• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

ন্যূনতম আয়কর দিলেই মিলবে এই ৪৪ সেবা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৪ জুন ২০২৩  

২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে সরকারি ৪৪ ধরনের সেবা নিতে ন্যূনতম দুই হাজার টাকা আয়কর বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ব্যক্তির বাৎসরিক আয় করমুক্ত আয়সীমা তিন লাখ ৫০ হাজারের নীচে হলেও এই বিধান কার্যকর হবে।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়, রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে এমন করদাতার মোট আয় করমুক্ত সীমা অতিক্রম না করলেও বা বার্ষিক আয় তিন লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে হলেও আয়ের পরিমাণ নির্বিশেষে ন্যূনতম করের পরিমাণ দুই হাজার টাকা হবে। সে ক্ষেত্রে ৪৪ ধরনের সেবা নিতে হলে করদাতাকে দুই হাজার টাকা ন্যূনতম আয়কর দিয়ে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এখন পর্যন্ত ৩৮ ধরনের সেবা নিতে হলে আয়কর রিটার্ন রসিদ জমা দিতে হয়।

বর্তমানে যে ৩৮ ধরনের সেবা নেয়ার জন্য আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়-
১. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঁচ লাখ টাকা বা তার বেশি অঙ্কের ঋণের আবেদন করলে;

২. কোম্পানির পরিচালক বা উদ্যোক্তা পরিচালক হলে;

৩. আমদানি ও রফতানি নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্র পেতে;

৪. সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার অধীনে ট্রেড লাইসেন্স লাভ বা নবায়ন;

৫. সমবায় সমিতির নিবন্ধন লাভের ক্ষেত্রে;

৬. সাধারণ বীমা কোম্পানির সার্ভেয়ার হিসেবে লাইসেন্স পেতে বা তালিকাভুক্ত হতে;

৭. নিবন্ধন, স্থানান্তর চুক্তি, বায়নানামা, আমমোক্তারনামা, জমি বিক্রয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলা সদরে অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ, যেখানে চুক্তি মূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি;

৮. ক্রেডিট কার্ড নেয়া বা ধারাবাহিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে (শিক্ষার্থীদের জন্য দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়);

৯. চিকিৎসক, ডেন্টিস্ট, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি, সার্ভেয়ার বা অন্যান্য সমজাতীয় পেশাদারদের পেশাদার সংগঠনের সদস্যপদ লাভ বা টিকিয়ে রাখতে;

১০. মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইনের অধীনে লাইসেন্স লাভ ও টিকিয়ে রাখতে;

১১. বাণিজ্য ও পেশাদার সংগঠনের সদস্যপদ লাভ ও টিকিয়ে রাখতে;

১২. ওষুধ বিক্রির লাইসেন্স পাওয়া ও টিকিয়ে রাখা, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশগত ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ক্লিয়ারেন্স পেতে;

১৩. যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গ্যাসের আবাসিক সংযোগ;

১৪. ভাড়ায় চালিত লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, ডাম্ব বার্জ ইত্যাদিসহ যেকোনো জলযানের জরিপ সার্টিফিকেট লাভ বা তার মেয়াদ অব্যাহত রাখার চালিয়ে যাওয়া;

১৫. জেলায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় বা পরিবেশ অধিদফতরের দ্বারা ইট তৈরির অনুমতি প্রাপ্তি বা অনুমতি নবায়ন করা, যেখানে যেটা প্রযোজ্য;

১৬. সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর দফতর ও পৌরসভা এলাকায় আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রম বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি সংস্করণের অধীনে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে সন্তান বা পোষ্যের ভর্তির ক্ষেত্রে;

১৭. সিটি কর্পোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ-সংযোগ পাওয়া;

১৮. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ পাওয়া ও অব্যাহত রাখা;

১৯. অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া বা অব্যাহত রাখা;

২০. আমদানির উদ্দেশ্যে একটি ঋণপত্র খোলা;

২১. পাঁচ লাখ টাকার বেশি অঙ্কের পোস্টাল সঞ্চয়ী হিসাব খোলা;

২২. ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যাল্যান্স যেকোনো ধরনের ব্যাংক হিসাব খোলা ও অব্যাহত রাখা;

২৩. পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র ক্রয়;

২৪. যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা যেমন, উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ;

২৫. মোটর গাড়ি, স্থান, বাসস্থান বা অন্য কোনো সম্পদ দিয়ে অভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করা;

