• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

ঝালকাঠি আজকাল
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ

পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের মিশনে মাহফুজ আনামও: প্রধানমন্ত্রী

ঝালকাঠি আজকাল

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২  

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধে গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহম্মদ ইউনূসের পাশাপাশি ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনামের চেষ্টা ছিল বলেও অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক যুগ ধরে আলোচনায় থাকা সেতুটি যখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়, সে সময় সরকারপ্রধান তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনায় প্রসঙ্গটি তোলেন।

তার অভিযোগ, ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ ছাড়তে হলে প্রতিহিংসা থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের উদ্যোগ নেয়া হয়। মাহফুজ আনামও সক্রিয়ভাবে এতে যোগ দেন। তারা সশরীরে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সে সময়ে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনকে ইমেইল করেন। আর হিলারি বিশ্বব্যাংকের সে সময়ের প্রেসিডেন্টকে দিয়ে সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করেন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে ছয় বছরের প্রবাস জীবন শেষে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। সেই দিবসের স্মরণে বুধবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। সেখানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা।

আগামী মাসে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এরই মধ্যে সেতু পারাপারে কোন যানবাহনের টোল কত হবে, সেটি জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার শুরু থেকেই তুমুল আলোচনা হচ্ছে। প্রথমে সেতুর অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশ যোগাযোগ করে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে। পাশাপাশি আইডিবি, এডিবি ও জাইকারও কিছু সহযোগিতা থাকার কথা ছিল।

তবে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক নানা বক্তব্য দেয়ার পর ২০১৩ সালে এই সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।

শুরু থেকেই সরকার এই অভিযোগকে ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়ে আসছিল। দাতারা সেতু থেকে সরে যাওয়ার পর অভিযোগ করা হয়, সংস্থাটির এই সিদ্ধান্তের পেছনে ড. ইউনূসের হাত আছে।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পদ ছাড়তে বলা হয় তার বয়স ৬০ অতিক্রম করায়। তবে তিনি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালান। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন ফোন করে ইউনূসের পক্ষে সুপারিশ করেন বলে সরকারি দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

সরকারের অভিযোগ, সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়ে তদবির করিয়ে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করানো হয়। এবার সরকারপ্রধান জানালেন, সেই প্রচেষ্টায় মাহফুজ আনামেরও ভূমিকা ছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করাল ড. ইউনূস। কেন? গ্রামীণ ব্যাংকের একটা এমডির পদে তাকে থাকতে হবে। তাকে আমরা প্রস্তাব দিয়েছিলাম, গ্রামীণ ব্যাংকের উপদেষ্টা হতে, ইমেরিটাস উপদেষ্টা হিসেবে থাকার জন্য, আরও উচ্চ মানের। কিন্তু সেখানে সে থাকবে না। তার এমডিই থাকতে হবে। কিন্তু তার বয়সে কুলায় না।

‘ড. ইউনূস কিন্তু আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিল। কিন্তু কোর্ট আর যাই পারুক, তার বয়স তো কমিয়ে দিতে পারবে না ১০ বছর। কারণ গ্রামীণ ব্যাংকের আইনে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। তখন তার বয়স ৭১ বছর। বয়সটা কমাবে কীভাবে। মামলায় সে হেরে যায়।

‘কিন্তু প্রতিহিংসা নেয় ড. ইউনূস এবং যেটা আমরা শুনেছি মাহফুজ আনাম। তারা আমেরিকায় চলে যায়, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যায়। হিলারির কাছে ইমেইল পাঠায়। বিশ্বব্যাংকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মিস্টার জোয়েলিক তার শেষ কর্মদিবসে কোনো বোর্ডসভায় না, পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দেয়।’

প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ নিয়ে মাহফুজ আনামের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না’।

সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে তার সঙ্গে কথোপকথনের সময়ও তিনি এ বিষয়ে কিছু শোনেননি বা তাকে কেউ এ বিষয়ে জানায়নি বলে উল্লেখ করেন ডেইলি স্টার সম্পাদক।

বিশ্বব্যাংক সে সময় বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করার দাবি করেছিল। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন তা করতে রাজি হয়নি।

বিশ্বব্যাংক এ ঘটনায় একটি মামলা করে কানাডার একটি আদালতে। সেই মামলা বাংলাদেশের জন্য শাপেবর হয়েছে।

বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষার আদেশ কানাডা থেকে আসার পর আর কেউ প্রশ্ন তোলার সুযোগই পায়নি।

রায়টি দেয়া হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তবে গণমাধ্যমে রায় প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা ছিল এক মাস। আর ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বিষয়টি নিয়ে জানাজানি হয়।

রায়ে অন্টারিও সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ইয়ান নরডেইমার বলেন, বিশ্বব্যাংক যেসব তথ্য দিয়েছে সেগুলো ‘অনুমানভিত্তিক, গালগল্প ও গুজবের বেশি কিছু নয়।’

