• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

ঝালকাঠি আজকাল

মিয়ানমার থেকে আসা ৩২৯ জন কারা, পরিচয় জেনে নিতে হবে পদক্ষেপ

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

মিয়ানমারের বিদ্রোহী দল আরাকান আর্মির সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্যে এ পর্যন্ত দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩২৯ জন সদস্য পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে সেদেশের সেনাবাহিনী, সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), পুলিশ, ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা রয়েছেন। পাশাপাশি ছদ্মবেশে দেশটির কয়েকজন গোয়েন্দাও রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের লক্ষ্য ছিলো বাংলাদেশে গুপ্তচরবৃত্তি করা। এরই মধ্যে মিয়ানমার তাদের ফিরিয়ে নিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তবে আশ্রিত সবার পরিচয় নিশ্চিত হয়েই বাংলাদেশকে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরা আসলেই সবাই মিয়ারমারের বিজিপির সদস্য কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় যে ২৩ জনকে অস্ত্রসহ গ্রামবাসী আটক করে পুলিশে দিয়েছে তাদের মধ্যে ১৭ জনই উখিয়ার একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাদের কাছে আইডি কার্ডও পাওয়া গেছে। তারা কীভাবে ক্যাম্প থেকে ওপারে গেল সেগুলোও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা গণমাধ্যমকে বলেন, শুধু যুদ্ধ পরিস্থিতি নয়, যে কোনো পরিস্থিতিতে কোনো বিদেশি নাগরিক দেশের মধ্যে ঢুকে পড়লে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া জরুরি। এটা বিশ্বব্যাপী প্র্যাকটিস। আর মিয়ানমারে যেহেতু সংঘাত চলছে, ফলে সেখান থেকে কারা এসেছে সেটা অবশ্যই নিশ্চিত করে ফেরত পাঠাতে হবে।

‘এরা কী আসলেই বিজিপি সদস্য, নাকি কোনো বিদ্রোহী গ্রুপের সদস্য সেটাও দেখতে হবে। সবকিছু নিশ্চিত হয়েই তাদের ফেরত দিতে হবে। এটা একটা সাধারণ নিয়ম।’

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমার তাড়াহুড়ো করলেও আমাদের তাড়াহুড়ো করা যাবে না। তারা কী আদৌ বর্ডার গার্ডের সদস্য কি না, এটা নিশ্চিত হতে হবে। আবার এদের মধ্যে কেউ গুপ্তচরও থাকতে পারে। এগুলো বাংলাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যই প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এদের মধ্যে এমন কেউ ঢুকে পড়তে পারে, যারা বাংলাদেশে ঢুকে নানা ধরনের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য নিয়ে বিদেশে অপপ্রচার করতে পারে। কেউ কোনো সন্ত্রাসী দলের সদস্য হলে সেটা আমাদের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের প্রশ্ন হতে পারে।

তারা বলছেন, আশ্রিতদের মধ্যে কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন বা যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত কি না, সেটাও নিশ্চিত হতে হবে। তা না হলে তিনি ফিরে গিয়ে একই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারেন।

এদিকে দুই দিন আগে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় যে ২৩ জনকে অস্ত্রসহ আটকের পর এলাকাবাসী পুলিশে দিয়েছে। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে ও জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এদের ১৭ জন উখিয়ার একটি ক্যাম্পের বাসিন্দা। তাদের কাছে ক্যাম্পের পরিচয়পত্রও (এফসিএন কার্ড) রয়েছে। অন্য ছয় জনের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা কীভাবে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে মিয়ানমারে গেল সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। তারা কী কোনো পক্ষের হয়ে যুদ্ধে গিয়েছিল কি না, কিংবা কী কারণে গেলেন সেটাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার ২৩ জনকে আটকের পর গত শুক্রবার দুপুরে বালুখালি বিওপির নায়ক সুবেদার শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে আটক অস্ত্র ও অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। গ্রেফতার এই রোহিঙ্গা যুবকদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১২টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৮৬৮ রাউন্ড গুলি, পিস্তলের ২৪টি খালি খোসাসহ রাইফেল গ্রেনেড ফিউজ পাঁচ রাউন্ড, এসএমজির ম্যাগাজিন ছয়টি, এলএমজির ম্যাগাজিন চারটি, জি-৩ রাইফেলের ম্যাগাজিন একটি ও পিস্তলের ম্যাগাজিন দুইটি। এই অস্ত্রগুলো তারা কোথায় পেয়েছে সেটাও অনুসন্ধান চলছে।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ শামীম হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, শনিবার ঐ ২৩ জনকে আমরা আদালতে পাঠিয়ে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছি। আদালতে এখনো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে। তাদের রিমান্ড হলে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করব।

মিয়ানমারের নাফ নদীর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে বাংলাদেশের শীর্ষ ইয়াবার ব্যবসা করেন নবী হোসেন। নাফ নদীর তীর ঘেঁষে তার শতাধিক চিংড়ি ঘের রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে ইয়াবার কারখানাও। চিংড়ি ঘের ব্যবসার নামে সে বাংলাদেশে ইয়াবার চালান পাঠায় নাফ নদী দিয়ে। অবৈধ অস্ত্রও পাঠায়— এমন অভিযোগও রয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণে তার রয়েছে বিশাল সশস্ত্র বাহিনী।

খোঁজ নিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবী হোসেন এখনো রাখাইনেই আছে। তার যে ক্যাডার বাহিনী ছিল, তারাও রাখাইনেই আছে। কেউ এখনো বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেনি। তবে নবী হোসেন ভোল পাল্টে এখন সেখানে বহাল তবিয়তেই রয়েছেন। পাশাপাশি ইয়াবার ব্যবসাও চলছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্ক পাহাড়া দিলেও এর মধ্য দিয়েও ইয়াবা আসছে। ইয়াবার চালান পাঠাচ্ছেন সেই নবী হোসেন। এমন তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ এলাকার একাধিক বাসিন্দা। এই নবী হোসেন বিরুদ্ধে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়া থানায় হত্যাসহ এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে।

বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তালিকায় মাদকের গডফাদার হিসেবে নবী হোসেনের নাম রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মাদকের বেশ কিছুসংখ্যক মামলা রয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা জানান। তার ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় আছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

ঝালকাঠি আজকাল