• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

মানুষ জিম্মি রেখে চলছে ইয়াবা কারবারি, বলছে পুলিশ

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৪ অক্টোবর ২০২১  

নগদ টাকার লেনদেন ছাড়াই কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসবে ইয়াবা। বিক্রির পর ঢাকার কারবারি কক্সবাজারের পাইকারি মহাজনকে পরিশোধ করবে বকেয়া টাকা। তবে এ সময়ের মধ্যে বন্ধক রাখতে হবে মানুষ। এমন অভিনব উপায়ে চলছে মরণনেশা ইয়াবার কারবার। একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ পেয়েছে এমন বিস্ময়কর তথ্য। গ্রেপ্তার করা হয়েছে মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা বেচাকেনা চক্রের চার সদস্যকে।

বেকারি থেকে বিস্কুট, কেকসহ অন্যান্য আইটেম পাইকারি কিনে তা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দোকানে দোকানে বিক্রি করেন হারুন অর রশিদ নামে এক ব্যক্তি। ২৬ সেপ্টেম্বর সাইফুল নামে এক ব্যক্তি ফোনে জানান তার ছেলে ফরহাদকে অপহরণ করা হয়েছে। জীবিত ফিরে পেতে সাড়ে তিন লাখ টাকার মুক্তিপণ দাবি করা হয় তার কাছে।

ফরহাদের বাবা জানান, আমার ছেলে আমাকে ফোনে বলে বাবা টাকা দেন, না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। বলে বন্ধু লাদেনের সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলাম কিন্তু সে আমাকে রেখে চলে গেছে একটা বাইক নিয়ে। এ জন্য তারা আমাকে আটকে রেখেছে। ওরা লাদেনের কাছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পাবে। এ জন্য আমাকে আটকে রেখেছে। ভিডিও কলে আমাকে ফরহাদের ওপর অত্যাচার করা দেখায় আর ৫০ হাজার টাকা চায়, পরে আমি তাদের অনেক অনুরোধ করি  তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এরপর ১০ হাজার টাকা দিয়ে ছেলেকে ছাড়িয়ে এনেছি।    

ফরহাদের দাবি তাকে অপহরণ নয় আটকে রাখা হয়েছিল। গত ২ সেপ্টেম্বর বন্ধু লাদেনের সঙ্গে কক্সবাজার গিয়েছিল সে। পরদিন তারা যায় টেকনাফে। সেখানে তাকে রেখেই ঢাকায় চলে আসে লাদেন। ২৫ দিন তাকে বন্দি করে রাখা হয় টেকনাফের গহীন এলাকায়। কিন্তু কেন?

ফরহাদ জানায়, আমি তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা বলত তোর জেনে লাভ নেই। লাদেনের কাছ থেকে টাকা পাব, সে জানে। পরে তাদের বলেছি,  আমাকে আটকে রেখেছেন কেন আমাকে ছেড়ে দেন তখন তারা আমাকে জানায় তোরে সে জিম্মি রেখে গেছে। 

ফরহাদের বাবার করা অপহরণ মামলা তদন্ত করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানী থেকে ৪ ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে ফরহাদকে আটকে রাখার নেপথ্যের কারণ। ফরহাদকে বন্দক রেখে লাদেন টেকনাফে থেকে বাকিতে ইয়াবা এনেছে। বকেয়া টাকা পরিশোধ করার পর তাকে ছাড়িয়ে আনার কথা ছিল। কিন্তু যথাসময়ে টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় অপহরণের কথা বলে মুক্তিপণ দাবি করে টেকনাফের কারবারিরা।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (তেজগাঁও বিভাগ) উপকমিশনার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, লাদেনের বক্তব্য হলো ২০ হাজার পিস ইয়াবা এনেছিল তাদের কাছ থেকে। কিন্তু ঢাকায় এসকে সফল হতে পারিনি সে। যার কারণে টাকা যেহেতু ফিরে দিতে সুযোগ হয়নি। এ কারণে যারা ইয়াবা সরবরাহকারী  তারা ভুক্তভোগী ফরহাদের বাবাকে ফোন দেয় টাকার জন্য। ফরহাদের বাবা মামলা করার পর আমরা অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করা হয়েছে।      

এদিকে কক্সবাজারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারাও সম্প্রতি মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা বেচাকেনার তথ্য পেয়েছে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, মাদকের টাকা পরিশোধ হয়নি, কৌশলে ডেকে নিয়ে আটকে রেখেছে এমন কেস আমরা কয়েকটি পেয়েছি। সমঝোতার ভিত্তিতে মানুষ বন্ধক রেখে ইয়াবা কারবারের বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত করে দেখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

 

ঝালকাঠি আজকাল