২৬. ব্যবস্থাপক বা প্রশাসনিক কার্যক্রমে নিযুক্ত বা উৎপাদন কার্যক্রমের তত্ত্বাবধায়ক পদে নিযুক্ত যেকোনো ব্যক্তির ‘বেতন’ হিসেবে অর্থ গ্রহণ;

২৭. বছরের যেকোনো সময় ১৬ হাজার টাকা বা তার বেশি মূল বেতন গ্রহণ করলে, সরকারি বা কর্তৃপক্ষের, কর্পোরেশনের, আইন দ্বারা সৃষ্ট সরকারি সংস্থার কর্মচারীদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য;

২৮. মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বা মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্টের রিচার্জের ক্ষেত্রে অর্থ স্থানান্তরের ক্ষেত্রে কোনো কমিশন, ফি বা অন্য ন্যূনতম প্রাপ্তির ক্ষেত্রে;

২৯. কোনো উপদেষ্টা বা পরামর্শ পরিষেবা, ক্যাটারিং পরিষেবা, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট পরিষেবা, জনবল সরবরাহ বা নিরাপত্তা পরিষেবা দেওয়ার জন্য কোনো সংস্থার কাছ থেকে কোনো নিবাসীর অর্থ গ্রহণ;

৩০. মাসিক পেমেন্ট অর্ডারের (এমপিও) অধীনে সরকারের কাছ থেকে কোনো পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করা, যদি তার পরিমাণ প্রতি মাসে ১৬ হাজার টাকার বেশি হয়;

৩১. বিমা কোম্পানির এজেন্সি প্রত্যয়নপত্রের নিবন্ধন বা নবায়ন;

৩২. দুই-তিন চাকার গাড়ি ব্যতীত যেকোনো ধরনের মোটর গাড়ির ফিটনেস নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা নবায়নের ক্ষেত্রে;

৩৩. এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে নিবন্ধিত বেসরকারি সংস্থাকে বা মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্সধারী ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণকারী সংস্থার বিদেশি অনুদান দেওয়া;

৩৪. বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে যেকোনো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রি করা;

৩৫. কোম্পানি আইন, ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) ও সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০ (১৮৬০ সালের আইন নং XXI) এর অধীনে নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্যপদ লাভের জন্য আবেদন জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে;

৩৬. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা পরিষেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে একজন নির্বাহীর দরপত্র নথি জমা দেওয়া;

৩৭. আমদানি বা রফতানির জন্য বিল অব এন্ট্রি জমা দেওয়া;

৩৮. রাজউক, সিডিএ, কেডিএ, আরডিএ বা সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় যেকোনো ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা জমা দেওয়া।

আয়কর আইন অনুযায়ী আগে থেকে এই ৩৮ ধরনের সেবা নিতে আয়কর রিটার্নের নমুনা সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রদর্শন করা প্রয়োজন ছিল। এক্ষেত্রে ব্যক্তির বাৎসরিক আয় করমুক্ত সীমার নীচে হলে কোনো কর দিতে হতো না। প্রস্তাবিত বাজেটে শূন্য (০) আয়কর হলেও তাকে কমপক্ষে দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।

নতুন আয়কর আইনে এ ক্ষেত্রে আরও ছয়টি সেবা যুক্ত করা হচ্ছে। ফলে আরও ছয় ধরনের সেবা পাওয়ার জন্য দুই হাজার টাকার ন্যূনতম আয়কর রিটার্নের প্রমাণ দাখিল করতে হবে। অর্থাৎ করমুক্ত আয়ের নীচে আয় হলেও  ৪৪ ধরনের সেবা নিতে হলে দুই হাজার টাকা আয়কর দিতে হবে।

আগামী অর্থবছরের বাজেটে অবশ্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল করমুক্ত আয়ের সীমা তিনলাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে তিনলাখ টাকা করার প্রস্তাব করেছেন। এখন একজন ব্যক্তির তিনলাখ টাকা আয়ের ওপর তাকে কোনো কর দিতে হয় না।

দেশের প্রায় ৮৮ লাখ মানুষ আছেন, যাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর বা টিআইএন আছে। এদের মধ্যে ৩০ লাখের কিছু বেশি মানুষ তাদের রিটার্ন জমা দেন। আর এর ১২ লাখের বেশি শূন্য কর দেখিয়ে রিটার্ন জমা দেন, অর্থাৎ তাদের কোনো আয়কর দিতে হয় না। দুই হাজার টাকা কর দেওয়া সম্পর্কিত প্রস্তাবনা কার্যকর হলে এসব আয়কর রিটার্নেও দুই হাজার টাকা গুনতে হবে।

ঝালকাঠি আজকাল