত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল বা আছে—এমন নামে বা নামের সাদৃশ্য রেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনে প্রস্তাব দেওয়া যাবে না। জেলা, শহর, বিভাগ বা দেশের নাম বা আন্তর্জাতিক শব্দটি ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম প্রস্তাব করা যাবে না। কেউ এমন নাম প্রস্তাব করলে ইউজিসির সুপারিশক্রমে সরকার এই নাম পরিবর্তন করতে পারবে। মহাসড়ক ও বাইপাস সড়কের কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না।

আরো পরিবর্তন : প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থী ফি কাঠামো নির্ধারণ করে অনুমোদনের জন্য ইউজিসিতে পাঠাতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী একটি প্রগ্রামে যে বেতন কাঠামোতে ভর্তি হবে, সেই প্রগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেতন বাড়ানো যাবে না। কমিশন কর্তৃক গাইডলাইন অনুযায়ী প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন কাঠামো প্রস্তুত করে কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে একটি করে অভ্যন্তরীণ গুণগত মান নিশ্চিতকরণ সেল বা ইউনিট থাকবে, যা প্রতিবছর গৃহীত ব্যবস্থা নিয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর কমিশনকে সেই রিপোর্ট পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি থাকার বিষয়টিও উপধারায় যুক্ত করা হয়েছে।

সংশোধিত খসড়া আইন কমিটির আহ্বায়ক ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ট্রাস্টি বোর্ডের ক্ষমতা কমানো হয়নি। বরং আইনের একটি ব্যালান্স তৈরি করা হয়েছে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একটি ধরাবাঁঁধা নীতিমালার মধ্যে চলছে। সেভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও নিয়ম-নীতি সংশোধনের কাজ চলছে। আইনটি বাস্তবায়িত হলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য কমে আসবে।

ঝালকাঠি আজকাল