• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল

২ টাকার মুজিব কয়েন দিলেই মিলছে সুপেয় পানি

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০২৩  

পানিতে লবণের তীব্রতার কারণে খুলনার পাইকগাছায় সব সময় সুপেয় পানির তীব্র সংকট থাকে। টিউবওয়েল, পুকুর থেকে শুরু করে সব জায়গার পানি লবণাক্ত ও আর্সেনিক যুক্ত। মিঠা পানির উৎস নেই বললেই চলে। সুপেয় পানির অভাবে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাতে হয় এ অঞ্চলের মানুষকে।

বিশেষ করে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এই ভোগান্তি নিরসনে ব্যতিক্রমী এক এটিএম বুথ স্থাপন করেছে পাইকগাছার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এটিএমে কয়েন প্রবেশ করালেই বের হয় সুপেয় পানি। তবে যেকোনও কয়েন প্রযোজ্য নয়, হতে হবে দুই টাকার মুজিব কয়েন। একটি দুই টাকার মুজিব কয়েন এটিএম বুথে প্রবেশ করালে বের হয়ে আসবে দুই লিটার সুপেয় পানি।

আগে পাইকগাছা উপজেলার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগী ও স্বজনদের জন্য কোনও সুপেয় পানির ব্যবস্থা ছিল না। পানির এই অসহনীয় কষ্ট দূর করতে অভিনব এ ওয়াটার এটিএমটি স্থাপন করে স্থানীয় ‘কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটি’। সহযোগিতায় ছিল বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারএইড, নবলোক, এইচএসবিসি ওয়াটার প্রোগ্রাম ও স্থানীয় পৌরসভা।

২ টাকার মুজিব কয়েন দিলেই মিলছে সুপেয় পানি

২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর প্রকল্পটি চালু হয়। সেই থেকে হাসপাতালে আসা রোগী ও তাদের স্বজনদের পানের পানির কষ্ট লাগব হয়। অল্প টাকা খরচে সহজেই মিলছে ফিল্টারিং নিরাপদ পানি।

৫০ শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালটির দায়িত্বে থাকা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীতিশ গোলকার বলেন, পাইকগাছাজুড়েই নিরাপদ পানি সংকট। আর্সেনিকযুক্ত লবণাক্ত পানির ব্যবহারের কারণে প্রতিনিয়ত এখানে অসংখ্য পানি বাহিত রোগী আসে। তারা এখানে এসেও আগে অনিরাপদ পানি পান করতো। টিউবওয়েলের পানি ছিল লোনা ও আর্সেনিক যুক্ত। এ প্রকল্পের কারণে হাসপাতালে আসা রোগী ও স্বজনরা এখন শতভাগ নিরাপদ পানি পাচ্ছে।

তিনি জানান, বেশ কিছুদিন পৌরসভা থেকে সুপেয় পানি আনা হলেও সেই পানির বিল সংশ্লিষ্ট দফতরকে পাঠানো হলে সেখান থেকে বিল পাস হয়ে আসেনি। তৈরি হয় জটিলতা। অবশেষে স্থানীয়রা ও কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা উদ্যোগ নেওয়ার পর পানির সংকট মিটছে।

নীতিশ গোলকার আরও বলেন, উপকূলের এ হাসপাতালগুলোর প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এই উপজেলায় খাবার পানির তীব্র সংকট। এটা মাথায় রেখে সংশ্লিষ্টরা আলাদা পরিকল্পনা নিতে পারে। পাইকগাছার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ প্রকল্পকে মডেল ধরেও পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।

হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসা রাবেয়া বেগম নামে একজন বলেন, ‘আগে হাসপাতালে এলে খাওয়ার পানি কিনতে বাইরে যেতে হতো। এখন আর বাইরে যাওয়া লাগে না। হাসপাতালের ভেতরেই পানির সুব্যবস্থা আছে। দুই টাকায় দুই লিটার পানি পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, পাইকগাছার বাজারে বোতলজাত যেসব পানি পাওয়া যায়, সেসব পানি থেকে এখানকার ওয়াটার এটিএমের পানি খেতে ভালো ও পরিষ্কারও।

২ টাকার মুজিব কয়েন দিলেই মিলছে সুপেয় পানি

কমিউনিটি সাপোর্ট কমিটির সভাপতি ও পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, পাইকগাছায় অনেক আগ থেকেই সুপেয় পানির সংকট তীব্র। এখানে টিউবওয়েল ও পুকুর সব জায়গার পানি লবণাক্ত। মিঠা পানির উৎস খুব কম। পানি নিয়ে নিদারুণ কষ্ট করছে এ অঞ্চলের মানুষ। হাসপাতালে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনরা সুপেয় পানির অভাবে কষ্ট করে। সেই কষ্ট লাঘবে কয়েকটি পক্ষের যৌথ উদ্যোগে এ প্রকল্প। এটির মাধ্যমে মৌসুমের বৃষ্টির পানিকে সংগ্রহ করে ফিল্টারিং করে মানুষের পানের উপযোগী করা হচ্ছে। ফলে সর্বসাধারণ উপকৃত হচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা ওয়াটারএইডের প্রোগ্রাম অফিসার (ইঞ্জিনিয়ারিং) ইয়াসিন অরাফাত বলেন, হাসপাতাল ভবনের ছাদ থেকে বৃষ্টির মৌসুমে পানি সংগ্রহ করে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ফিল্টারিং করে তা নির্দিষ্ট ট্যাংকে রাখা হয়। এরপর সেই ট্যাংক থেকে যায় ওয়াটার এটিএমে, সেখান থেকেই মানুষ পানি সংগ্রহ করেন।

তিনি বলেন, এখানে ১০ হাজার লিটারের তিনটি ট্যাংক ও তিন হাজার লিটারের তিনটি ট্যাংকে ৩৯ হাজার লিটার পানি সংগ্রহ করা যায়। বৃষ্টির এ পানি অন্য যেকোনও পানি থেকে গুণেমানে ভালো। কয়েক ধাপে ফিল্টারিং করে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে পানিগুলোকে পানের উপযোগী করা হয়।

ঝালকাঠি আজকাল