• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

ইউপি কার্যালয় হয়ে গেল ‘সৌদি দূতাবাস’

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ৭ আগস্ট ২০২২  

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে যেতে দূতাবাসে গিয়ে দিতে হবে আঙুলের ছাপ। শনিবার ছিল এর শেষ দিন। তাই সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আঙুলের ছাপ দিতে আসেন ২০-২৫ জন নারী। তবে ঢাকায় নয়, তারা এসেছেন একটি ইউনিয়ন পরিষদে। আর এ ইউনিয়ন পরিষদই সৌদি দূতাবাস। এভাবেই প্রতারণা করছিল একটি চক্র।

ঘটনাটি ঘটেছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে। ফরম পূরণের পর সৌদি যেতে আগ্রহী নারীদের আঙুলের ছাপ নিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ চক্রটি। যদিও শেষ রক্ষা হয়নি চক্রটির কয়েকজন সদস্যের।

শনিবার বিকেলে ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমের ফাঁকে এমন প্রতারণা করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশনের অপারেটরসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

আটকরা হলেন- নির্বাচন কমিশনের ভোটার হালনাগাদ প্রজেক্টের কম্পিউটার অপারেটর বানিয়াচং উপজেলার ৩০ বছর বয়সী জমশেদ মিয়া, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ইকড়ছই গ্রামের ৩৫ বছরের আবু সুফিয়ান ও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ২৮ বছরের ফাহিম চৌধুরী।

ভুক্তভোগীরা জানান, ৪ আগস্ট থেকে নবীগঞ্জের বাউসা ইউনিয়নে চলছিল নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম। শনিবারও অন্যান্য দিনের মতো নতুন ভোটার হতে ফরমে ঠিকানা, জন্মনিবন্ধন নম্বরসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়ার পর আঙুলের ছাপ দিচ্ছিলেন অনেকে।

এ সময় নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে ঠিকানা, জন্মনিবন্ধন নম্বরের তথ্য অপূরণ রেখেই সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমীর আঙুলের ছাপ নেন জমশেদ মিয়া। এরপর নেত্রকোণার ফাহিমা ও বিশ্বনাথের রিমা বেগমের ছাপ নেন। কিন্তু অপরিচিত দেখে সন্দেহ হলে আবু সুফিয়ান, ফাহিম চৌধুরী ও তিন নারীকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে থানায় খবর দিলে সন্ধ্যা ৭টার দিকে জমশেদ মিয়া, আবু সুফিয়ান ও ফাহিম চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ।

সুনামগঞ্জের সুলতানা আক্তার সুমী বলেন, আমি তিন বছর সৌদি আরবে ছিলাম। এক বছর আগে দেশে এসেছি। ফের আমাকে সৌদি আরবে পাঠানোর কথা বলে চলতি বছরের এপ্রিলে ১৫ হাজার টাকাসহ পাসপোর্ট নেন আবু সুফিয়ান। সৌদিতে যেতে হলে দূতাবাসে গিয়ে আঙুলের ছাপ দিতে হবে বলেও জানান তিনি। তাই আমিসহ ২৫ জন নারীকে সৌদি দূতাবাসে নেয়ার জন্য দুটি মাইক্রোবাসে করে বাউসা ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসেন সুফিয়ান ও তার সহযোগীরা। আমি আঙুলের ছাপও দিয়েছি।

নেত্রকোণার ফাহিমা আক্তার বলেন, আমি চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি। সৌদি আরবে নেয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা নেন আবু সুফিয়ান। শনিবার আঙুলের ছাপ দেওয়ার শেষ দিন বলে আমাকে চট্টগ্রাম থেকে এখানে নিয়ে আসেন। ঝামেলার কারণে আঙুলের ছাপ দেইনি।

বাউসা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদিকুর রহমান শিশু মিয়া বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে তথ্য গোপন করে বাউসা ইউনিয়নে ভোটার করার জন্য কয়েকজন দালাল ও নির্বাচন অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আমার ইউনিয়নে নিয়ে আসা হয়। আঙুলের ছাপ দেওয়ার সময় অপরিচিত দেখে তাদের আটক করে গ্রাম পুলিশ ও স্থানীয় মানুষ।

নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ঘটনাটির প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছি। আমাদের কেউ জড়িত থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমেদ বলেন, এখানে নতুন ভোটার হওয়ার ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য না দিয়েই অন্যান্য জেলার নারীদের আঙুলের ছাপ নেয়া হয়। এ ঘটনায় কম্পিউটার অপারেটরসহ তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

ঝালকাঠি আজকাল