প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়ার এই সিদ্ধান্তে একেবারে অখুশি নন। তিনি বলেন, ‘একদিকে এটি শাপেবর হয়েছে। বাংলাদেশ যে নিজের অর্থায়নে পদ্মা সেতু করতে পারে, সেটা আজকে আমরা প্রমাণ করেছি।’

‘তাদের চোবানো উচিত’

আওয়ামী লীগ জোড়াতালি দিয়ে করা পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে কেউ উঠতে যাবেন না। উঠলে সেটি ভেঙে পড়বে- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার এমন একটি বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘বলেছে, স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, সেটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেয়া। পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, তাতে চড়া যাবে না, চড়লে সেটা ভেঙে যাবে। তার সঙ্গে তার কিছু দোসররা। তাদের কী করা উচিত? পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দেয়া উচিত।

‘যিনি (ড. ইউনূস) এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুটি চুবনি দিয়ে উঠিয়ে নেয়া উচিত, মরে যাতে না যায়। পদ্মা নদীতে দুটি চুবনি দিয়ে সেতুতে উঠিয়া নেয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’

পদ্মা রেল প্রকল্প ও রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিরোধের জবাব

পদ্মা রেলসেতু প্রকল্প এবং রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে না বলে একজন অর্থনীতিবিদের বিশ্লেষণ নিয়েও কথা বলে তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তিনি সেই অর্থনীতিবিদের নাম উল্লেখ করেননি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে যে রেললাইন হচ্ছে, ৪০ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে করা হচ্ছে। সেই ঋণ শোধ হবে কী করে- দক্ষিণবঙ্গের কোনো মানুষ তো রেলে চলবে না। তারা তো লঞ্চে যাতায়াত করে। তারা রেলে চড়তে যাবে কেন। এই রেল ভায়াবল হবে না।

‘সেতুর কাজ হয়ে গেছে। সেতু নিয়ে কথা বলে আর পারছে না। এখন রেলের কাজ চলছে। রেলের কাজ নিয়ে তারা প্রশ্ন তুলছে।

‘আমার মনে হয় সকলে ওনাকে চিনে রাখা উচিত। রেলগাড়ি যখন চালু হবে, ওনাকে রেলে চড়ানো উচিত।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বড় বড় অর্থনীতিবিদ, জ্ঞানীগুণী এই ধরনের অর্বাচীনের মতো কথা বলে কীভাবে, সেটাই আমার প্রশ্ন।

‘মেগা প্রজেক্টগুলো করে নাকি খুব ভুল করছি। তারা আয়েশে বসে থাকে আর আমার তৈরি করা... টেলিভিশনে গিয়ে কথা বলে, বিদ্যুৎ সরবরাহ করি, সেই বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে, আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড লাইন চলে গেছে, স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। সেটা নিয়েও তো, এত টাকা দিয়ে স্যাটেলাইট করে কী হবে। এ প্রশ্নও কিন্তু তুলেছে তারা। অর্থাৎ বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু করলেই তাদের গায়ে লাগে। কেন?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গালিটালি দিই না, ইচ্ছাও নাই, দেয়ার রুচিও নাই। কিন্তু একটু না বলেও পারি না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যেভাবে বাংলাদেশের মেয়েদের ওপর নির্যাতন করেছে, গণহত্যা চালিয়েছে, অগ্নিসংযোগ করেছে, পোড়ামাটি নীতি নিয়ে বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, সেই পাকিস্তানিদের পদলেহনকারী সারমেয়র দল এখনও বাংলাদেশে জীবিত, এটা হচ্ছে দুঃখজনক।’

রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জন্য লাভজনক হবে না বলে একজন অর্থনীতিবিদ মূল্যায়ন করেছেন জানিয়ে তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে যে অর্থনীতিবিদ একটি হিসাব দেখালেন, তিনি কী জেনে বলেছেন, না জেনে বলেছেন? আমি তার জ্ঞান নিয়ে কোনো প্রশ্ন তুলব না, কারণ তিনি অনেক ভালো লেখাপড়া জানেন।

‘কিন্তু বিদ্যুৎ পেয়ে একটি জাতির যে কত উন্নতি হতে পারে, সেটা আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়নটা বাইরের লোকও দেখে, কিন্তু তারা দেখে না চোখে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সব থেকে পরিবেশবান্ধব। তেলভিত্তিক, গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ব্যয়বহুল। যদি কোনোদিন গ্যাস শেষ হয়, তাহলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রই বিদ্যুৎ দেবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগ একটু বেশি হলেও যখন এর ব্যবহার হবে, তখন অর্থনীতিতে অনেক বড় অবদান রাখবে।’

দেশে ফেরার স্মৃতিচারণ

বঙ্গবন্ধুকন্যা ১৯৮১ সালের ১৭ মে তার দেশে ফেরার দিনটি কেমন ছিল, সেটি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘যখন আমি বিমানবন্দরে অবতরণ করি, তখন আমি আমার নিকটাত্মীয়দের কাউকে পাইনি। কিন্তু লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। এটাই আমার একমাত্র শক্তি এবং আমি এই শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।’

ঝালকাঠি আজকাল