• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ঘর পেয়ে মহাখুশি অসহায়রা

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৭ জুলাই ২০২১  

‘আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে মুজিব শতবর্ষে নরসিংদী সদর উপজেলার ভিটে বাড়িহীন অসহায় ও দুস্থরা আজ শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়ে মহাখুশি। তাদের কাছে যেন ঘরগুলো স্বপ্নের ঠিকানা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এসব উপহার। 

‘একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোগকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলোর মুখে হাসি ফুটাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাচ্ছেন দরিদ্র পরিবারগুলো। দিনের পর দিন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছিল এ পরিবারগুলো। কবে হবে তাদের স্বপ্নের ঠিকানায় মাথা গোঁজার ঠাঁই। 

অবেশেষে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তাদের আশা পুরণ হতে যাচ্ছে। নির্মিত হয়েছে দুই কক্ষবিশিষ্ট তাদের জন্য আধাপাকা ঘর। লাল আর সবুজের সমারোহে উন্নত মানের ঢেউটিনের চালাসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ টয়লেট, রান্নাঘর ও স্টোর রুমও রয়েছে। 

এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থাও করে দেয়া হয় প্রতিটি ঘরে। এছাড়া নরসিংদী সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী মোরশেদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহ আলম মিয়া নিয়মিত এসব বাড়ি তদারকি করছেন। প্রকল্পে বসবাসরত অসহায় মানুষকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের বিষয়েও কাজ করছেন তারা।  

সদর উপজেলার আমদিয়া ইউনিয়নের কান্দাপাড়া প্রকল্পে বসবাসরত প্রতিবন্ধী শাহিনুর আক্তার একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী, একটি দরিদ্র পরিবারে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পর একটি ছেলে সন্তান জন্ম নেয়ার কিছুদিন পর স্বামী মারা যায়। স্বামীর পরিবারের পক্ষে শাহিনুরকে ছেলেসহ লালন পালনের ক্ষমতা না থাকায় বাবার বাড়ি চলে আসেন শাহিনুর। এমন মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে মহাখুশি এই শাহিনুর। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘর না পেলে হয়তো তার জীবনে অন্যের বাড়িতেই কাটাতে হতো বলে জানান শাহিনুর। 

একই প্রকল্পে বসবাস করেন খাদিজা নামে আরেক বিধবা। বাবা মা অসহায়, যার ফলে বেশি লেখাপড়া করতে পারেনি সে। এরইমধ্যে বাবা তাকে বিয়ে দেয়। বিয়ের পর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে গেলে একমাত্র সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতে হয় অন্যের বাড়িতে। আজ প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে মহাখুশি এই খাদিজা। এখানে থাকে মা আর সন্তানটিকে নিয়ে। আর বলেন আল্লায় যেন শেখ হাসিনাকে দীর্ঘদিন বাঁচিয়ে রাখেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাস করেন মরনী রানী নামে এক বিধবা। স্বাধীনতা যুদ্ধের
সময় মারা যায় তার বাবা মা। এরপর আশপাশের লোকজন লালন পালন করে বিয়ে দেয়। এরই মধ্যে স্বামীও মারা যায়। ফলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে চাকরি করে জীবন বাঁচায় মরনী। কিন্তু বসবাস করতে হয় অন্যের বাড়িতেই। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পেয়ে আজ তিনি অনেক খুশি। তাই তিনি সারা জীবন প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করবেন বলে জানালেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে বসবাস করেন আফাজ উদ্দিন নামে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা। যিনি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে দেশকে শত্রুমুক্ত করেছেন। তারও কোনো নিজস্ব বাড়ি ঘর ছিল না। তিনিও আজ সাদরেই গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর।

এ ঘরেই বসবাস করেন রত্মা নামে এক তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি। তার কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে শিল্পাঞ্চল মধাবদীতে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ‘ত্রি নয়ন’ নামে একটি বিউটি পার্লারের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এমন করেই বসবাস করছেন এই প্রকল্পের ঘরে বসবাসকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব ঘরে, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, মুক্তিযোদ্ধা ও তৃতীয় লিঙ্গের অসহায় মানুষ বসবাস করছেন। যাদের জীবনে এমন ঘর তৈরি করার মতো ক্ষমতা নেই। আর তারা এসব ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আজ দোয়া করছেন বলে জানলেন স্থানীয় আমদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন ভূইয়া রিপন। 

ঘরগুলোর বিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহ আলম মিয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি সেবাধর্মী কাজ হচ্ছে এই উপহারের ঘর। যার ফলে নরসিংদীর জেলা প্রশাসকের নিদের্শনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পরামর্শে প্রতিটি ঘর যেন সঠিক মান, ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করা হয় তার জন্য আমি নিজে উপস্থিত থিকে কাজ করিয়েছি। এছাড়া নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এই ঘরগুলোতে বৈদ্যুতিক ও পানির ব্যবস্থা করা হয়। করোনাকালীন তাদের ঘরে খাদ্যের ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহায়তায় এখানে ফলজ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।    

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে নরসিংদী সদর উপজেলায় সরকারিভাবে ২৭টি ঘর নির্মিত হয়েছে। এর মধ্যে প্রথমধাপে ৪টি দ্বিতীয় ধাপে ২৩টি। তৃতীয় ধাপে আরো কিছু ঘর তৈরির কাজ চলছে।

ঝালকাঠি আজকাল